০৫:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত-মরিশাসের মধ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচির আলোচনা

  • আপডেট: ১২:৪৬:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 16

ভারত এবং মরিশাস শাসন ব্যবস্থায় সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচি নিয়ে একটি সফল আলোচনা সম্পন্ন করেছে, যার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। ২৩ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত তিন দিন ধরে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা ইতিবাচকভাবে শেষ হয়েছে, যেখানে উভয় দেশ মরিশাসের সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

মরিশাসের সরকারি সেবার সচিব কনহিয়ে-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ভারতের জাতীয় সুশাসন কেন্দ্র (এনসিজিজি), যা ভারতের প্রশাসনিক সংস্কার ও জনঅভিযোগ বিভাগের (ডিএআরপিজি) অধীনে কাজ করে, সেখানে আলোচনা করতে এসেছিল। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডিএআরপিজি-এর সচিব এবং এনসিজিজি-এর মহাপরিচালক ভি শ্রীনিবাস, যিনি ভবিষ্যতের সহযোগিতার রোডম্যাপ নিয়ে মূল আলোচনা পরিচালনা করেন।

তিন দিনের এই সরকারি সফরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে শেষ হয়, যেখানে উভয় পক্ষই সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে স্পষ্ট একটি রোডম্যাপ তৈরিতে একমত হয়। ব্রিফিং বৈঠকে, মরিশাসের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ভবিষ্যতের সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচির বিশদ আলোচনা করা হয়। এই সফরটি একটি খসড়া সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) বিনিময়ের মাধ্যমে শেষ হয়, যা মরিশাসের পাবলিক সার্ভিস, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার মন্ত্রণালয় এবং ভারতের এনসিজিজি-এর মধ্যে সম্পাদিত হয়।

এই সমঝোতা স্মারক ভবিষ্যতে দুই দেশের সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে, যা নিশ্চিত করবে যে মরিশাসের সরকারি কর্মকর্তারা ভারতের শাসন এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারবেন। কর্মসূচিগুলি শীঘ্রই শুরু হবে এবং বিশেষ করে সিনিয়র এবং মধ্য-স্তরের কর্মকর্তাদের উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে, যারা নীতি বাস্তবায়ন এবং জনসেবা প্রদানে মূল ভূমিকা পালন করেন।

ভারত এবং মরিশাসের মধ্যে শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক এবং উন্নয়নমূলক সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, বিশেষ করে প্রশাসনিক সংস্কার এবং সরকারি সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। এই সফরটি সেই ভিত্তির উপর আরও নির্মাণের অংশ হিসেবে হয়েছে, যেখানে মরিশাসের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচি এবং ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগ।

মরিশাসের কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষায়িত কর্মসূচি

এই সফরের সময়, উভয় পক্ষই এনসিজিজি এবং মরিশাসের পাবলিক সার্ভিস, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সহযোগিতার পথগুলি নিয়ে আলোচনা করেন।

এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল মরিশাসের সিনিয়র ও মধ্য-স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষায়িত কর্মসূচি পরিচালনার সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা। এই কর্মসূচিগুলি এনসিজিজির অন্যান্য দেশের জন্য পরিচালিত সফল উদ্যোগগুলির মডেলের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হবে, যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্ট সেশন, শাসন ব্যবস্থার সেরা চর্চা নিয়ে কর্মশালা এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ মডিউল।

এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল মরিশাসের প্রতিনিধি দলের সাথে ভারতীয় জেলা কালেক্টর এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের (ডিএম) একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশন। এই কর্মকর্তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় দ্বারা তাদের শাসন উদ্যোগের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। এই আলোচনায় ছিলেন অসমের নলবাড়ির ভার্নালি ডেকা এবং উত্তর প্রদেশের মীরাটের দীপক মীনা, যাঁরা ভারতের জেলা পর্যায়ের প্রশাসকদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন, শাসন ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ এবং জনসেবা প্রদানে সংস্কারের বিষয়টি আলোকপাত করেন।

এই আলাপচারিতার মাধ্যমে মরিশাসের কর্মকর্তারা ভারতের শাসন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এটি দেখিয়েছে কীভাবে মরিশাসেও একই ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে, যাতে সেবার গুণমান বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা উন্নত করা যায়।

সফরের সময় মরিশাসের প্রতিনিধিরা ভারতের বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞদের সাথেও মতবিনিময় করেছেন, যার মধ্যে ছিল পিএম গতিশক্তি, সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস (জিইএম), এবং ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই)। এই বৈঠকগুলিতে ভারতের চলমান ডিজিটালাইজেশন উদ্যোগ এবং শাসন সংস্কারের মূল্যবান অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়েছে, যা মরিশাস তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের জন্য বিবেচনা করতে পারে।

ভারতের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাঠামো সম্পর্কে মরিশাসের প্রতিনিধি দলকে ব্রিফিং করেন ভারতীয় পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইনস্টিটিউটের (আইআইপিএ) মহাপরিচালক এস.এন. ত্রিপাঠি। তিনি বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দেন। প্রতিনিধি দল পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভবন পরিদর্শন করে পরিবেশ শাসনের সেরা চর্চা এবং নীতি বাস্তবায়নের বিষয়গুলি দেখে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ছিল ভারতের জাতীয় আর্কাইভের মহাপরিচালক অরুণ সিংহালের সাথে, যেখানে তিনি ভারতের ঐতিহাসিক নথি ডিজিটাইজেশন এবং জাতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। এই সেশনে মরিশাসের কর্মকর্তারা বিশেষ আগ্রহ দেখান, কারণ তাঁরা নিজের দেশের সরকারি সেবায় একই ধরনের ডিজিটাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি

দুর্নীতি অনেক দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, এবং এই সফরের সময় মরিশাসের প্রতিনিধি দল ভারতীয় কেন্দ্রীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিশনের (সিভিসি) কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করার সুযোগ পান। সিভিসি সচিব পি. ড্যানিয়েল প্রতিনিধি দলকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভারতের “শূন্য সহনশীলতা” নীতির বিষয়ে অবহিত করেন এবং কীভাবে এটি সরকারি সেবার কাঠামোতে সংযোজিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করেন। এই সেশনটি শাসনের স্বচ্ছতা এবং সততার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে, যা ভারত এবং মরিশাস উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

মরিশাসের প্রতিনিধি দল ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের (সিআইসি) কর্মকর্তাদের সাথেও সাক্ষাৎ করেন, যেখানে তাঁরা তথ্য অধিকার (আরটিআই) কাঠামোর মাধ্যমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রধান তথ্য কমিশনার হীরালাল সমারিয়া এবং তথ্য কমিশনার আনন্দী রামলিঙ্গম এবং বিনোদ কুমার তিওয়ারি আরটিআই-এর সাফল্য এবং চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে মতবিনিময় করেন, যা জনসেবার দায়বদ্ধতা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।

আলোচনার একটি মূল দিক ছিল ভারতের “মিশন কর্মযোগী”, যা ভারতের সিভিল সার্ভিসের রূপান্তরের জন্য একটি বিশাল সক্ষমতা বৃদ্ধি উদ্যোগ। মিশনের সভাপতি আদিল জয়নুলভাই মরিশাসের প্রতিনিধিদের মিশন কর্মযোগীর সংক্ষিপ্তসার দেন এবং ব্যাখ্যা করেন কীভাবে এই কর্মসূচি সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা, কর্মক্ষমতা এবং সেবার মান উন্নত করার জন্য তৈরি হয়েছে।

মিশন কর্মযোগীর উপর নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা ও উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, যা মরিশাসের প্রতিনিধিদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় ছিল। তাঁরা নিজেদের সিভিল সার্ভিস প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এই ধরনের কাঠামো গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মিশনটির ডিজিটাল শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম, কর্মক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রণোদনা, এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া মডেলটি মরিশাসের জনসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে উন্নতি করার সম্ভাবনা রাখে বলে মনে হয়েছে।

পরিশেষ
ভারত তার সমুদ্র প্রতিবেশী মরিশাসকে শাসন সংস্কার এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মরিশাস প্রতিনিধি দলের এই সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে এবং মরিশাসের সরকারি সেবার আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সফর এবং ভবিষ্যতের উদ্যোগগুলি ভারত-মরিশাস দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

ট্যাগ:

ভারত-মরিশাসের মধ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচির আলোচনা

প্রকাশ: ১২:৪৬:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভারত এবং মরিশাস শাসন ব্যবস্থায় সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচি নিয়ে একটি সফল আলোচনা সম্পন্ন করেছে, যার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। ২৩ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত তিন দিন ধরে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা ইতিবাচকভাবে শেষ হয়েছে, যেখানে উভয় দেশ মরিশাসের সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

মরিশাসের সরকারি সেবার সচিব কনহিয়ে-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ভারতের জাতীয় সুশাসন কেন্দ্র (এনসিজিজি), যা ভারতের প্রশাসনিক সংস্কার ও জনঅভিযোগ বিভাগের (ডিএআরপিজি) অধীনে কাজ করে, সেখানে আলোচনা করতে এসেছিল। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডিএআরপিজি-এর সচিব এবং এনসিজিজি-এর মহাপরিচালক ভি শ্রীনিবাস, যিনি ভবিষ্যতের সহযোগিতার রোডম্যাপ নিয়ে মূল আলোচনা পরিচালনা করেন।

তিন দিনের এই সরকারি সফরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে শেষ হয়, যেখানে উভয় পক্ষই সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে স্পষ্ট একটি রোডম্যাপ তৈরিতে একমত হয়। ব্রিফিং বৈঠকে, মরিশাসের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ভবিষ্যতের সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচির বিশদ আলোচনা করা হয়। এই সফরটি একটি খসড়া সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) বিনিময়ের মাধ্যমে শেষ হয়, যা মরিশাসের পাবলিক সার্ভিস, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার মন্ত্রণালয় এবং ভারতের এনসিজিজি-এর মধ্যে সম্পাদিত হয়।

এই সমঝোতা স্মারক ভবিষ্যতে দুই দেশের সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে, যা নিশ্চিত করবে যে মরিশাসের সরকারি কর্মকর্তারা ভারতের শাসন এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারবেন। কর্মসূচিগুলি শীঘ্রই শুরু হবে এবং বিশেষ করে সিনিয়র এবং মধ্য-স্তরের কর্মকর্তাদের উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে, যারা নীতি বাস্তবায়ন এবং জনসেবা প্রদানে মূল ভূমিকা পালন করেন।

ভারত এবং মরিশাসের মধ্যে শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক এবং উন্নয়নমূলক সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, বিশেষ করে প্রশাসনিক সংস্কার এবং সরকারি সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। এই সফরটি সেই ভিত্তির উপর আরও নির্মাণের অংশ হিসেবে হয়েছে, যেখানে মরিশাসের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচি এবং ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগ।

মরিশাসের কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষায়িত কর্মসূচি

এই সফরের সময়, উভয় পক্ষই এনসিজিজি এবং মরিশাসের পাবলিক সার্ভিস, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সহযোগিতার পথগুলি নিয়ে আলোচনা করেন।

এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল মরিশাসের সিনিয়র ও মধ্য-স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষায়িত কর্মসূচি পরিচালনার সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা। এই কর্মসূচিগুলি এনসিজিজির অন্যান্য দেশের জন্য পরিচালিত সফল উদ্যোগগুলির মডেলের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হবে, যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্ট সেশন, শাসন ব্যবস্থার সেরা চর্চা নিয়ে কর্মশালা এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ মডিউল।

এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল মরিশাসের প্রতিনিধি দলের সাথে ভারতীয় জেলা কালেক্টর এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের (ডিএম) একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশন। এই কর্মকর্তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় দ্বারা তাদের শাসন উদ্যোগের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। এই আলোচনায় ছিলেন অসমের নলবাড়ির ভার্নালি ডেকা এবং উত্তর প্রদেশের মীরাটের দীপক মীনা, যাঁরা ভারতের জেলা পর্যায়ের প্রশাসকদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন, শাসন ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ এবং জনসেবা প্রদানে সংস্কারের বিষয়টি আলোকপাত করেন।

এই আলাপচারিতার মাধ্যমে মরিশাসের কর্মকর্তারা ভারতের শাসন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এটি দেখিয়েছে কীভাবে মরিশাসেও একই ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে, যাতে সেবার গুণমান বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা উন্নত করা যায়।

সফরের সময় মরিশাসের প্রতিনিধিরা ভারতের বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞদের সাথেও মতবিনিময় করেছেন, যার মধ্যে ছিল পিএম গতিশক্তি, সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস (জিইএম), এবং ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই)। এই বৈঠকগুলিতে ভারতের চলমান ডিজিটালাইজেশন উদ্যোগ এবং শাসন সংস্কারের মূল্যবান অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়েছে, যা মরিশাস তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের জন্য বিবেচনা করতে পারে।

ভারতের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাঠামো সম্পর্কে মরিশাসের প্রতিনিধি দলকে ব্রিফিং করেন ভারতীয় পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইনস্টিটিউটের (আইআইপিএ) মহাপরিচালক এস.এন. ত্রিপাঠি। তিনি বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দেন। প্রতিনিধি দল পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভবন পরিদর্শন করে পরিবেশ শাসনের সেরা চর্চা এবং নীতি বাস্তবায়নের বিষয়গুলি দেখে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ছিল ভারতের জাতীয় আর্কাইভের মহাপরিচালক অরুণ সিংহালের সাথে, যেখানে তিনি ভারতের ঐতিহাসিক নথি ডিজিটাইজেশন এবং জাতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। এই সেশনে মরিশাসের কর্মকর্তারা বিশেষ আগ্রহ দেখান, কারণ তাঁরা নিজের দেশের সরকারি সেবায় একই ধরনের ডিজিটাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি

দুর্নীতি অনেক দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, এবং এই সফরের সময় মরিশাসের প্রতিনিধি দল ভারতীয় কেন্দ্রীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিশনের (সিভিসি) কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করার সুযোগ পান। সিভিসি সচিব পি. ড্যানিয়েল প্রতিনিধি দলকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভারতের “শূন্য সহনশীলতা” নীতির বিষয়ে অবহিত করেন এবং কীভাবে এটি সরকারি সেবার কাঠামোতে সংযোজিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করেন। এই সেশনটি শাসনের স্বচ্ছতা এবং সততার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে, যা ভারত এবং মরিশাস উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

মরিশাসের প্রতিনিধি দল ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের (সিআইসি) কর্মকর্তাদের সাথেও সাক্ষাৎ করেন, যেখানে তাঁরা তথ্য অধিকার (আরটিআই) কাঠামোর মাধ্যমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রধান তথ্য কমিশনার হীরালাল সমারিয়া এবং তথ্য কমিশনার আনন্দী রামলিঙ্গম এবং বিনোদ কুমার তিওয়ারি আরটিআই-এর সাফল্য এবং চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে মতবিনিময় করেন, যা জনসেবার দায়বদ্ধতা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।

আলোচনার একটি মূল দিক ছিল ভারতের “মিশন কর্মযোগী”, যা ভারতের সিভিল সার্ভিসের রূপান্তরের জন্য একটি বিশাল সক্ষমতা বৃদ্ধি উদ্যোগ। মিশনের সভাপতি আদিল জয়নুলভাই মরিশাসের প্রতিনিধিদের মিশন কর্মযোগীর সংক্ষিপ্তসার দেন এবং ব্যাখ্যা করেন কীভাবে এই কর্মসূচি সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা, কর্মক্ষমতা এবং সেবার মান উন্নত করার জন্য তৈরি হয়েছে।

মিশন কর্মযোগীর উপর নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা ও উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, যা মরিশাসের প্রতিনিধিদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় ছিল। তাঁরা নিজেদের সিভিল সার্ভিস প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এই ধরনের কাঠামো গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মিশনটির ডিজিটাল শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম, কর্মক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রণোদনা, এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া মডেলটি মরিশাসের জনসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে উন্নতি করার সম্ভাবনা রাখে বলে মনে হয়েছে।

পরিশেষ
ভারত তার সমুদ্র প্রতিবেশী মরিশাসকে শাসন সংস্কার এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মরিশাস প্রতিনিধি দলের এই সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে এবং মরিশাসের সরকারি সেবার আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সফর এবং ভবিষ্যতের উদ্যোগগুলি ভারত-মরিশাস দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক