আফগানিস্তানে গম পাঠাতে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ইউএনডব্লিউএফপি) সাথে দ্বিতীয়বারের মতো চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। ৩১ মার্চ, বৃহস্পতিবার, দ্বিপক্ষীয় চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। এর আগে আফগানিস্তানে ভারতের পাঠানো ১০ হাজার মেট্রিক টন গমের প্রথম চালান সফলভাবে দেশটির জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এবার দেশটিতে সহায়তার দ্বিতীয় চালান পাঠাতেই মূলত জাতিসংঘের সংস্থার সাথে চুক্তি করলো ভারত।
জানা গিয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের যুগ্ম সচিব (ইউএনইএস) শ্রীনিবাস গোত্রু এবং ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর বিশ্ব পারাজুলির মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। গত মাসে রোমে প্রথম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, গত বছর আগস্টে দীর্ঘযুদ্ধের পর আফগানিস্তানের শাসনভার নিজেদের হাতে নেয় তালিবান। কাবুলের মসনদে তালিবান অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই আফগান সরকারের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও বরাদ্দ অর্থের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমএফ।
তারপর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশের অর্থ সংকট চরমে। আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন সরকারে স্বীকৃতিও মেলেনি, জোটেনি কোনও সাহায্য, সরকার চালাতে তাই হিমশিম অবস্থা তালিব যোদ্ধাদের। দেশের চরম খাদ্য সংকট ও দারিদ্র দেখা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মানবিকতার কারণে আফগান জনসাধারণের কথা ভেবে পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী হয়েছিল ভারত। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নয়াদিল্লি। গম পাঠানোর ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সড়ক পথ ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।
প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানের আপত্তি ও পরবর্তীকালে নিয়মের নানা জটিলতার কারণে গম পাঠানোর প্রক্রিয়া থমকে ছিল। তবে যাবতীয় সমস্যার সমাধান ঘটিয়ে আফগানিস্তানে নিয়মিত পৌছাচ্ছে ভারতে পাঠানো গম।
কূটনৈতিক দিক থেকে ভারতের এই উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ আফগানিস্তানের মানবতার যে সংকট দেখা দিয়েছে, তাতে ভারত ও পাকিস্তান একসঙ্গে কাজ করছে। ভারতের তরফে আফগানিস্তানে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা এবং গম পাঠানোর কথা থাকলেও, পাকিস্তান প্রাথমিকভাবে এই প্রস্তাবে রাজি ছিল না। পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক স্তরে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে অবস্থান থেকে সরে এসে ভারতের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ইসলামাবাদ।
গত বছর ১৫ অগস্ট আফগানিস্তানের মসনদ দখলের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে তালিবানের বিরুদ্ধে। খাদ্যাভাব দেখা দেওয়ার কারণে সেই সময়ই গম পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত। শেষমেশ সাধারণ আফগান জনগণের ক্ষুধা মেটাতে ভারতের নেওয়া পদক্ষেপ সফল হতে চলেছে। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। খবরঃ ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক