ভারতের শক্তিশালী পুঁজির প্রবাহের ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের বাহ্যিক বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। ৩১ জানুয়ারী, সোমবার, সংসদে পেশ করা অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে এই দাবি করেন তিনি।
উক্ত সমীক্ষা জানাচ্ছে, চলতি বছরে ভারতের বাহ্যিক সেক্টরের স্থিতিস্থাপকতা দেশটির অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য শুভ লক্ষণের ইংগিত। তবে বিশ্বব্যাপী চলমান অস্থিরতা এবং মহামারীর পুনরুত্থান আগামী বছরও ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রতিফলিত হবে বলে জানিয়েছেন সীতারমন।
মোদী মন্ত্রীসভার অর্থমন্ত্রী জানান, বিশ্ববাজারে ভারতের আমদানী এবং রপ্তানি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মহামারী সত্ত্বেও এই পুনরুত্থান আটকানো যায়নি। তথাপি পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় এখনও অবধি ভারতের বাহ্যিক বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়তি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, ভারতের রপ্তানী বাজার হিসেবে এখনও যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত এবং চীন শীর্ষে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, আমদানীর ক্ষেত্রেও এই দেশগুলোই ভারতের সঙ্গে শীর্ষ সম্পর্ক ধরে রেখেছে। পর্যটন খাতে আয় তুলনামূলক অনেক কমে যাবার পরও শক্তিশালী সফটওয়্যার বাণিজ্য ও ব্যবসার কারণে অর্থনীতি মার খায়নি বলেই দেখা যাচ্ছে সমীক্ষায়।
এসব জানানোর পাশাপাশি মঙ্গলবার নিজের চতুর্থ বাজেটও উত্থাপন করেন সীতারামণ। মহাসড়ক নির্মাণ থেকে শুরু করে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠে প্রবৃদ্ধির চাকা সচল রাখার লক্ষ্য নিয়ে আসন্ন অর্থবছরের জন্য ৩৯ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন রুপির বাজেট প্রস্তাব করেছেন তিনি।
বাহ্যিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বলে ধারণা দেন সীতারামন। কিন্তু, আগামী অর্থবছরে এই হার থাকতে পারে ৮ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশের মধ্যে। মহামারীর ধাক্কায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন ৬ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। সে অবস্থা থেকে বর্তমান অর্থবছরে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত। “এ চিত্র অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং আমাদের দেশের ঘুরে দাঁড়ানোর দৃঢ় সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ,” বাজেট বক্তৃতায় বলেন সীতারামন।
তার এবারের বাজেটে মহাসড়ক নির্মাণ ও সম্প্রসারণে ২০০ বিলিয়ন রুপি ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। তিন বছরের মধ্যে ‘বন্দে ভারত’ কর্মসূচির অধীনে নতুন ৪০০ ট্রেন চালু, প্রতি মাসে ১০০ গতিশক্তি টার্মিনাল নির্মাণেরও প্রতিশ্রুতি এসেছে।
বড় ব্যয়ের বাজেট হলেও কর্পোরেট কর ১৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। জাতীয় পেনশন প্রকল্পে কর ছাড়, ডিজিটাল সম্পত্তির লেনদেনে ৩০ শতাংশে কর বসানোর ঘোষণাও এসেছে।
সীতারামনের বাজেট বক্তৃতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ঋণ সুবিধা এবং কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে ডিজিটাল মুদ্রা চালুর ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিনের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্মসংস্থানের উপর জোর দেন। পাশাপাশি ৬০ লক্ষ কর্মসংস্থানের ঘোষণা করে তিনি বলেন, “আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য পূরণের জন্য উৎপাদন সংক্রান্ত বিশেষ উৎসাহ বা ইনসেনটিভ প্রকল্পে দারুণ সাড়া মিলেছে। তার মাধ্যমে ৬০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে আশা করা হচ্ছে। সঙ্গে বাড়তি ৩০ লাখ কোটি উত্পাদন হবে।”
ইতোপূর্বে খবর এসেছিলো নয় মাসে ৩৫% বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতের সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানি। গত এপ্রিল-ডিসেম্বর নাগাদ প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থের সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানী করেছে দেশটি। যেখানে, বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে উক্ত সময়ে এই আয় ছিলো সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গত ৩০ জানুয়ারী, রবিবার, তথ্যটি নিশ্চিত করে একটি বার্তা দেয় ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রকাশিত নোটে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহামারীর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানী লব্ধ আয় বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অর্জিত সর্বকালের সর্বোচ্চ আয় ছাড়িয়ে যেতে প্রস্তুত। উল্লেখ্য, সেবার প্রায় ৭.০২ বিলিয়ন ডলারের সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানী করেছিলো ভারত।
জানা গিয়েছে, গত এপ্রিল-ডিসেম্বরে হওয়া রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানীর ক্ষেত্রে শীর্ষ গন্তব্য ছিলো ৪৪.৫% যুক্তরাষ্ট্রে, ১৫.৩% চীনে, জাপানে ৬.২%, ভিয়েতনামে ৪% এবং থাইল্যান্ডে প্রায় ৩%। মূলত হিমায়িত মাছ ও চিংড়ি রপ্তানী ছিলো পছন্দের শীর্ষে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক