পশ্চিম এশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি সংশ্লিষ্ট খাত সমূহ, অর্থনৈতিক কর্মসূচি এবং সার্বিক উন্নতি সাধনে একযোগে কাজ করবে ভারত-ইসরায়েল-আমিরাত-যুক্তরাষ্ট্র। গত ১৩ ডিসেম্বর, সোমবার, দুবাইতে ইন্ডিয়া গ্লোবাল ফোরাম, ২০২১ এমনটিই বললেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
নিজ বক্তৃতায় শ্রিংলা বলেন, “অংশীদারিত্বের নতুন এবং উদীয়মান ক্ষেত্র রয়েছে, যা একুশ শতকের ভারত-ইউএই সম্পর্ককে ভিত্তি করে দিতে পারে। স্টার্টআপ এবং প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে ভারতীয় সক্ষমতা এবং বাজারকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগের সাথে একত্রিত করা যেতে পারে।”
অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক আরও বলেন, “ভারত, ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে। আমরা প্রযুক্তি, দক্ষতা, অর্থায়ন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষমতার মধ্যে সমন্বয় করতে চাচ্ছি। আমরা স্বীয় উন্নয়নের পাশাপাশি একযোগে বৈশ্বিক সমৃদ্ধির দিকে এগোতে চাই। ভারত যে ধরণের পরিষেবা তৈরী করে, তা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে আমাদের উপস্থিতি বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।”
এসময়, জ্বালানি, খাদ্য, জল, স্বাস্থ্য, পরিবহন এবং মহাকাশ খাত গুলোকে এই চারটি রাষ্ট্রের সহযোগিতার সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি। আগামী বছর মার্চ মাসে এই রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে এই খাত সংশ্লিষ্ট প্রকল্প গুলো চিহ্নিত করা হবে বলে জানান শ্রিংলা।
এসবের পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর, গ্রিন হাইড্রোজেন, ফুড সিকিউরিটি, এবং ৫জি সেক্টরকে শিল্প সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনার দ্বার হিসেবে উল্লেখ করেন শ্রিংলা। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের মতে, “ভারত-দুবাইয়ের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী সাড়ে তিন মিলিয়ন ভারতীয়। এটি বিদেশে একক বৃহত্তম ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে।”
এছাড়া, স্বাস্থ্যসেবা এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতকে দু দেশের সম্পর্কের প্রধান অর্থনৈতিক চালক হিসেবে আখ্যা দেন শ্রিংলা। তিনি বলেন, “মহামারীর পরে ভারত বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবা সক্ষমতার অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ, ভারত বর্তমানে স্থিতিশীল সরবরাহ চেইনের অন্যতম উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে।”
পাশাপাশি ভারত মহামারী চলাকালেও আর্ত মানবতার সেবায় একটুও খামতি রাখেনি বলে মন্তব্য করেন শ্রিংলা। নিজের অফুরান চাহিদা সত্ত্বেও বিশ্বের সকল পিছিয়ে পড়া মানুষের সুবিধার জন্য ভ্যাকসিন এবং গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ পণ্য রপ্তানি করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একই সঙ্গে, ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম হিসেবে আখ্যায়িত করেন শ্রিংলা। ভারতের দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে আগামীতেও এই ধারা অব্যহত থাকবে বলে অভিমত দেন তিনি।
তাছাড়া, ভারতীয় অর্থনীতি মহামারীর প্রকোপ থেকে পুনরায় নিজে ট্র্যাকে ফিরছে বলে জানান এই কূটনীতিক। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভারতের জিডিপির প্রায় ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আরও বিদেশী বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা পেলে ভারতীয় অর্থনীতি পুনরায় আপন গতিতে ফিরে আসবে এবং সবার জন্য উপকারী বিবেচিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এসময়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানী লক্ষ্য অর্জনের কথা পুনর্ব্যাক্ত করেন শ্রিংলা। আমিরাত সহ পারস্য উপসাগরীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়েও অগ্রগতি হচ্ছে বলে জানান তিনি। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক