আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের প্রাক্বালে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে পাক বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা কৃত নির্মম গণহত্যার কথা স্মরণ করেছেন জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি। গত ০৭ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উদ্বাস্তু ও শরণার্থী রক্ষা বিষয়ে ভারতের অবস্থান নিয়ে কথা বলেন তিনি।
বক্তব্য প্রদানকালে তিরুমূর্তি বলেন, “উদ্বাস্তু ও শরণার্থী ইস্যুতে ভারতের অবস্থান সবসময়ই মানবিক, পরিশীলিত এবং সহানুভূতিশীল। ১৯৭১ এ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশে পাকিস্তান কর্তৃক পরিচালিত নির্মম গণহত্যার সময় ভারত শরণার্থী আশ্রয়ের ক্ষেত্রে যে অবস্থান নিয়েছিলো, সেটি অবিস্মরণীয় এবং কিংবদন্তীতূল্য। লক্ষ-কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দানের মাধ্যমে তাঁদের জীবন রক্ষা করেছিলো ভারত।”
তিরুমূর্তি আরও বলেন, “প্রতিবেশী সকল দেশ থেকেই আগত শরণার্থীকে ভারত সর্বদা অতিথি রূপে গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও তিব্বত, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও মায়ানমার থেকে আসা সকল ভাই-বোনদেরই আমরা সহানুভূতির সাথে গ্রহণ করেছি।”
এছাড়া, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কর্মকান্ডে ভারত অগ্রপথিক ও পথ প্রদর্শক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি এসব শরণার্থীদের নিজ ভূখন্ড ছাড়ার পেছনে দায়ীদের বর্তমান আইনের মানদন্ডে শাস্তি প্রদানের আহবানও জানান তিনি।
বর্তমানেও ভারত বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আতিথেয়তা করছে দাবি করে তিরুমূর্তি বলেন, “ভারত সর্বদাই আন্তর্জাতিক আইনের নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সমর্থন ব্যক্ত করেছে। উদ্বাস্তুদের রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি শরণার্থীদের তাঁদের নিজ দেশে মর্যাদাপূর্ণ, নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক বলেন, “জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী বর্তমান উদ্বাস্তু এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তির সংখ্যা ৯১ মিলিয়নেরও বেশি লোকে পৌঁছেছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে ব্যাপক উদ্বেগের। কিন্তু শরণার্থীদের সহযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের উদ্যোগসমূহ প্রশংসার যোগ্য।”
এসময়, শরণার্থী ইস্যুর সমাধানে পাঁচটি বিষয়ে আলোকপাত করেন তিরুমূর্তি। সেগুলো যথাক্রমে,
Ø প্রথমত, সশস্ত্র সংঘাত প্রতিরোধের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করা। টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসনের মাধ্যমে শান্তি স্থাপন এবং টেকসই জনগণকে তাদের মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য না করা।
Ø দ্বিতীয়ত, আইডিপিদের সুরক্ষা এবং সহায়তা করার প্রাথমিক দায়িত্ব পূরণ করা। এই দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশের প্রশাসনের।
Ø তৃতীয়ত, উদ্বাস্তু সমস্যা একটি বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ এবং কোনো দেশ একাই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তাই একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপ নেয়া।
Ø চতুর্থত, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে শরণার্থী সঙ্কট মোকাবেলায় মানবতা, নিরপেক্ষতা এবং নৈতিক নীতি সমূহ অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে।
Ø পঞ্চম, কোভিড-১৯ মহামারী বিদ্যমান মানবিক চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শরণার্থীরা এই সংকটের আর্থ-সামাজিক প্রভাবের মুখোমুখী হয়ে পড়েছে, তাই তাঁদের প্রতি অতি অবশ্যই মানবিক সহায়তার হাত বাড়াতে হবে। শরণার্থীদের অ-বৈষম্যমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে।
সর্বোপরি, কল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে গোটা বিশ্বব্যাপী মানবিক প্রচেষ্টা অব্যহত রাখার বিষয়ে আহবান জানান তিনি। প্রসঙ্গত, নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক