ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি জয় পেয়েছে ভারত। এবার পাকিস্তান-প্ররোচিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান পরোক্ষ যুদ্ধেও ভারত বিজয়ী হবে। ১২ ডিসেম্বর, রবিবার, তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ এটাই দেখিয়ে দিয়েছে যে, বৃটেনের শাসন থেকে স্বাধীনতাকালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ ছিল এক ঐতিহাসিক ভুল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বিজয় উদ্যাপনের ‘স্বর্ণিম বিজয় পর্ব’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে রাজনাথ সিং আরও বলেন, সন্ত্রাস ও অন্য ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে ভারতকে ভাঙতে চায় পাকিস্তান। কিন্তু ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের সেনাবাহিনী তাদের সব রকম পরিকল্পনাকে পরাজিত করেছিল। বর্তমানে তারা সন্ত্রাসের মূলোৎপাটনের জন্য কাজ করছে। রাজনাথ সিং বলেন, আমরা সরাসরি যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি।
আমি পূর্ণ নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, পরোক্ষ যুদ্ধেও আমরা বিজয়ী হবো। তিনি জানান ‘স্বর্ণিম বিজয় পর্ব’ আরও জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল ভারত সরকার। কিন্তু যেহেতু দেশের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাওয়াত, তার স্ত্রী ও সশস্ত্র বাহিনীর আরও ১১ জন অকালে নিহত হয়েছেন, তাই এই অনুষ্ঠান সাধারণভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে নিহত তাদের সবাইকে আমি স্মরণ করছি। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, বিপিন রাওয়াত, তার স্ত্রী মধুলিকা ও সশস্ত্র বাহিনীর ১১ সদস্যকে নিয়ে একটি সামরিক হেলিকপ্টার গত ৮ই ডিসেম্বর তামিলনাড়ুর কুন্নুরে বিধ্বস্ত হয়। এতে গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংই শুধু রক্ষা পেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে রাজনাথ সিং বলেন, ভারতীয় বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংয়ের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ব্যাঙ্গালুরুতে কমান্ড হাসপাতালে। আমি তার সঙ্গে অব্যাহতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। তার পিতার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি আমরা। আমরা সবাই প্রার্থনা করি, তিনি যেন শিগগিরই হাসপাতাল থেকে মুক্তি পান। সুস্থ হয়ে কাজে ফিরতে পারেন। তিনি আরও বলেন, জেনারেল রাওয়াতের মৃত্যুতে ভারত এক সাহসী যোদ্ধা, একজন দক্ষ উপদেষ্টা এবং একজন প্রাণবন্ত মানুষকে হারিয়েছে।
রাজনাথ সিং বলেন, এই ‘স্বর্ণিম বিজয় পর্ব’ উদ্যাপন নিয়ে তিনি (বিপিন রাওয়াত) ছিলেন ভীষণ উৎসাহী। এই অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে আমার সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করেছেন। এ জন্যই আমি তাকে খুব মিস করছি।
এদিন সন্ধ্যায় ‘ওয়াল অব ফেম-১৯৭১ ইন্দো-পাক ওয়্যার’-এর উদ্বোধন করেন মন্ত্রী রাজনাথ সিং। অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত সামরিক সরঞ্জাম পরিদর্শন করেন তিনি। বলেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ভারত যে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করেছে তা সব সময় প্রতিটি ভারতীয়র কাছে গর্বের বিষয় হয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বর্ণিম বিজয় বর্ষ’ উদ্যাপন উপলক্ষে সারা দেশে গত এক বছরে অনেক ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। তার ভাষায়, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ শুধু পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধই ছিল না। একই সঙ্গে সেই যুদ্ধ ছিল অবিচার ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে। এটা শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বিজয় ছিল না। একই সঙ্গে এ বিজয় ছিল অবিচারের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের যুদ্ধ।
তিনি বলেন, ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, ন্যায়পরায়ণতা ও নীতিনৈতিকতার এক চমৎকার উদাহরণ এই যুদ্ধ। বিশ্বের প্রতিটি মানুষ তা জানে।
রাজনাথ সিং বলেন, ভারত কখনো অন্যদেশে আক্রমণ করেনি। কখনো অন্য দেশের এক ইঞ্চি জায়গাও দখল করেনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রীতি প্রতিষ্ঠায় ভারত সহায়তা করেছে। গত ৫০ বছরে আমরা এজন্যই বাস্তবে সহায়তা করেছি। ফলে দেশটি বাস্তবেই দ্রুত উন্নয়নের সড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পুরো বিশ্বের জন্য একটি অনুপ্রেরণার বিষয় হলো বাংলাদেশ।
রাজনাথ সিং বলেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ আরও দেখিয়ে দিয়েছে যে, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ ছিল ঐতিহাসিক একটি ভুল। পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল একটি ধর্মের নামে। কিন্তু তারা এক থাকতে পারেনি। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর থেকে ভারতের বিরুদ্ধে নিয়মিত পরোক্ষ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। ভারতবিরোধী মনোভাব পাকিস্তানের গভীরে প্রোথিত। তারা ক্ষেপণাস্ত্রের যে নাম দিয়েছে, তাতেই এ বিষয়টি দেখা যায়।
তিনি বলেন, ভারতে আগ্রাসন চালিয়েছিলেন এমন নিষ্ঠুর ব্যক্তিদের নামে ক্ষেপণাস্ত্রের নাম দিয়েছে পাকিস্তান। এর মধ্যে আছে গৌরি, গজনবি এবং আবদালি। পাকিস্তান সরকারের কাছে প্রশ্ন করা উচিত যে, এসব আগ্রাসনকারী তো পাকিস্তানের ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসকারী জনগণের ওপর হামলা চালিয়েছিল। তিনি বলেন, অন্যদিকে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের নামকরণ করা হয়েছে আকাশ, পৃথিবী এবং অগ্নি। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক