প্রায় দেড় বছর আগে ২০২০ সালের জুন মাসে ভারত ও চীনা সেনার মধ্যে গালওয়ান সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেঁধেছিল। সেই সংঘর্ষে শহীদ হয়েছিলেন ভারতের বহু সেনা জওয়ান। প্রাণ হারিয়েছিলেন চীনেরও বহু সৈনিক। সেই ঘটনা নিয়ে এবার চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন অস্ট্রেলিয়ার এক সংবাদপত্রের সাংবাদিক।
‘দ্য ক্ল্যাক্সন’ নামক সংবাদপত্রের সম্পাদক অ্যান্থনি ক্ল্যান দাবি করেছেন, চীনের সরকারের তরফে যে সংখ্যক সেনা মৃত্যুর দাবি করা হয়েছিল তা মিথ্যে। চীনের প্রকাশিত সংখ্যা থেকে অনেক বেশি সংখ্যক পিএলএ সৈনিক প্রাণ হারিয়েছিলেন গালওয়ানে।
উল্লেখ্য, চীন গালওয়ান সংঘর্ষে মৃতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ না করলেও মরণোত্তর সম্মান দিয়েছে চার জওয়ানকে। যদিও অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রের দাবি, চীনের ৩৮ জন জওয়ান গালওয়ানে প্রাণ হারিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়া গবেষণার মাধ্যমে এই তথ্য বের করেছে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রটি।
‘দ্য ক্ল্যাক্সন’ এই গবেষণার জন্য আলাদা ভাবে একটি সোশ্যাল মিডিয়া দল গঠন করে। পাশাপাশি চীনে থাকা বেশ কয়েকজনের থেকেও সাহায্য পান। আর এসব গবেষণার ভিত্তিতেই অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রটি ‘গালওয়ান ডিকোডেড’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তথ্য জোগাড় করে এই রিপোর্ট লেখা হয়েছে।
তদন্তে দাবি করা হয়েছে, একটি অস্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ ঘিরে ২০২০ সালের ১৫ জুন সংঘাত শুরু হয়েছিল ভারত ও চীনের মধ্যে। গালওয়ান নদীর উপর দিয়ে ২০২০ সালের মে মাসে ভারত সেই ব্রিজটি তৈরি করেছিল। এদিকে এর পাল্টা হিসেবে চীন ‘বাফার জোনে’ নির্মাণ কাজ শুরু করে।
এরপর ১৬ জুন ৮০ জন পিএলএ সৈন্য ভারতের নির্মিত সেতুটি ভেঙে ফেলতে আসে। সেই ব্রিজ রক্ষা করতে ১০০ ভারতীয় সেনাও এসেছিল সেখানে। পরে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বাফার জোন অতিক্রম করা সকল চীনা সেনা ফিরে যাবেন। তবে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখেনি চীন। এই আবহে ১৫ জুন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সেই এলাকা পরিদর্শন করতে যান কর্নেল সন্তোষবাবু ও তাঁর দল। এদিকে সেখানে কর্নেল কি ফ্যাবাওয়ের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিল চীনা সেনাও।
এমতাবস্থায়, ভারতীয় সেনাদের দেখেই আলোচনার বদলে নিজের দলকে আক্রমণের নির্দেশ দেন চীনা কর্নেল। পিএলএ হামলা করতেই কর্নেল কি ফ্যাবাওয়কে আটক করে ফেলে ভারতীয় সেনারা। কর্নেলকে বাঁচাতে পিএলএ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার চেন হংজুন এবং সৈনিক চেন জিয়াংরং ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন।
তখনই স্টিলের পাইপ, কাঁটা লাগানো লাঠি দিয়ে ভারতীয় জওয়ানদের বিরুদ্ধে হামলা চালায় চীনা সেনা। এই সময় পিএলএ-র জিয়াও সিউয়ান নামক এক সেনা পুরো ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করছিলেন। তবে সংঘাত বাড়তে থাকায় তিনিও লড়াই করতে নামেন।
পরে ভারতীয় জওয়ানের আঘাতে সে গুরুতর ভাবে জখম হয়। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপরই চীনা সেনা পালাতে শুরু করে। তাঁরা শীতবস্ত্র পড়ার সময়টুকু পায়নি। বরফ ঠান্ডা জলে নামতেই অনেকেই তলিয়ে যান। ঠান্ডায় মৃত্যু হয় অনেকের। ওয়াং ঝুওরানের নেতৃত্বে নদী পার করতে চাওয়া জওয়ানেদের ৩৮ জন তলিয়ে যান বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।
ভারত অবশ্য ওই সময়ই দাবি করেছিলো, গালওয়ানে সংঘর্ষে চীনের কমপক্ষে ৩০ সেনা নিহত হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত বেইজিং ওই সংঘর্ষে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। এর আগে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা গত ১০ ফেব্রুয়ারির এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, সীমান্ত বিরোধ নিয়ে কাশ্মীর সংলগ্ন পূর্ব লাদাখের ওই সংঘর্ষে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির কমপক্ষে ৪৫ সদস্য নিহত হয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সৈন্যদের হাতাহাতি ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ব্যাপক বিবাদপূর্ণ ওই সীমান্তে বিগত ৪৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অন্তত ২০ সদস্য নিহত হন। চিরবৈরী দুই প্রতিবেশি ভারত এবং চীন সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের অমীমাংসিত সীমান্ত নিয়ে ১৯৬২ সালে একবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক