০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অভিযোজনের শীর্ষে ভারত: গবেষণা

  • আপডেট: ০৪:১০:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 15

ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিং এবং স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল লেবার মার্কেট কনফারেন্স (জিএলএমসি)। গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ভারতীয় পেশাজীবীদের ৭০ শতাংশেরও বেশি নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছেন।

প্রযুক্তিগত অভিযোজন

“নেভিগেটিং টুমরো: ডায়নামিক গ্লোবাল লেবার মার্কেটে দক্ষতার আয়ত্ত” শীর্ষক প্রতিবেদনটি দেখিয়েছে, ভারতীয় কর্মীরা প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে নতুন দক্ষতা অর্জনে বিশেষভাবে এগিয়ে। যেখানে বিশ্বজুড়ে কর্মীদের ৫৫ শতাংশ আগামী পাঁচ বছরে নিজেদের দক্ষতা আংশিক বা পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেখানে ভারতীয় কর্মীদের এই সংখ্যা আরও বেশি।

ব্রাজিলে এই হার ৬১ শতাংশ এবং চীনে ৬০ শতাংশ হলেও উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৪৪ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ায় ৪৩ শতাংশ।

জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষতা অর্জনের চালক

গবেষণায় একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারতের ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরে তারা পুনঃদক্ষতা অর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।

চীন (৪১%) এবং ভিয়েতনাম (৩৬%) এই প্রবণতায় ভারতকে ছাড়িয়ে গেলেও যুক্তরাজ্য (১৪%) এবং যুক্তরাষ্ট্রে (১৮%) এই প্রভাব তুলনামূলক কম।

তবে ভারতীয় কর্মীরা দক্ষতা উন্নয়নে সময়ের অভাব (৪০%) এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা (৩৮%) সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটি ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের সাথে মিলে যায়, যেখানে নরওয়ে ও যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশগুলোতে এই প্রতিবন্ধকতা তুলনামূলক কম।

এই অসামঞ্জস্য দূর করতে এবং দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ আরও বাড়াতে লক্ষ্যযুক্ত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এই বাধাগুলো কাটিয়ে উঠলে ভারত গ্লোবাল সাউথে প্রযুক্তিগত রূপান্তরের নেতৃত্ব আরও সুসংহত করতে পারবে।

শিক্ষাব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ

গবেষণায় উঠে এসেছে, শিক্ষাব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান দক্ষতার চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। ভারতের ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা বর্তমানে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে চীনে এই হার ৩৬ শতাংশ। যুব প্রজন্ম (১৮-৩৪ বছর বয়সী) এবং উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা (স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী) শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আরও তীব্রভাবে অনুভব করছেন।

সরকারের প্রতি আস্থা

ভারতীয় উত্তরদাতারা দক্ষতা উন্নয়নে সরকারের প্রতি বেশি আস্থা প্রকাশ করেছেন। ৩১ শতাংশ উত্তরদাতা সরকারের উদ্যোগের উপর আস্থা রেখেছেন, যা বিশ্ব গড় ২০ শতাংশ থেকে অনেক বেশি। সৌদি আরব (৩৫%) সরকারের প্রতি অনুরূপ আস্থা দেখিয়েছে।

ডিজিটাল রূপান্তরে ভারতের নেতৃত্ব

ভারতের ডিজিটাল রূপান্তরের সক্রিয় অবস্থান অন্যান্য দেশগুলোর জন্য মানদণ্ড স্থাপন করেছে। ইউনাইটেড নেশনের গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট (জিডিসি)-এর মতো বৈশ্বিক উদ্যোগে ভারতের ভূমিকা তার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। ডিজিটাল পেমেন্ট (ইউপিআই), পরিচয় অবকাঠামো (আধার), এবং প্রযুক্তি-নির্ভর শাসনব্যবস্থায় ভারতের সাফল্য গর্বের বিষয়।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ

ডিজিটাল রূপান্তরে ভারতের অগ্রগতি প্রশংসনীয় হলেও সাইবার নিরাপত্তা হুমকি, ভুল তথ্য ছড়ানো এবং ডিজিটাল অবকাঠামোর পরিবেশগত প্রভাব এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে দক্ষতা উন্নয়নে সময় ও আর্থিক বাধা কাটাতে এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে শিল্পের চাহিদার সাথে মানানসই করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ভারত “সবার জন্য এআই” নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজ করছে। এটি শুধু নিজস্ব পথ নয়, গ্লোবাল সাউথের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে কাজ করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক। 

ট্যাগ:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অভিযোজনের শীর্ষে ভারত: গবেষণা

প্রকাশ: ০৪:১০:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিং এবং স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল লেবার মার্কেট কনফারেন্স (জিএলএমসি)। গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ভারতীয় পেশাজীবীদের ৭০ শতাংশেরও বেশি নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছেন।

প্রযুক্তিগত অভিযোজন

“নেভিগেটিং টুমরো: ডায়নামিক গ্লোবাল লেবার মার্কেটে দক্ষতার আয়ত্ত” শীর্ষক প্রতিবেদনটি দেখিয়েছে, ভারতীয় কর্মীরা প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে নতুন দক্ষতা অর্জনে বিশেষভাবে এগিয়ে। যেখানে বিশ্বজুড়ে কর্মীদের ৫৫ শতাংশ আগামী পাঁচ বছরে নিজেদের দক্ষতা আংশিক বা পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেখানে ভারতীয় কর্মীদের এই সংখ্যা আরও বেশি।

ব্রাজিলে এই হার ৬১ শতাংশ এবং চীনে ৬০ শতাংশ হলেও উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৪৪ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ায় ৪৩ শতাংশ।

জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষতা অর্জনের চালক

গবেষণায় একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারতের ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরে তারা পুনঃদক্ষতা অর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।

চীন (৪১%) এবং ভিয়েতনাম (৩৬%) এই প্রবণতায় ভারতকে ছাড়িয়ে গেলেও যুক্তরাজ্য (১৪%) এবং যুক্তরাষ্ট্রে (১৮%) এই প্রভাব তুলনামূলক কম।

তবে ভারতীয় কর্মীরা দক্ষতা উন্নয়নে সময়ের অভাব (৪০%) এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা (৩৮%) সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটি ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের সাথে মিলে যায়, যেখানে নরওয়ে ও যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশগুলোতে এই প্রতিবন্ধকতা তুলনামূলক কম।

এই অসামঞ্জস্য দূর করতে এবং দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ আরও বাড়াতে লক্ষ্যযুক্ত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এই বাধাগুলো কাটিয়ে উঠলে ভারত গ্লোবাল সাউথে প্রযুক্তিগত রূপান্তরের নেতৃত্ব আরও সুসংহত করতে পারবে।

শিক্ষাব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ

গবেষণায় উঠে এসেছে, শিক্ষাব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান দক্ষতার চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। ভারতের ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা বর্তমানে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে চীনে এই হার ৩৬ শতাংশ। যুব প্রজন্ম (১৮-৩৪ বছর বয়সী) এবং উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা (স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী) শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আরও তীব্রভাবে অনুভব করছেন।

সরকারের প্রতি আস্থা

ভারতীয় উত্তরদাতারা দক্ষতা উন্নয়নে সরকারের প্রতি বেশি আস্থা প্রকাশ করেছেন। ৩১ শতাংশ উত্তরদাতা সরকারের উদ্যোগের উপর আস্থা রেখেছেন, যা বিশ্ব গড় ২০ শতাংশ থেকে অনেক বেশি। সৌদি আরব (৩৫%) সরকারের প্রতি অনুরূপ আস্থা দেখিয়েছে।

ডিজিটাল রূপান্তরে ভারতের নেতৃত্ব

ভারতের ডিজিটাল রূপান্তরের সক্রিয় অবস্থান অন্যান্য দেশগুলোর জন্য মানদণ্ড স্থাপন করেছে। ইউনাইটেড নেশনের গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট (জিডিসি)-এর মতো বৈশ্বিক উদ্যোগে ভারতের ভূমিকা তার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। ডিজিটাল পেমেন্ট (ইউপিআই), পরিচয় অবকাঠামো (আধার), এবং প্রযুক্তি-নির্ভর শাসনব্যবস্থায় ভারতের সাফল্য গর্বের বিষয়।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ

ডিজিটাল রূপান্তরে ভারতের অগ্রগতি প্রশংসনীয় হলেও সাইবার নিরাপত্তা হুমকি, ভুল তথ্য ছড়ানো এবং ডিজিটাল অবকাঠামোর পরিবেশগত প্রভাব এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে দক্ষতা উন্নয়নে সময় ও আর্থিক বাধা কাটাতে এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে শিল্পের চাহিদার সাথে মানানসই করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ভারত “সবার জন্য এআই” নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজ করছে। এটি শুধু নিজস্ব পথ নয়, গ্লোবাল সাউথের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে কাজ করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।