‘এক্সপো ২০২০ দুবাই’ -এর সবচেয়ে আইকনিক প্যাভিলিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলো ‘ইন্ডিয়া প্যাভিলিয়ন’। উদ্বোধনের পর বিগত ৫০ দিনেরও কম সময়ে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ দর্শক প্যাভিলিয়নটি পরিদর্শন করায় একে সবচেয়ে আইকনিক প্যাভিলিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্টস (এআইএ)।
২৩ নভেম্বর, মঙ্গলবার, এআইএ প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল এস হার্ট ‘এক্সপো ২০২০ দুবাই’ -এ ভারতের অসাধারণ যাত্রা ও সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, “ভারতের এই অসাধারণ যাত্রার অংশীদার হতে পেরে আমরা আনন্দিত। দেশের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পটভূমির প্রতিনিধিত্ব করে এই গৌরব অর্জন করেছে প্যাভিলিয়নটি। এআইএ -তে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য টেকসই অনুশীলনের উপর মনযোগ দিয়ে পৃথিবীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইন্ডিয়া প্যাভিলিয়ন এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্যের সমান্তরালে কাজ করছে।”
ইন্ডিয়া প্যাভিলিয়ন অসংখ্য সুযোগ ও সম্ভাবনার প্রতিনিধিত্ব করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “দেশের কৃষ্টি ও কালচারের পাশাপাশি উচ্চাভিলাষী সম্ভাবনার কথাও প্রচার করছে দুবাই এক্সপোর ইন্ডিয়া প্যাভিলিয়ন।”
প্যাভিলিয়নটির স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে দুবাইতে ভারতের কনস্যুলেট জেনারেল আমান পুরি বলেন, “ভারত প্যাভিলিয়নের প্রতি সাড়া এবং দিক্ষু কুক্রেজার নেতৃত্বে সিপি কুক্রেজা স্থপতিদের কাজ দেখে আমরা আনন্দিত৷ দুবাই এক্সপোর অন্যতম আইকনিক প্যাভিলিয়ন হিসেবে ইন্ডিয়া প্যাভিলিয়নকে বেছে নেয়ায় আমরা এআইএ এর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা বিশ্বাস করি ‘কানেক্টিং মাইন্ডস, ক্রিয়েটিং এ ফিউচার’ থিমটি প্যাভিলিয়ন স্ট্রাকচারের মাধ্যমে অনুবাদ করা হয়েছে।”
ভারতীয় এই কূটনীতিক বলেন, “ভারত যেমন সংস্কৃতি এবং প্রভাবের একটি সমৃদ্ধ মিশ্রণের প্রতিনিধিত্ব করে, তেমনি আমাদের স্থাপত্য ঐতিহ্যেও একই প্রতিনিধিত্ব করা হয়। ভারত গোটা পৃথিবীর জনসংখ্যার এক ষষ্ঠাংশের আবাসস্থল এবং একটি বিশাল বৈচিত্র্যময় জাতি। ইন্ডিয়া প্যাভিলিয়ন সুন্দরভাবে এই বৈচিত্র্যকে ক্যাপচার করে এবং ভারতেরই গল্প বলে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন, আমরা হাজার হাজার আগ্রহী দর্শকদের দেখতে পাই, যারা প্যাভিলিয়নের ইন্টারেক্টিভ প্রকৃতির দ্বারা মন্ত্রমুগ্ধ। আমরা এই ধরনের অনেক দর্শকদের আতিথেয়তা এবং গতি বজায় রাখার জন্য উন্মুখ।”
ভারত প্যাভিলিয়নের প্রধান স্থপতি দিক্ষু সি কুক্রেজা বলেন, “এআইএ দ্বারা স্বীকৃত হওয়া একটি বড় সম্মানের বিষয় এবং আমরা আমাদের দেশকে এক্সপোতে প্রদর্শন করতে পেরে আনন্দিত। দুবাই এক্সপোর তাৎপর্য উপলব্ধি পূর্বক প্যাভিলিয়নটি বৈশ্বিক মঞ্চে ভারতের বৈচিত্র্য, ঐতিহ্য এবং অসংখ্য সুযোগ তুলে ধরার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বকে দেখাতে পেরে আমরা আনন্দিত যে ভারতের স্থাপত্য প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ থেকে ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে এবং এখন বিশ্বব্যাপী সমসাময়িক স্থাপত্যের সাথে সমান।”
উল্লেখ্য, গত ০১ অক্টোবর এক্সপো ২০২০ দুবাই -এ ইন্ডিয়া প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। তখন এক্সপো ২০২০ দুবাইয়ে ভারতের অংশগ্রহণের তাৎপর্যের উপর জোর দিয়ে গয়াল বলেছিলেন, “আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ উদযাপন করছি। একই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে এ বছর। দেশটি আমাদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র। এমন সময়ে এক্সপো ২০২০ আমাদের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে। আশা করি দু দেশের মধ্যকার দৃঢ় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে সম্পূর্ণ আয়োজনটির সুবাদে।”
উল্লেখ্য, ভারত ও আরব আমিরাতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আর্থিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। গত অর্থবছরেও ভারতে বিনিয়োগকারী অষ্টম বৃহৎ রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাত। বৈশ্বিক কূটনৈতিক ও আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক নানা ইস্যুতে প্রায়শই একে অন্যকে সমর্থন করে থাকে দেশ দুটো।
প্রসঙ্গত, আরব বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সমাবেশ ‘এক্সপো’। পাঁচ বছর অন্তর আয়োজিত হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই আন্তর্জাতিক ইভেন্ট। এবার এটি আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে দুবাই। ০১ অক্টোবর শুরু হওয়া ‘দুবাই এক্সপো ২০২০’ চলবে আগামী ৩১ মার্চ, ২০২২ ইং অবধি। এ বছর ১৯১টি দেশ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আবিষ্কার, আলোচনা, ধারণা ও অভিজ্ঞতা ভাগ করার জন্য জড়ো হচ্ছে।
এবারের এক্সপোর লোগো লৌহযুগের প্রাচীন আংটির অনুকরণে বানানো হয়েছে, যেটি দুবাই শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুমের আবিষ্কৃত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। দুবাই এক্সপোর আয়োজকরা আশা করছেন, করোনা মহামারিতে সৃষ্ট জটিলতা সত্ত্বেও ছয় মাসের এক্সপোতে প্রায় আড়াই কোটি ক্রেতা-দর্শনার্থী অংশ নেবেন। তাই ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হয়েছে ভারতের প্যাভিলিয়ন।
এক্সপো ২০২০ দুবাই এর সেট আল-মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে দুবাই দক্ষিণ জেলার ৪ দশমিক ৩৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে। এটি তিনটি থিমভিত্তিক জেলায় বিভক্ত- সুযোগ, গতিশীলতা ও স্থায়িত্ব।
এক্সপোতে অংশগ্রহণকারী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের দর্শকদের কোভিড-১- ভ্যাকসিন নেয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে অথবা আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর পরীক্ষায় নেগেটিভ আসতে হবে। টিকা না দেওয়া দর্শনার্থীরা এক্সপো সংলগ্ন করোনাভাইরাস পরীক্ষার সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক