ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনের পর থেকে এক যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনও সময়ে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে রাশিয়া, এমন আশঙ্কার কথা জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত ৩১ জানুয়ারী, সোমবার, ইউক্রেনের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে ইউক্রেন ইস্যু, সেই বিষয়ে আলোচনা হওয়ার নিয়ে একটি ভোটদানের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু এই ভোট থেকে বিরত থাকল ভারত।
মূলত, আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকলো ভারত। তবে ইউক্রেন সম্পর্কিত উত্তেজনা অবিলম্বে হ্রাস করার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে সমর্থন জানানোর কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত। আমেরিকা ও রাশিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ এবং গঠনমূলক কূটনৈতিক আলোচনার জন্য আবেদন করেছে ভারত।
বর্তমান চুক্তি বহাল রেখে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়ে ভারত জানিয়েছে, ইউক্রেনে বসবাসকারী ২০ হাজার ভারতীয়র নিরাপত্তাই ভারতের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই মুহূর্তে। এদিকে ভারত শান্তির বার্তা দিলেও নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেন ইস্যুতে পরদ চড়ে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে।
জানা গিয়েছে, ভারত ছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের আরও দুটি দেশ ইউক্রেন ইস্যুতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। কেনিয়া ও গ্যাবন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ইউক্রেন ইস্যুতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। তবে যে ১০টি দেশ এই ইস্যুতে ভোট দিয়েছে, তাদের মধ্যে রাশিয়া ও চীন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এদিকে আমেরিকা সহ আটটি দেশ প্রস্তাবনার পক্ষে ভোট দেয়।
মিন্সক চুক্তি ও নরম্যান্ডি ফরম্যাটে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে চলা আলোচনার পক্ষে সওয়াল করে জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি বলেন, “ভারতের স্বার্থ হল এমন একটি সমাধান খুঁজে বের করা যাতে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তেজনা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। সমস্ত দেশের বৈধ নিরাপত্তা স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এবং এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ করা উচিত।”
প্রসঙ্গত, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই ক্রমশ আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো হয়। মার্কিন মুলুকে আল-কায়দার ৯/১১ হামলার পর আরও কাছে আসে ভারত-আমেরিকা। বর্তমানে চীন ইস্যুতে ভারত-আমেরিকা একই মেরুতে হওয়ায় দুই দেশ বেশ কাছাকাছি এসেছে।
এই সময়কালে অবশ্য রাশিয়ার সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক বন্ধুত্বে’ চিড় ধরতে দেয়নি ভারত। তবে ইউক্রেন ইস্যুতে ভারত উভয় সঙ্কটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আপাতত শান্তি বজায় রেখে দুই পক্ষকেই যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার বার্তা দিলো ভারত।
খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক