একটি উন্মুক্ত, অন্তর্ভূক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়তে শক্তিশালী ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্ব দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। পাশাপাশি অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত নিবিড় সম্পর্কযুক্ত দেশগুলোর নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থকে এগিয়ে নিতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। গত ০২ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার, পঞ্চম ভারত-মার্কিন ফোরামে বক্তৃতা প্রদানকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে ভারত-মার্কিন ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে আখ্যা দেন শ্রিংলা। গোটা এলাকাজুড়ে আন্তর্জাতিক আইনের বাস্তবায়ন, নৌ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখা এবং বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
তাছাড়া, গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার সুবাদেই যে কূটনৈতিক স্তরে দৃঢ় হচ্ছে ভারত-মার্কিন কৌশলগত সম্পর্ক, সে কথা বলতেও ভুলেননি তিনি। শ্রিংলা বলেন, “আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে। কৌশলগত অভিন্নতা এবং ঐক্যবদ্ধ লক্ষ্য আমাদের যাত্রাকে সহজ করছে। আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বও সম্পর্ক মজবুতের পক্ষে। তাঁরা দীর্ঘমেয়াদী রোডম্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিশ্বাসী।”
শ্রিংলা বলেন, “সাম্প্রতিককালে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক একটি বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তিগত সহায়তা এখানে মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। একই সঙ্গে, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, পরিষেবা, শক্তি, স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি খাতে সম্পর্ক জোরদারে নিয়মিত সংলাপ আয়োজন হচ্ছে। সম্পর্কের গতি ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে।”
ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি সাধুবাদ জানান তিনি। পাশাপাশি মহামারী থেকে উত্তরণে ও অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ফেরাতে সমসাময়িক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছে বলেও জানান এই অভিজ্ঞ কূটনীতিক।
শ্রিংলা বলেন, “ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তি, অর্থনীতি, উৎপাদন এবং সরবরাহ চেইনের মতো বিষয়গুলোতে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। বিদ্যুৎ, এডটেক, ফিনটেক, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং অন্যান্য সহযোগিতার ক্ষেত্র বিকশিত করতে হবে।”
এসময়, ভারত-মার্কিন সম্পর্কোন্নয়নের প্রচেষ্টা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং জো বাইডেনের নিরলস চেষ্টার বিবরণ তুলে ধরেন পররাষ্ট্র সচিব। সর্বশেষ মোদী-বাইডেন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনের বিষয়েও আলোচনা করেন তিনি।
এছাড়াও, সম্প্রতি শেষ হওয়া জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন, কোপ-২৬ সম্মেলন, ভ্যাকসিন কূটনীতি এবং জলবায়ু সহযোগিতার আদ্যোপান্ত নিয়েও আলোচনা করেন শ্রিংলা। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ এসব উদ্যোগে গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহের জরুরী বাস্তবায়নের উপর জোর দেন তিনি।
সর্বোপরি, বিশ্ব শান্তি নিশ্চায়নে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার আহবান ও অঙ্গীকার জানিয়ে নিজ বক্তব্য শেষ করেন শ্রিংলা। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক