করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে শ্রম অভিবাসীদের কল্যাণে ভারত সরকার সম্ভাব্য সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের সচিব (সিপিভি এবং ওআইএ) সঞ্জয় ভট্টাচার্য। গত ৩০ নভেম্বর, মঙ্গলবার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ১১২ তম অধিবেশনে ‘সীমান্ত, অভিবাসন এবং গতিশীলতা’ -শীর্ষক আয়োজনে করোনা মহামারীর প্রভাব, এর থেকে লব্ধ শিক্ষা ও ভবিষ্যত করণীয় সম্পর্কে আলোচনাকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সঞ্জয় বলেন, “মহামারীর অভিজ্ঞতা স্পষ্ট করেছে যে অভিবাসন ইকোসিস্টেমে পারস্পরিক বৃহত্তর সমঝোতা ও সহযোগিতা কতোটা জরুরী! উপসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের ঐতিহ্যবাহী গন্তব্যগুলোর জন্য আরও স্থিতিশীল এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিলো। সরকার নতুন প্রজন্মের শ্রম চুক্তির জন্য আলোচনায় নিযুক্ত এবং আমাদের জিসিসি অংশীদারদের সাথে ই-মাইগ্রেট প্ল্যাটফর্মের একীকরণের কাজ শুরু করেছে। এটি স্বচ্ছতাকে ধারণ করবে, ভবিষ্যতের অভিবাসীদের ক্ষমতায়ন করবে, অভিবাসন প্রবাহকে স্থিতিশীল করবে এবং নিরাপদ ও আইনি অভিবাসনকে লালন করবে।”
আরও নতুন মাইগ্রেশন করিডোর তৈরী করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উন্নত অভিবাসন ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সরকার নতুন এবং উদীয়মান গন্তব্যের সাথে শ্রম অভিবাসন এবং পেশাদারদের গতিশীলতার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিযুক্ত এবং প্রতিষ্ঠা করেছে।”
অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক বলেন, “মাইগ্রেশন এবং গতিশীলতার উপর ভারত-ইইউ কমন এজেন্ডা আমাদেরকে ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল সহ বেশ কয়েকটি ইইউ দেশের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করছে। অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের আলোচনার পথ সুপ্রশস্থ হয়েছে।”
এসময় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক মাইগ্রেশন এবং মোবিলিটি পার্টনারশিপ চুক্তিটি দক্ষতা এবং প্রতিভার সুশৃঙ্খল গতিশীলতাকে উত্সাহিত করেছে বলে অভিমত দেন সঞ্জয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “জাপানের সাথে সুনির্দিষ্ট দক্ষ কর্মীদের সহযোগিতার স্মারক একটি নিয়ন্ত্রিত এবং নিরাপদ পদ্ধতিতে ১৪ টি নির্দিষ্ট সেক্টরে জাপানে ভারতীয় দক্ষ কর্মীদের পাঠানো এবং গ্রহণ করার জন্য একটি প্রক্রিয়া প্রদান করেছে।”
আলোচনাকালে মহামারীতে আটকে পড়া বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত ভারতীয় শ্রমজীবীদের বিষয়ে সরকারের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন সঞ্জয়। তিনি বলেন, “সরকার সম্ভাব্য সকল ধরণের সহযোগিতা আটকে পড়া অভিবাসী কর্মীদের দিয়েছে। ভুলে যাবেন না, সরকার তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে গত বছরের ০৭ মে থেকে ‘বন্দে ভারত মিশন’ আয়োজন করেছিলো।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের দূতাবাসগুলো দুর্দশাগ্রস্ত প্রত্যেক ভারতীয়কে সহায়তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার এবং সম্প্রদায় সংস্থাগুলোর সাথে একযোগে কাজ করেছে। এটি ছিল ভারত সরকার কর্তৃক করা সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে জটিলতম কাজ।”
বিদেশে কর্মরত ২৫ লাখেরও বেশি ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং বিদেশে থাকা পৌনে তিন লাখের বেশি ভারতীয়কে নিয়মিত সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান সঞ্জয়।
আলোচনাকালে ভারত কর্তৃক আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) পূর্ণ সদস্যপদ প্রাপ্তির স্মৃতিমন্থন করেন সঞ্জয়। তাছাড়া, করোনাকালে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র কীভাবে অভিবাসীদের রক্ষার চেষ্টা করেছে, সেটিও ব্যক্ত করেন তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, “বৈশ্বিক কর্মসূচির অন্যতম প্রধান এজেন্ডা ছিলো অভিবাসীদের উপর কীভাবে করোনার গভীর এবং বিরূপ প্রভাব ঠেকানো যায়!”
ভারত সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) কাউন্সিলের সঙ্গে নব উদ্যমে কাজ শুরু করেছে বলেও জানান সঞ্জয়। অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক কর্মকর্তা বলেন, “বহুপাক্ষিক ট্র্যাক ছাড়াও ভারত আইওএম সমর্থিত বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উন্নতিকল্পে ইতোমধ্যে অংশ নিয়েছে। যেমনঃ কলম্বো প্রক্রিয়া, আবুধাবী প্রক্রিয়া এবং বুদাপেস্ট প্রক্রিয়া।”
পাশাপাশি অভিবাসন ও অভিবাসী ইস্যুতে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে হওয়া কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেন সঞ্জয়। একই সঙ্গে, অনিয়মিত অভিবাসন, চোরাচালান ও পাচার মোকাবেলার উদ্দেশ্যে ভারত ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুমোদন করেছে বলে জানান তিনি।
ভারতের অভ্যন্তরে ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে অভিবাসনের প্রক্রিয়াকে সহজতর করা, পাসপোর্ট পরিষেবার সরলীকরণ এবং ডিজিটালাইজেশন, ইমিগ্রেট প্ল্যাটফর্মের আপগ্রেডিং – বৈদেশিক কর্মসংস্থানের তথ্যের ওয়ান স্টপ উৎস, অভিযোগ নিষ্পত্তিকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক