করোনা মহামারী মোকাবেলায় ভারত নিজের নির্ধারিত টিকা দানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বলে সম্প্রতি একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার নিবন্ধে দাবি করা হয়েছিলো। এই প্রতিবেদনের তীব্র বিরোধীতা করে বিবৃতি দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে সম্পূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচিটি যথেষ্ট উন্নত। এমনকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম জনসংখ্যা বিশিষ্ট পশ্চিমী দেশগুলোর তুলনায় ভারতে টিকাদান সবচেয়ে সফল। বিশ্বের বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম ভারতে পরিচালিত হচ্ছে।”
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “২০২১ সালের ১৬ই জানুয়ারি, জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত যোগ্য নাগরিকদের ৯০ শতাংশ প্রথম ডোজ এবং ৬৫ শতাংশের বেশি দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছে। এই অভিযানে ভারত বিশ্বে বেশ কয়েকটি অভূতপূর্ব মাইলফলন অর্জন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো টিকাদান পর্ব শুরু হওয়ার ৯ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১০০ কোটি ডোজ দেওয়ার লক্ষ্যপূরণ, একদিনে ২ কোটি ৫১ লক্ষেরও বেশি ডোজ প্রদান এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিদিন ১ কোটি ডোজ দেওয়া।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, “অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ভারতের সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহে ৯৩.৭ কোটি যোগ্য প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের কোভিড টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। আমেরিকায় মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭৩.২ শতাংশ, ব্রিটেনে ৭৫.৯ শতাংশ, ফ্রান্সে ৭৮.৩ শতাংশ এবং স্পেনে ৮৪.৭ শতাংশ যোগ্য ব্যক্তিকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ভারতে ইতিমধ্যেই যোগ্য জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ ব্যক্তিকেই কোভিড-১৯ –এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, আমেরিকায় মোট জনসংখ্যার ৬১.৫ শতাংশ, ব্রিটেনে ৬৯.৫ শতাংশ, ফ্রান্সে ৭৩.২ শতাংশ এবং স্পেনে ৮১ শতাংশ যোগ্য ব্যক্তিকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। ভারতে যোগ্য জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশেরও বেশি ব্যক্তিকে কোভিড-১৯ –এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে।”
বিবৃতিতে আরও যোগ করা হয়েছে, “দেশে ১১টিরও বেশি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ইতিমধ্যেই ১০০ শতাংশ প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এমনকি, তিনটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ –এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ১০০ শতাংশ প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই একাধিক রাজ্য প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে ১০০ শতাংশ সম্পূর্ণ টিকাদান পর্বের সাফল্য অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়, “২০২১ সালের ০৩ নভেম্বর দেশব্যাপী কোভিড-১৯ টিকাদান পর্বের অঙ্গ হিসেবে ‘হর ঘর দস্তক’ প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে। ঘরে ঘরে পৌঁছানোর মাধ্যমে কোনো যোগ্য ব্যক্তি এবং কোনো সুবিধাভোগী যাতে টিকা গ্রহণ থেকে বাদ না পড়েন, তার জন্য এই সচেতনতামূলক টিকাদান অভিযান চালানো হচ্ছে। এই প্রচারাভিযানের ফলে টিকাদান অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে।”
তাছাড়া, গত বছরের শেষে ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ –এর ঊর্ধ্বমুখী গতির কথা মাথায় রেখে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তকরণের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, ভারতের ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অন ইমিউনাইজেশন এবং স্ট্যান্ডিং টেকনিক্যাল সায়েন্টিফিক কমিটি চলতি বছরের ০৩ জানুয়ারি থেকে ১৫ – ১৮ বছর বয়সীদের টিকাদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একই সঙ্গে, কোভিড-১৯ –এর বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইকে আরও জোরদার করে তুলতে ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক গত বছরের ডিসেম্বরে দুটি অতিরিক্ত টিকাকে অনুমোদন দিয়েছে। বায়োলজিক্যাল-ই –এর করবিভ্যাক্স টিকা এবং এসআইআই-এর কোভোভ্যাক্স টিকা দুটিকে জরুরি পরিস্থিতিতে সীমিত ব্যবহারের ওপর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে ভারতে জরুরি পরিস্থিতিতে মোট ৮টি টিকার সীমিত ব্যবহারের ছাড়পত্র মিলেছে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক