অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে শুরু হওয়া সিডনি সংলাপে ভাষণ দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৮ নভেম্বর, ২০২১, বৃহস্পতিবার, তিনদিন ব্যাপী (১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর) চলতে থাকা আয়োজনটির প্রধান বক্তা হিসেবে নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
এর আগে সংলাপের প্রথমদিনে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে ভাষণ দিয়েছিলেন অজি প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। মোদী ও মরিসন ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। এবারের সংলাপের মূল থিম হচ্ছে, ‘এমার্জিং, ক্রিটিক্যাল এন্ড সাইবার টেকনোলজি’।
ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “এটি ভারতের জনগণের জন্য একটি বড় সম্মান যে আপনারা আমাকে সিডনি সংলাপে মূল বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি এটিকে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে এবং উদীয়মান ডিজিটাল বিশ্বে ভারতের কেন্দ্রীয় ভূমিকার স্বীকৃতি হিসাবে দেখছি।”
সিডনি সংলাপের মূল থিম এর উপর বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “ডিজিটাল যুগ আমাদের চারপাশের সবকিছু বদলে দিচ্ছে। এটি রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। এটি সার্বভৌমত্ব, শাসন, নৈতিকতা, আইন, অধিকার এবং নিরাপত্তার উপর নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করছে। এটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, ক্ষমতা এবং নেতৃত্বকে নতুন আকার দিচ্ছে। এটি অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির সুযোগের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “ভারত অতীতের চ্যালেঞ্জ সমূহকে ভবিষ্যতের উন্নয়নের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। ভারতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনও হয়েছে। দেশ গণতন্ত্র ও ডিজিটাল নেতৃত্ব প্রদান করার ক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করেছে। নিরাপত্তা ও অংশীদারেরর সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত হয়েছে। ভারতের ডিজিটাল বিপ্লব দেশের গণতন্ত্র ও জনসংখ্যা এবং অর্থনীতির মাপকাঠিতে নিহত। দেশের আগামী প্রজন্মও এই উদ্যোগ ও উদ্ভাবন শক্তিকেই হাতিয়ার করে এগিয়ে চলেছে।”
তিনি জানান, “ভারত বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ও দ্রুত বর্ধনশীল স্টার্ট আপ ইকো সিস্টেমের দেশ। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানেই নিত্য নতুন ইউনিকর্ন আসছে যা জাতীয় নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সমাধান প্রদান করছে। ভারত শিল্প, পরিষেবা, কৃষি খাত ও ব্যাপক ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।” ভারত-অস্ট্রেলিয়ার যৌথ উদ্যোগের ফলে ভারত ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মোদী।
মোদী বলেন, “ভবিষ্যতের ভারতকে প্রস্তুত করার জন্য ৫জি ও ৬জি এর মতো বড় উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তিতে দেশীয় ক্ষমতা বিকাশেও বিনিয়োগ বেড়েছে। প্রায় ১৩০ কোটি ভারতীয়র একটা ডিজিটাল পরিচয় রয়েছে। প্রায় ছয় লক্ষ গ্রামকে আমরা ব্রডব্যান্ড সেবা দেয়ার পথে রয়েছি। ভারত বিশ্বের সবথেকে দক্ষ UPI বা পেমেন্ট অনফ্রা তৈরি করেছে। বর্তমানে ভারতে ৮০ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ৭৫ কোটি মানুষের হাতে রয়েছে স্মার্ট ফোন। মাথাপিছু ডেটার অন্যতম ভোক্তা ও স্রষ্টা ভারত।”
আলোচনাকালে, ভারত সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য নিজের মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন মোদী। তাছাড়া, করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রেও ভারত কীভাবে ডিজিটাল মাধ্যমের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করেছে, সে বিষয়েও নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন মোদী।
এসময়, ক্লিন এনার্জি ট্রানজিশন, সম্পদের রূপান্তর এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং, বিশেষ করে মানব-কেন্দ্রিক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রাষ্ট্র। আমরা ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম এবং ক্লাউড কম্পিউটিং-এ ক্ষমতার শক্তিশালী বিকাশ করছি।”
ভারত ইতোমধ্যেই বিশ্বের কর্পোরেটদের সাইবার নিরাপত্তা সমাধান এবং পরিষেবা প্রদানের জন্য একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মোদী। পাশাপাশি ডেটা সুরক্ষা, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার জন্য ভারত একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরী করেছে বলে অভিমত দেন তিনি। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক