সোমবার ভার্চুয়াল মিটিংয়ে মত বিনিময় করলেন ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউক্রেনের মতো পরিস্থিতি যাতে ইন্দো প্যাসিফিক রিজিয়নে কোনওদিন না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে একে অপরকে সহায়তা করার উপরে জোর দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এদিকে আলোচনার শুরুতেই মরিসন জানিয়ে দেন, ইউরোপে যুদ্ধের দামামা বাজছে আর সেই পরিস্থিতির মধ্যে আলোচনা শুরু হচ্ছে। পাশাপাশি ইউক্রেনের বহু মানুষের জীবনহানির জন্য রাশিয়াকে দায়ী থাকতে হবে বলেও এদিন মতামত দেন তিনি।
তবে হিন্দিতে কথা শুরু করার সময় মোদী ইউক্রেন বা রাশিয়ার প্রসঙ্গ তোলেননি। তিনি মূলত দু দেশের মধ্যে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ভাব বিনিময়ের উপর জোর দেন। ব্যবসা বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধির উপর জোর দেন তিনি। পাশাপাশি শিক্ষা, উদ্ভাবনী শক্তি, বিজ্ঞান বিষয়ে পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের উপর জোর দেন মোদী।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী তাঁর বার্তায় জানিয়েছেন, একটি হতাশাজনক যুদ্ধের ব্যাকড্রপের মধ্যে আমাদের এই মিটিং। এই ধরনের ঘটনা আমাদের রিজিয়নে হওয়া কখনই উচিত নয়। এই রিজিয়ন মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে।
তবে মোদী ও মরিসন উভয়ই সুসংহত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তির সম্পাদনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এদিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে ২৯টি ভারতীয় প্রাচীন সামগ্রী ফেরানো প্রসঙ্গে মরিসনকে ‘আমার প্রিয় বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেন মোদী। বিজেপির জয় ও হোলি শুভেচ্ছা জানানোর প্রসঙ্গেও মোদী মরিসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সরকারি সূত্রের খবর, আজই অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা বিভাগের সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ঘোষণা করা হতে পারে। প্রয়াত সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াতের নামেই এই বিশেষ উদ্যোগ শুরু করা হয়েছে।
ভারত-অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ নেতৃত্বের এই সম্মেলনে নতুন কোনও চুক্তি স্বাক্ষর না হলেও, অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। চলতি মাসের শেষভাগেই এ নিয়ে চু্ক্তি স্বাক্ষর হতে পারে দুই দেশের মধ্যে। জানা গিয়েছে, ১৫০০ কোটি টাকার যে বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ১৯৩ কোটি উন্নত প্রযুক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উত্তোলনের খাতে বিনিয়োগ করা হবে।
এছাড়া, মিলিতভাবে মহাকাশ গবেষণার জন্য ১৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় বাণিজ্যের জন্য ১৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৯৭ কোটি টাকা খরচ করা হবে বাণিজ্য, দক্ষতা ও উদ্ভাবনী খাতে। দুই দেশের তরফে মিলিতভাবে একাধিক বৃত্তির ঘোষণাও করা হবে, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এরজন্য দুই দেশের মিলিত উদ্যোগে একটি টাস্ক ফোর্সও তৈরি করা হবে, যা পড়ুয়াদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করবে এবং সেই অনুযায়ী বিদেশে পড়ার সুযোগও দেওয়া হবে।
এর আগে ২০২০ সালের ৪ জুন দুই দেশ প্রথমবার ভার্চুয়াল সম্মেলনে যোগদান করেছিল। সেই সময়ও ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত ও কূটনৈতিক স্তরে সম্পর্ক মজবুত করার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদের উপরে ভিত্তি করেই ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বর্তমানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগের আর্থিক পরিমাণ ২১০০ কোটি ডলারেরও বেশি। ২০০৩ সাল থেকেই এই সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের বার্ষিক রফতানির পরিমাণ ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রতি বছর ভারত ১৩০০ কোটি ডলারেও বেশি মূল্যের বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়। ভারতে সোনা আমদানির ক্ষেত্রে সবথেকে বড় বাজার অস্ট্রেলিয়াই। এছাড়া কয়লা ও তামাও আমদানি-রফতানি করা হয়।
অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারত যে সামগ্রীগুলো আমদানি করে, তার মধ্যে অন্যতম হল কয়লা, সোনা, তামা, বিভিন্ন সবজি। অন্যদিকে ভারত থেকে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম, মুক্তো, বিভিন্ন দামি পাথর, গয়না ও ওষুধ রফতানি করা হয়। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক