০১:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিহার থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসাম পৌঁছালো ভারতীয় জাহাজ

প্রথমবারের মতো বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসামের পান্ডু পৌঁছেছে ভারতের পণ্যবাহী কার্গো ভেসেল বা পণ্যবাহী জাহাজ। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের জলপথে এ ধরণের নিয়মিত নৌযান আসাম তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলে ধারণা করছে বোদ্ধামহল। গত ০৬ মার্চ, রবিবার, জাহাজটি গুয়াহাটির পাণ্ডুতে পৌছায়।

এর আগে গত ০৫ ফেব্রুয়ারী পাটনায় ভার্চ্যুয়ালি এই নৌ পরিষেবার উদ্বোধন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় জাহাজ চলাচলমন্ত্রী ও আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। ভারতের এমভি লালবাহাদুর শাস্ত্রী নামের কার্গো ভেসেলের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় এ পরিষেবা।

পূর্বেই জানা গিয়েছিলো, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ প্রটোকল বা ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ (পিআইডব্লিউটিটি)-এর আওতায় পাটনা থেকে দুই হাজার টন খাদ্যশস্য আসামে পাঠানো হচ্ছে।

প্রথম দিন এই কার্গো ভেসেল ২০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য নিয়ে পাটনা থেকে বাংলাদেশের নদীপথ হয়ে রওনা দিয়েছিলো আসামের উদ্দেশ্যে। পরিষেবাটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, অশ্বিনী কুমার চৌবে এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা শান্তনু ঠাকুর।

এ প্রসঙ্গে সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেছিলেন, “পাটনা থেকে পাণ্ডু পর্যন্ত এই নৌ চলাচলটি প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মহাপরিকল্পনার একটি উদাহরণ যার লক্ষ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করার মাধ্যমে বিরামহীন পণ্য ও জন পরিবহণের জন্য একটি মাল্টি-মডেল সংযোগ তৈরি করা। অভ্যন্তরীণ জলপথ হল ভারতকে সংযুক্ত করার সর্বোত্তম, সবচেয়ে পরিবেশ-বান্ধব ও অর্থনৈতিকভাবে দক্ষ উপায়।”

তিনি আরও বলেছিলেন, “অভ্যন্তরীণ জলপথের গুণক প্রভাব নদীগুলোর দৃশ্যমান উপকূলের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। যখন পণ্য ও মানুষ ফেরি বা জাহাজে চলাচল করে, তখন এটি একটি পরিচর্যাকারী ইকোসিস্টেম তৈরি করতেও সাহায্য করে যা ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সাথে বিভিন্ন পরিষেবা-চালিত অর্থনৈতিক কার্যকলাপের পরিধি বজায় রাখার পাশাপাশি সিমেন্ট ও স্টিলের মতো মধ্যবর্তী শিল্পগুলোকেও উপকৃত করে। কারিগরি খরচ কমাতে, ভারতীয় শিল্পকে প্রতিযোগিতামূলক করতে এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলিকে একটি কার্যকর, উন্নয়নশীল পরিবহণ, বিশেষ করে পণ্য পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে মোদী সরকারের। অভ্যন্তরীণ নৌপথের নেটওয়ার্ক নদী, চ্যানেল, বদ্ধ জলাশয় ও খাঁড়ি মিলে প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত।”

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এই পরিষেবা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, “বিহারের পাটনা থেকে গুয়াহাটির পাণ্ডু পর্যন্ত জাহাজে প্রথমবার খাদ্য শস্য পরিবহন উত্তর-পূর্বের প্রবেশ দ্বারের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করবে। এর ফলে, উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দ্বার খুলে যাবে। ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটের উন্নয়নে ৩০৫ কোটি টাকার বাজেট সংস্থান করা হয়েছে। এ ছাড়াও উত্তর পূর্বাঞ্চলের পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে ভারত।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ট্রানজিট চুক্তি ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই ভারতকে এ সুবিধা দিয়ে আসছে। তবে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে আসামের পাণ্ডুতে পণ্য পাঠালো ভারত।

পিআইডব্লিউটিটির দ্বিতীয় সংশোধনী অনুযায়ী নতুন রুট ব্যবহার করে এমভি লালবাহাদুর শাস্ত্রী নামের কার্গো ভেসেলটি পাটনা থেকে গঙ্গা নদীতে যাত্রা শুরু করে ভাগলপুর, মণিহারি, সাহিবগঞ্জ, ফারাক্কা, ত্রিবেণী, কলকাতা, হলদিয়া হেমনগর হয়ে পণ্যবাহী জাহাজ ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের খুলনায়।

সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ, চিলমারী হয়ে আসামের ধুবরী, যোগীখোপা হয়ে পৌঁছায় পান্ডু। পথের দূরত্ব ২ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার। পৌঁছাতে সময় লাগলো প্রায় ৩০ দিন। এর মাঝে জাহাজটি পাটনা থেকে বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায় ৮-৯ দিন পরে।

উল্লেখ্য, দুই দেশের ট্রানজিট ট্রান্সশিপমেন্ট ১৯৭২ সালে শুরু হলেও ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে পিআইডব্লিউটিটি নবায়ন ও উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির মাধ্যমে এটিকে আবার সক্রিয় করা হয়। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

ট্যাগ:

বিহার থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসাম পৌঁছালো ভারতীয় জাহাজ

প্রকাশ: ০১:৪৩:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ মার্চ ২০২২

প্রথমবারের মতো বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসামের পান্ডু পৌঁছেছে ভারতের পণ্যবাহী কার্গো ভেসেল বা পণ্যবাহী জাহাজ। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের জলপথে এ ধরণের নিয়মিত নৌযান আসাম তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলে ধারণা করছে বোদ্ধামহল। গত ০৬ মার্চ, রবিবার, জাহাজটি গুয়াহাটির পাণ্ডুতে পৌছায়।

এর আগে গত ০৫ ফেব্রুয়ারী পাটনায় ভার্চ্যুয়ালি এই নৌ পরিষেবার উদ্বোধন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় জাহাজ চলাচলমন্ত্রী ও আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। ভারতের এমভি লালবাহাদুর শাস্ত্রী নামের কার্গো ভেসেলের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় এ পরিষেবা।

পূর্বেই জানা গিয়েছিলো, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ প্রটোকল বা ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ (পিআইডব্লিউটিটি)-এর আওতায় পাটনা থেকে দুই হাজার টন খাদ্যশস্য আসামে পাঠানো হচ্ছে।

প্রথম দিন এই কার্গো ভেসেল ২০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য নিয়ে পাটনা থেকে বাংলাদেশের নদীপথ হয়ে রওনা দিয়েছিলো আসামের উদ্দেশ্যে। পরিষেবাটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, অশ্বিনী কুমার চৌবে এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা শান্তনু ঠাকুর।

এ প্রসঙ্গে সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেছিলেন, “পাটনা থেকে পাণ্ডু পর্যন্ত এই নৌ চলাচলটি প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মহাপরিকল্পনার একটি উদাহরণ যার লক্ষ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করার মাধ্যমে বিরামহীন পণ্য ও জন পরিবহণের জন্য একটি মাল্টি-মডেল সংযোগ তৈরি করা। অভ্যন্তরীণ জলপথ হল ভারতকে সংযুক্ত করার সর্বোত্তম, সবচেয়ে পরিবেশ-বান্ধব ও অর্থনৈতিকভাবে দক্ষ উপায়।”

তিনি আরও বলেছিলেন, “অভ্যন্তরীণ জলপথের গুণক প্রভাব নদীগুলোর দৃশ্যমান উপকূলের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। যখন পণ্য ও মানুষ ফেরি বা জাহাজে চলাচল করে, তখন এটি একটি পরিচর্যাকারী ইকোসিস্টেম তৈরি করতেও সাহায্য করে যা ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সাথে বিভিন্ন পরিষেবা-চালিত অর্থনৈতিক কার্যকলাপের পরিধি বজায় রাখার পাশাপাশি সিমেন্ট ও স্টিলের মতো মধ্যবর্তী শিল্পগুলোকেও উপকৃত করে। কারিগরি খরচ কমাতে, ভারতীয় শিল্পকে প্রতিযোগিতামূলক করতে এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলিকে একটি কার্যকর, উন্নয়নশীল পরিবহণ, বিশেষ করে পণ্য পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে মোদী সরকারের। অভ্যন্তরীণ নৌপথের নেটওয়ার্ক নদী, চ্যানেল, বদ্ধ জলাশয় ও খাঁড়ি মিলে প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত।”

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এই পরিষেবা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, “বিহারের পাটনা থেকে গুয়াহাটির পাণ্ডু পর্যন্ত জাহাজে প্রথমবার খাদ্য শস্য পরিবহন উত্তর-পূর্বের প্রবেশ দ্বারের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করবে। এর ফলে, উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দ্বার খুলে যাবে। ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটের উন্নয়নে ৩০৫ কোটি টাকার বাজেট সংস্থান করা হয়েছে। এ ছাড়াও উত্তর পূর্বাঞ্চলের পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে ভারত।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ট্রানজিট চুক্তি ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই ভারতকে এ সুবিধা দিয়ে আসছে। তবে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে আসামের পাণ্ডুতে পণ্য পাঠালো ভারত।

পিআইডব্লিউটিটির দ্বিতীয় সংশোধনী অনুযায়ী নতুন রুট ব্যবহার করে এমভি লালবাহাদুর শাস্ত্রী নামের কার্গো ভেসেলটি পাটনা থেকে গঙ্গা নদীতে যাত্রা শুরু করে ভাগলপুর, মণিহারি, সাহিবগঞ্জ, ফারাক্কা, ত্রিবেণী, কলকাতা, হলদিয়া হেমনগর হয়ে পণ্যবাহী জাহাজ ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের খুলনায়।

সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ, চিলমারী হয়ে আসামের ধুবরী, যোগীখোপা হয়ে পৌঁছায় পান্ডু। পথের দূরত্ব ২ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার। পৌঁছাতে সময় লাগলো প্রায় ৩০ দিন। এর মাঝে জাহাজটি পাটনা থেকে বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায় ৮-৯ দিন পরে।

উল্লেখ্য, দুই দেশের ট্রানজিট ট্রান্সশিপমেন্ট ১৯৭২ সালে শুরু হলেও ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে পিআইডব্লিউটিটি নবায়ন ও উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির মাধ্যমে এটিকে আবার সক্রিয় করা হয়। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক