বৈশ্বিক বিস্তৃতি ও স্বাধীন মানসিকতায় ফ্রান্সকে বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি হিসেবে আখ্যা দিলেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বহুমুখীতা ও ভারসাম্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেও দেশটির নাম নেন তিনি। ২৩ ফেব্রুয়ারী, বুধবার, প্যারিসে ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস আয়োজিত ‘ভারত ফ্রান্সকে কীভাবে মূল্যায়ন করে?” -শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, “সমস্ত দেশই এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া, কৌশল, সম্পর্ক, এমনকি কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থান নিয়ে পুনঃমূল্যায়ন করছে। পরিবেশের দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আমরা প্রতিদিন ঝাঁপিয়ে পড়ি। প্রায়শই, দীর্ঘস্থায়ী অনুমানগুলো পুনর্বিবেচনা করতে হয়। ফ্রান্স বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি যা সবসময়ই ভারতের উদ্বেগ এবং অগ্রাধিকারের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল।”
ভারত ও ফ্রান্সের সম্পর্ক ক্রমশ গভীরতর হচ্ছে জানিয়ে জয়শঙ্কর বলেছেন, “গত দুই দশকে ভারত বিশ্বস্তরে অনেক সম্পর্ককে নতুন রূপ দিয়েছে। তবে, ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক একাধিক প্রজন্মের সেতুবন্ধন। বিশ্বব্যাপী নানা অশান্তির মধ্যেও ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক একটি স্থির এবং স্পষ্ট পথে এগিয়ে চলেছে। এটি এমন একটি সম্পর্ক যার আকস্মিক পরিবর্তন হবেনা। প্রকৃতপক্ষে, এই সম্পর্ক ক্রমাগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং এর জন্য আমরা আরও শক্তিশালী হয়েছি।”
একই সঙ্গে তিনি বলেন, “ভারত ফ্রান্সকে কীভাবে দেখে, সে সম্পর্কে আমার চিন্তাভাবনা জানাতে পেরেও আমি সন্তুষ্ট। আমি ফরাসি বিদেশমন্ত্রী লে ড্রিয়ান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পার্লি এবং ইন্দো প্যাসিফিক মিনিস্ট্রিয়াল ফোরামের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে আজ গর্বের সঙ্গে বলতে পারছি, আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। আমাদের বৈঠকগুলো কৌশলগত অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, ভারত এবং ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক সত্যিকারের অনন্য অংশীদারিত্বের একটি বাধ্যতামূলক কাঠামো প্রদান করেছে।”
এসময়, বর্তমান ফ্রান্স-ভারতের সম্পর্ককে বিগত ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে আখ্যায়িত করেন জয়শঙ্কর। এই শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পেছনে উভয় রাষ্ট্রের গণতন্ত্র এবং সর্বজনীন মানবিক মূল্যবোধে অগাধ বিশ্বাস মূলভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা ফ্রান্সকে বরাবরই একটি বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি। স্পষ্টতই, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ফ্রান্স এই সম্মান পাবার যোগ্য। কিন্তু, এটি ছাড়াও বিশ্বব্যাপী ফ্রান্সের বিস্তৃতি এবং বৈশ্বিক প্রভাব ফ্রান্সকে গুরুত্বপূর্ণ আসনে আসীন করতে বাধ্য করবে।”
ভারত যখন প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় এবং পরবর্তীকালে পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ হয়ে উঠে, তখন ভারতকে সমর্থন দানকারী রাষ্ট্র হিসেবে ফ্রান্সের অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা তুলে ধরেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, “১৯৫০ সালে আমরা সর্বপ্রথম ফ্রান্সের কাছ থেকেই যুদ্ধবিমান কিনেছিলাম। এরপর থেকে আজ অবধি ফরাসী বিমান ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম আমাদের সামরিক বাহিনীগুলোর অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক পরীক্ষার পর ফ্রান্সই প্রথম পারমাণবিক রাষ্ট্র, যারা আমাদের সমর্থনে ও সহায়তায় এগিয়ে আসে। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীও ফ্রান্সকে পরম মিত্র হিসেবে জ্ঞান করতেন।”
একইভাবে, ২০০৮ সালে বেসামরিক পারমাণবিক শক্তিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পুনরায় প্রাপ্তির জন্য ভারতের আবেদনকে পারমাণবিক সরবরাহকারী গ্রুপ থেকে ছাড়পত্র পাইয়ে দিতে ফ্রান্স যেভাবে সাহায্য করেছিলো, তাও তুলে ধরেন জয়শঙ্কর।
উল্লেখ্য, মহাকাশ গবেষণা, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, প্রযুক্তি সহ বহুমুখী স্তরে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে। উভয় রাষ্ট্র এঁকে অন্যকে বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে আকণ্ঠ সমর্থন দিয়ে থাকে। তাছাড়া, শীর্ষ পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগের ফলে দিনকে দিন আরও উন্নত হচ্ছে দু দেশের সম্পর্ক।
খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক