অবশেষে সম্পন্ন হলো ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি। গত ২৭ মার্চ, রবিবার, এক প্রেস ব্রিফিং এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন বর্তমানে দুবাইয়ে সফররত ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। এছাড়া, চুক্তিতে স্থানপ্রাপ্ত বিষয়াদিও জনগণের জ্ঞাতার্থে উন্মুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দুবাইতে অনুষ্ঠিতব্য ‘ইনভেস্টোপিয়া সামিট’ এবং ‘ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট’-এ অংশ নিতে বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন ভারতের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মধ্যে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে দু দেশের মধ্যকার ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব সম্পর্কিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো।
বলে রাখা ভালো, দীর্ঘ ৮৮ দিন আলোচনার পর চূড়ান্ত হয় ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি এবং চলতি বছরের পহেলা মে থেকে চুক্তিটি কার্যকর হবে বলে জানা গিয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত-আমিরাতের সিইপিএ হচ্ছে বিগত এক দশকে ভারতের করা প্রথম কোনো গভীর ও সম্পূর্ণ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি।
চুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা ইতোপূর্বে বলেছিলেন, “এটি বাস্তবায়িত হলে আগামী দুই বছরে আমিরাতে ভারতের টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি ২০০ কোটি ডলার বাড়বে এবং প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি তিনগুণ হতে পারে।”
চুক্তিতে আগামী পাঁচ বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০ হাজার কোটি ডলার বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে এর পরিমাণ ছয় হাজার কোটি ডলারের মতো। আমিরাতের সঙ্গে সিইপিএ সই হলে ভারতের রত্ন ও গহনা, টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, চিকিৎসা পণ্য, অটোমোবাইল, চামড়া, ক্রীড়া সামগ্রী ও আসবাব শিল্পে পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান যোগ হবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেছিলেন, “স্পর্শকাতর সব বিষয় মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। এটি উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক চুক্তি। এতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে লাখখানেক কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।”
ভারত আমিরাতে তাজা ও হিমায়িত মাংস, পনির, মশলা, জৈব রাসায়নিক ও কাগজ রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চায়। ক্রীড়া সামগ্রী, আসবাবপত্র রপ্তানিতেও একই সুবিধা পেতে পারে নয়াদিল্লি। চুক্তি হলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ভারতের প্লাস্টিক রপ্তানি বেড়ে ১৩০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে, এখন যার পরিমাণ ৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলার মাত্র।
শুল্কমুক্ত রপ্তানির জন্য ভারত প্রায় এক হাজার পণ্য চিহ্নিত করেছে। এগুলোর মধ্যে ওয়াশিং মেশিন, এসি, রেফ্রিজারেটর, মশলা, তামাক, সুতি কাপড়, টেক্সটাইলসহ চামড়াজাত পণ্যও রয়েছে।
ভারতীয় সেই কর্মকর্তা বলেছেন, ২০২৩ সাল নাগাদ আমিরাতে ভারতের রত্ন ও গহনা রপ্তানি এক হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে এবং পরবর্তী পাঁচ বছরে তা দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্বর্ণ, রূপা ও প্লাটিনাম গহনা রপ্তানির ওপর পাঁচ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার চেয়েছে ভারত। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটি মাত্র ১১৮ কোটি ডলারের গহনা আমিরাতে রপ্তানি করতে পেরেছে।
চুক্তিটির প্রধান কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
Ø দু দেশের মধ্যকার বাণিজ্যকে উৎসাহিত ও উন্নত করার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মত কাজ করবে চুক্তিটি।
Ø দু দেশের এই সিইপিএ চুক্তিটিতে ভারত ১১,৯০৮ ট্যারিফ লাইন এবং আমিরাত প্রায় ৭৫৮১ ট্যারিফ লাইন কভার করবে।
Ø ভারত আমিরাতে প্রায় দ্বিগুণ বাজার এক্সেস লাভ করবে। আমিরাতও পূর্বের চেয়ে কম ব্যয়ে ভারতীয় পণ্য লাভ করবে।
Ø পরিষেবা খাতে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত প্রায় ১০০ টি উপ-সেক্টরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে বাজার অ্যাক্সেসের প্রস্তাব দিয়েছে।
Ø উভয় পক্ষই ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যসমূহে অ্যাক্সেসের সুবিধার্থে ফার্মাসিউটিক্যালস সম্পর্কিত একটি পৃথক অ্যানেক্সে সম্মত হয়েছে, বিশেষ করে নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণের পণ্যগুলির জন্য 90 দিনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় নিবন্ধন এবং বিপণন অনুমোদন।
প্রসঙ্গত, ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আমিরাতের অবস্থান তৃতীয় ও রপ্তানির দিক থেকে দ্বিতীয়। এক্ষেত্রে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। গত অর্থবছরেও আমিরাতে ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ভারত।
তাছাড়া, ভারতে বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আমিরাতের অবস্থান অষ্টম। ভারতে প্রায় ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক