আজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানে একটি রেস্টুরেন্টে শুরু হয়েছে ‘স্টাডি ইন ইন্ডিয়া এডুকেশন ফেয়ার-২০২২’। দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য এই আয়োজনের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এই সময় তাঁর সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে দোরাইস্বামী বলেন, “বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বিদেশী ছাত্র সম্প্রদায়।” অনুষ্ঠান পরবর্তীতে এক টুইটবার্তায় অনুষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন।
টুইটে তারা লিখেছে, “বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। অন্যদিকে, দোরাইস্বামী বলেছেন, বাংলাদেশীরা ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বিদেশী ছাত্র সম্প্রদায়।”
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “দেশের বাইরে ভিন্ন দেশের কোথায়ও শিক্ষার্থীরা পড়তে গেলে সেখানের অনেক কিছু তারা বুঝতে পারে না। আমরা চাই ভালো সুযোগ নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে যাক। বিদেশি শিক্ষার্থীরাও বাংলাদেশে পড়তে আসুক।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সবাই এই সব সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করব। ভারতের শিক্ষার্থীরা যদি বাংলাদেশ পড়তে আসে, আর বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যদি ভারতে পড়তে যায়, তাতে দুই দেশের জ্ঞান বিনিময়ের পাশাপাশি সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
মন্ত্রী বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সবার মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরিতে এই স্টাডি ইন ইন্ডিয়া ক্যাম্পেইন ভালোই কাজে দিবে। আমরা সবাই একসঙ্গে উন্নত দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কাজ করব।”
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, “ভারত এবং বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা একে অন্যের দেশে পড়াশোনা করার বিষয়টি এক ধরনের বিনিয়োগও বটে, যা দুই দেশের সুন্দর সম্পর্ক বৃদ্ধির একটা বড় মাধ্যম হতে পারে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে নিত্য নতুন ব্যবসার চিন্তা, স্টার্টআপ এবং বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট প্রভৃতি বিষয়গুলো আরও বাড়বে। এ ছাড়া স্টাডি ইন ইন্ডিয়া ক্যাম্পেইন আমাদের দুই দেশের পরবর্তী প্রজন্মের পরস্পরের মাঝে যোগাযোগ বাড়ানো এবং তাঁদের নিজেদের উপকৃত হওয়ার বড় একটা সুযোগ।”
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টল পরিদর্শন করেন। স্টলগুলোতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্টরা সে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের ওয়েবসাইট অনুসারে, “মানবসম্পদ উন্নয়ন হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন চলমান প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং বৃত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগিতা প্রচেষ্টার একটি অন্যতম মূল উপাদান।”
এদিন দোরাইস্বামী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত বছর তার বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের একটি উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশে আমাদের ভাইদের সাথে ভারতে শিক্ষা এবং পেশাদারিত্বের জন্য প্ল্যাটফর্ম খোলার একটি তীব্র প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই আলোকে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০০ টি সুবর্ণ জয়ন্তী বৃত্তি (এসজেএস), আইসসিআর: ৫০০ আসন এবং কর্মকর্তাদের (আইটিইসি: ৫০০ আসন) ঘোষণা করা হয়েছে। এই বৃত্তিগুলোর লক্ষ্য হল, সেরা এবং উজ্জ্বল প্রতিভাদের আকৃষ্ট করা এবং ভারতের নতুন শিক্ষা নীতির অধীনে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ প্রদান করা।”
হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর) বৃত্তি ১৯৫০ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদ কর্তৃক চালু হয়েছিল। ভারত ও অন্যান্য দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক বোঝাপড়াকে জোরদার ও মজবুত করার জন্য এই স্কলারশিপ দারুণ কাজে লাগে। গত বছরও বাংলাদেশীরা ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি স্তরে ২৬৭টি আইসিসিআর বৃত্তি পেয়েছেন।
অন্যদিকে, ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (আইটিইসি) প্রোগ্রামটি ১৯৬৪ সালে চালু হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে পেশাদারদের জন্য জ্ঞান এবং দক্ষতার আদান-প্রদান বাড়ানো। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক