ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য ২০২২ সালের শুরু থেকে কোয়াড কাঠামোর অধীনে ভ্যাকসিন বিতরণ করবে ভারত। গত ২০ ডিসেম্বর, সোমবার, ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরামের (ইউএসআইএসপিএফ) এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
তাছাড়া, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই কোয়াড কাঠামোর অধীনে নিজেদের সম্পৃক্ততা বাঁড়াতে আগ্রহী বলে মন্তব্য করেছেন অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক। তিনি বলেন, “চলতি বছরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং সমসাময়িক বাস্তবতা বিবেচনায় বেশ কয়েকটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছি আমরা। একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং স্থিতিশীল ইন্দো-প্যাসিফিক গড়তে আমরা বদ্ধপরিকর। তাই কোয়াড কাঠামোর অধীনে কাজ বাস্তবায়নেও আগ্রহী আমরা।”
২০২১ সালকে ভারত ও মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য চমৎকার একটি বছর হিসেবে আখ্যায়িত করে শ্রিংলা বলেন, “বছরজুড়ে আমরা বিভিন্ন সংলাপ, ব্যস্ততা, সাক্ষাৎ অব্যহত রেখেছিলাম। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মোদীর নিয়মিত কথোপকথন, বৈঠক এবং সেপ্টেম্বরে তাঁর মার্কিন সফর আমাদের জন্য সোনায় সোহাগা বিবেচিত হয়েছে।”
নতুন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক পরিবর্তনের দশকে প্রবেশ করছে উল্লেখ করে শ্রিংলা আরও বলেন, “বাণিজ্য, প্রতিভা, প্রযুক্তি এবং জলবায়ু আমাদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের পরিধি প্রসারিত করতে বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুও প্রভাবক। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের পরিস্থিতি, করোনার পরিস্থিতি, উদীয়মান প্রযুক্তি, জলবায়ু, মহাকাশ এবং স্বাস্থ্যসেবা খাত অন্যতম।”
এসময়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ এবং টেকসই উন্নয়ন নিয়ে মোদী ও বাইডেনের আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি। শ্রিংলা বলেন, “জি-২০ এবং কোপ-২৬ শীর্ষ সম্মেলনের সময় মিলিত হয়েছিলেন আমাদের দুই শীর্ষ নেতৃত্ব। সেসময় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন দুজনে।”
এসবের পাশাপাশি চলতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়া মন্ত্রী পর্যায়ের বিভিন্ন বৈঠক, অফিশিয়াল পর্যায়ের সংলাপ, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কর্মকান্ড নিয়েও নিজ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন শ্রিংলা। তিনি বলেন, “এই মিটিং গুলো আমাদের ভবিষ্যত রোডম্যাপ তৈরী করতে এবং কাজের জায়গা গুলো চিহ্নিত করতে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।”
বক্তব্যের এক পর্যায়ে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়েও আলোচনা করেন অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক। তিনি বলেন, “এ বছর দ্বিপাক্ষিক পণ্যদ্রব্য বাণিজ্যে এক নতুন প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। গতবছরের তুলনায় আমাদের এবছর প্রায় ৫০ শতাংশ বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে আমাদের। তাছাড়া, বাণিজ্য নীতি ফোরামও সম্প্রতি বেশ কিছু মিটিং করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে ভারতেও এসেছিলেন মার্কিন বিশেষ বাণিজ্য দূত এবং তিনি আমাদের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন।”
২০২২ সালের মাঝ নাগাদ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও করতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন শ্রিংলা। পাশাপাশি ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া, যেমন বীমায় এফডিআই-এর উদারীকরণ, আয়করের পূর্ববর্তী বিধান বাদ দেওয়ার বিষয়টি অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ভারতীয় পণ্য রপ্তানীর সবচেয়ে বড় গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তবে সম্প্রতি চীনও প্রতিযোগিতার দৌড়ে এগিয়ে এসেছে। ভারত যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানি করেছে, চীন ভারত থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি পেয়েছে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিলে-আগস্ট মাস সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল, তবে দ্রুতই চীন জায়গাটি দখলে নেয়। তাছাড়া, ২০২০-২১ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চীন ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
এসবের প্রেক্ষিতেই ভারতের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে শুরু থেকেই উচ্চ শুল্ক সহ ভারতের বাজার বাধার বিষয়টি উত্থাপন করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতীয় নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা অ-স্বচ্ছ এবং অপ্রত্যাশিত বলে অভিযোগ দেশটির। একই অভিযোগ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও নিক্ষেপ করছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এজেন্সি অনুসারে, মার্কিন রপ্তানিকারক এবং বিনিয়োগকারীরা ভারতে অ-স্বচ্ছ এবং প্রায়শই অপ্রত্যাশিত নিয়ন্ত্রক এবং শুল্ক ব্যবস্থার সম্মুখীন হয়। এর কারণ হিসেবে তাঁরা চিহ্নিত করেছেন, কিছু পণ্য ও পরিষেবার ভারতীয় বাজারে সীমিত অ্যাক্সেস রয়েছে। তবে বিদ্যমান সকল অমীমাংসিত ইস্যুর শীঘ্রই সমাধান ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন শ্রিংলা। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক