শিশু রঞ্জন এবং অজিত ঝা: সম্প্রতি, জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের (এনসিআর) অন্তর্গত গুরগাঁওয়ে একটি ফ্ল্যাট ১৯০ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। এটি ভারতের উচ্চতম মূল্যের অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হিসেবে রেকর্ড করেছে, যার প্রতি বর্গফুট কার্পেট এলাকার মূল্য ছিল ১.৮২ লক্ষ টাকা।
২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে উচ্চমূল্যের সম্পত্তির বিক্রি ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ভারতের প্রিমিয়াম সম্পত্তির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে, এবং ২০২৫ সালে বাড়ির দাম আরও ৬.৫% বাড়বে।
উচ্চমূল্যের সম্পত্তির চাহিদা
ভারতের মেট্রোপলিটন শহরগুলিতে, বিশেষত দিল্লি-এনসিআর, মুম্বাই, পুনে, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, এবং কলকাতায় উচ্চমূল্যের সম্পত্তির চাহিদা কেন্দ্রীভূত।
এই শহরগুলি ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ায়, সেখানে কর্মরত জনগণের আয় বাড়ার সাথে সাথে সম্পত্তির চাহিদাও বেড়েছে।
এছাড়া, ভারতীয়রা উন্নত জীবনযাপনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। তারা বড় শহরগুলিতে আরও ভালো নিরাপত্তা, বাচ্চাদের খেলার মাঠ, এবং বয়স্কদের জন্য পার্কসহ মানানসই বাড়ি খুঁজছে।
রিয়েল এস্টেট অ্যাডভাইজরি ফার্ম গ্লোবাল কমার্শিয়াল রিয়েল এস্টেট সার্ভিসেসের মতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর সময়কালে উচ্চমূল্যের সম্পত্তির বিক্রিতে ৩৭.৮% বার্ষিক বৃদ্ধির হার দেখা গেছে।
দিল্লি-এনসিআর, মুম্বাই, পুনে, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই এবং কলকাতায় তৃতীয় ত্রৈমাসিকে গড় হাউজিং মূল্যে বার্ষিক ১১% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে বেঙ্গালুরু ২৪% বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে।
মুম্বাইয়ে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি বিক্রি
মুম্বাই মেট্রোপলিটান অঞ্চলে ২০২৪ সালে প্রায় ১.৫ লাখ ইউনিট সম্পত্তি বিক্রি হয়েছে। ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাংকের তৈরি হাউজিং প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সম্পত্তি বিক্রি ২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৪.৬% বেশি ছিল।
নগরায়ন ও আয় বৃদ্ধির প্রভাব
ভারতে নগর জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কর্মসংস্থানের সন্ধানে শহরমুখী মানুষের ঢল বাড়ি কেনার চাহিদা বাড়িয়েছে। একইসাথে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হয়েছে।
এছাড়া, সম্পত্তির মূল্যবৃদ্ধি নির্মাতাদের আরও উন্নত মানের বাড়ি এবং অবকাঠামো নির্মাণে উৎসাহিত করেছে, যা শহরের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।
ব্যাংকের সহজ ঋণ
রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কম সুদের হার বজায় রেখেছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উদ্দীপিত করতে সহায়ক হয়েছে। কম বন্ধকী সুদের হার বাড়ি কেনার খরচ কমিয়েছে এবং আবাসনের চাহিদা বাড়িয়েছে।
এছাড়া, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি হোম লোন আরও সহজলভ্য করেছে, যা আবাসিক সম্পত্তির চাহিদা বাড়াতে সাহায্য করেছে।
নিয়মকানুন এবং নীতির ভূমিকা
রিয়েল এস্টেট (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ২০১৬ -এর মতো উদ্যোগগুলি স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং ক্রেতাদের সুরক্ষিত করার মাধ্যমে বাজারে আরও আস্থা এনেছে।
কর্মসংস্থানে অবদান
সম্পত্তির মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তা কার্যকলাপ বাড়িয়ে তোলে, যা নির্মাণ এবং সংশ্লিষ্ট খাতে কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ বাড়ায়।
ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৭.৩% অবদানকারী রিয়েল এস্টেট খাত জাতীয় কর্মসংস্থানের ১৮% অংশীদার। ২০২৩ সালে রিয়েল এস্টেট খাতে ৭১ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত ছিলেন, যা ২০১৩ সালের ৪০ মিলিয়ন থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপসংহার
ভারতে ধনী মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। নাইট ফ্রাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে অতিসম্পদশালী ব্যক্তিদের সংখ্যা ৪% বেড়েছে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে এটি ৫৮% বৃদ্ধি পাবে।
এই প্রবণতা প্রিমিয়াম বাণিজ্যিক ও আবাসিক সম্পত্তির চাহিদা বাড়িয়েছে। উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং টেকসই ডিজাইনের চাহিদা মেটাতে নির্মাতারা তাদের প্রকল্পের দাম বাড়িয়েছেন। পাশাপাশি, প্রবাসী ভারতীয়দের বিনিয়োগও সম্পত্তির মূল্যবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
লেখক: শিশু রঞ্জন, বার্কলেস ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং অজিত ঝা, নয়াদিল্লিস্থ আইএসআইডি’র সহকারী অধ্যাপক। উল্লিখিত মতামত তাঁদের ব্যক্তিগত। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক