ভারত সবসময়ই একটি উন্মুক্ত, স্বাধীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ও টেকসই ইন্দো-প্যাসিফিক চায় বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের সচিব (পূর্ব) সৌরভ কুমার। গত ০১ ফেব্রুয়ারী, মঙ্গলবার, গেটওয়ে হাউস রাউন্ড টেবিলে ‘ভারত: ইন্দো-প্যাসিফিকের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা অনুসরণ’ -শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির সমান্তরালে ইন্দো-প্যাসিফিকও সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন এই কূটনীতিক।
সৌরভ বলেন, “যদিও বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইন্দো-প্যাসিফিক শব্দটি বহুল ব্যবহৃত এবং সবাই স্বীয় স্বার্থে এটির ব্যবহার করছে, তথাপি বিশ্বের প্রাচীন সামুদ্রিক শক্তি হিসেবে ভারত সমুদ্রের সীমানার সাথে এবং তা অতিক্রমের সাথে ওতপ্রোতভাবে পরিচিত। ঐতিহাসিকভাবেই ভারতের অবস্থান পূর্ব ও পশ্চিমে বিস্তৃত। তবুও সাম্প্রতিকতার সাথে তাল মিলিয়ে ভারত সবসময়ই ইন্দো-প্যাসিফিককেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। আমাদের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিকও সমান গুরুত্বপূর্ণ।”
ভারতীয় এই কূটনীতিক আরও বলেন, “ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ন্যাভিগেশন এবং ওভার-ফ্লাইটের স্বাধীনতা, নিরবচ্ছিন্ন আইনী বাণিজ্য, সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং সকল পক্ষের মধ্যে সমতা থাকা উচিত। এখানে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি সবসময়ই ইতিবাচক। আমরা বরাবরই এই অঞ্চলে আসিয়ান কেন্দ্রীয়তা এবং ঐক্যের উপর জোর দিয়েছি।”
ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের এই সচিব জানান, “ইতোপূর্বে ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন তুলে ধরেছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে থাইল্যান্ডে পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে এই ভিশনের ৭ টি স্তম্ভ তুলে ধরে ইন্দো-প্যাসিফিক ওশান ইনিশিয়েটিভ ঘোষণা করেছিলেন। সেগুলো যথাক্রমে, সামুদ্রিক নিরাপত্তা বাস্তুসংস্থান এবং সম্পদ; প্রাসাদের ধারন ক্ষমতা; দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং ব্যবস্থাপনা; এস&টি এবং একাডেমিক সহযোগিতা; বাণিজ্য, সংযোগ এবং সামুদ্রিক পরিবহন।”
তাছাড়া, ২০১৫ সালের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারত মহাসাগরীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় SAGAR এর রূপ ব্যাখ্যা করেছিলেন বলেও জানান সৌরভ কুমার। সর্বোপরি, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাণিজ্য, পর্যটন এবং বিনিয়োগে বৃহত্তর সহযোগিতা; অবকাঠামো উন্নয়ন; সামুদ্রিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি; টেকসই মৎস্যসম্পদ; সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষা; এবং, মহাসাগর বা নীল অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়ন ভারতের কৌশলের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে জানান তিনি।
এসময়, গোটা অঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়নে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও জানান তিনি। সৌরভ কুমার বলেন, “ভারত একটি নেট নিরাপত্তা প্রদানকারী দেশ হয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা এবং ন্যাভিগেশনের স্বাধীনতা জোরদার করার চেষ্টা করেছে। এটি অঞ্চল জুড়ে অংশীদার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। গোটা অঞ্চলে প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ কোর্স এবং নিযুক্ত মোবাইল প্রশিক্ষণ দল সরবরাহ করেছি আমরা। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর তথ্য ফিউশন কেন্দ্র অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে সামুদ্রিক ডোমেন সচেতনতা বাড়িয়েছে।”
এছাড়াও, অঞ্চল জুড়ে ৩৫ দেশের নৌবাহিনীকে সাথে নিয়ে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম পরিচালনা কিংবা মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াকারী হিসাবে নিজেদেরকে তুলে আনা, উভয় ক্ষেত্রেই ভারত আজ বিশ্বের স্বীকৃতি আদায় করেছে বলে দাবি করেন সৌরভ। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক