চলতি বছর মহা আড়ম্বরের উদযাপন করা হচ্ছে ভারত-ইসরায়েল কূটনৈতিক সম্পর্কের ত্রিশ বছর। দ্বিপাক্ষিক ঘনিষ্ঠতার তিন দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে সম্পর্কের মূল দিকগুলো তুলে ধরে একটি যৌথ নিবন্ধ লিখেছেন দেশ দুটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং ইয়ার ল্যাপিড। সম্প্রতি ভারতের বহুল প্রচারিত টাইমস অব ইন্ডিয়াতে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়।
এতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এবং ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাপিড লিখেছেন, “গল্পকারদের ভাষ্যমতে আমরা দুটো পুরোনো সভ্যতার অংশ। আবার বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে আমরা অপেক্ষাকৃত তরুণ, বলিষ্ঠ এবং উদ্যমী গণতন্ত্রও বটে! বিশ্বের যেকোনো শক্তি ও সংস্কৃতির সঙ্গে মেশার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তথাপি কৃষি ও জল ব্যবস্থাপনা থেকে আরম্ভ করে উদ্ভাবন এবং নিরাপত্তা পর্যন্ত সকল সম্ভাব্য খাতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রতা রয়েছে। আমরা একত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ভাগাভাগি করে থাকি। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথেও কূটনৈতিক সংলাপে অংশীদারিত্বের ভূমিকা নেয় আমাদের দেশ দুটো।”
উক্ত নিবন্ধে কৃষি খাতকে ভারত ও ইসরায়েলের সম্পর্ক ও সহযোগিতার অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন উভয় নেতা। তাঁরা লিখেছেন, “ইসরায়েলের শুষ্ক জলবায়ু এবং জলের উৎসের অভাব এটিকে কৃষি এবং জল ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় উদ্ভাবনী সমাধান তৈরীর দিকে নিয়ে এসেছে। ভারতের জনসংখ্যার আকার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির ফলে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। তাই আমাদের মধ্যকার কৃষি সহযোগিতা পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে এগোচ্ছে এবং এটি অভূতপূর্ব। আমরা বর্তমানে একত্রে ২৯ টি ‘ইন্দো-ইসরায়েল সেন্টার অফ এক্সিলেন্স’ পরিচালনা করছি। এই কোম্পানিগুলো শস্য বৈচিত্র্য, সৌর শক্তি, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছ জল ব্যবহারে নিযুক্ত রয়েছে।”
নিবন্ধটিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিদ্যমান অন্যান্য খাত নিয়েও আলোচনা করেছেন দুই নেতা। তাঁরা লিখেছেন, “আমাদের সম্পর্কের অন্যতম উপাদান নিরাপত্তা। আমাদের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা ও গভীর অংশীদারিত্বের ফলে এই খাতে আমাদের জোরালো সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। প্রায়শই আমরা যৌথ মহড়াতেও অংশ নিয়ে থাকি। তাছাড়া, সন্ত্রাসবাদ দমনে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।”
দেশ দুটোর মধ্যকার আর্থিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতায় বিশেষ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে উল্লেখ করে উভয়ে লিখেছেন, “ভারত ও ইসরায়েল এঁকে অন্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। আদর্শ জুটি হিসেবে পৃথিবীর বুকে রয়েছি আমরা। তরুণ ভারতীয়দের শিল্প সক্ষমতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং ইসরায়েলি তরুণদের দক্ষতা ও প্রযুক্তি জ্ঞানের সংমিশ্রণে এক অসাধারণ সম্ভাবনাময় অঞ্চল তৈরীতে বদ্ধপরিকর আমরা। স্টার্ট-আপ, উদ্যোক্তা, আইটি বিশেষজ্ঞদের মেলবন্ধনে ভারত ইসরায়েল সম্পর্ক হয়ে উঠেছে অনন্য।”
তাছাড়া, স্বাস্থ্যসেবা, জ্বালানী, নবায়নযোগ্য শক্তি, যোগাযোগ খাত এবং উন্নত প্রযুক্তি খাতে ইসরায়েল ও ভারতের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান বলে নিবন্ধটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জয়শঙ্কর ও ল্যাপিড লিখেছেন, “দেশ দুটোর অংশীদারিত্বের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে একটি কৌশলগত পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, যা ইতিবাচক অর্থনৈতিক ফল দেখাতে আরম্ভ করেছে। ভারত, ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিলে একত্রে অনেক যৌথ প্রকল্পে হাত দিয়েছি। আমরা ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়াচ্ছি। এক নতুন কোয়াড গ্রুপের তৈরী করেছি আমরা।”
নিবন্ধে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সকল বিষয়াদির পাশাপাশি গত নভেম্বরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের বৈঠকের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। দুজনের সাক্ষাতের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে শীঘ্রই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা শুরু করার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছেন দুই নেতা। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক