ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিরাপত্তা ইস্যুতে নতুন হুমকি এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভারত প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। পাশাপাশি গোটা অঞ্চল জুড়ে একটি ক্রমবর্ধমান জটিল, দ্রুত বিকশিত এবং আরও চাহিদাপূর্ণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে অভিমত দেন তিনি।
০৮ নভেম্বর, সোমবার, গোয়া মেরিটাইম কনক্লেভের (জিএমসি) ৩য় সংস্করণে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন শ্রিংলা। গত রবিবার গোয়ার নেভাল ওয়ার কলেজে তিনদিন ব্যাপী সংলাপটি আরম্ভ হয়েছে। ভারত মহাসাগর অঞ্চল থেকে ১২ টি উপকূলীয় রাষ্ট্রের নৌবাহিনী কিংবা কোস্টগার্ড প্রধানগণ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।
এবারের জিএমসি থিম হচ্ছে, “মেরিটাইম সিকিউরিটি অ্যান্ড এমার্জিং নন-ট্র্যাডিশনাল থ্রেটস: এ কেস ফর অ্যাকটিভ রোল ফর আইওআর নেভিস।” সমুদ্রে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বিধানের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখেই থিমটি নির্বাচন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
নিজ বক্তব্যে শ্রিংলা বলেন, “আন্তর্জাতিক আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন কিংবা নিষ্পত্তির প্রতিশ্রুতির অভাব এই অঞ্চলকে সামরিকীকরণ বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেছে। সামরিকীকরণ সর্বদা জটিলতা বাড়ায়। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো জনগণের সমৃদ্ধি, মঙ্গল, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া গোয়া মেরিটাইম সিম্পোজিয়াম এর আলোচনা ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের জিএমসি-২১। এবারের কনক্লেভে অংশগ্রহণকারী ১২ টি দেশ যথাক্রমে বাংলাদেশ, কমোরোস, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মায়ানমার, সেশেলস, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড। সংশ্লিষ্ট এসব দেশের নৌ বা সমুদ্র নিরাপত্তা বাহিনী প্রধানদের কনক্লেভে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল করমবীর সিং।
ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “আমরা সার্বজনীন উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে বিশ্বাসী। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ঘিরে ভারতের ধারণা অন্তর্ভূক্তিমূলক। আমরা একদিকে যেমন সমুদ্রপথে সবার জন্য ন্যাভিগেশনে বিশ্বাসী, তেমনই আকাশসীমায় ওভারফ্লাইটের স্বাধীনতার অধিকারকে সম্মান করি।”
ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি আসিয়ান কেন্দ্রিকতার উপর নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও এসময় মন্তব্য করেন শ্রিংলা। তাই অঞ্চলভূক্ত সকল রাষ্ট্রকে এঁকে অন্যের পরিপূরক হবার আহবান জানান তিনি।
আলোচনার এক পর্যায়ে, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, মালদ্বীপ এবং সেশেলসের সঙ্গে যৌথভাবে উপকূলীয় রাডার নজরদারি ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার কথা উল্লেখ করেন শ্রিংলা। পাশাপাশি উপকূলীয় রাডারে ভারত-বাংলাদেশ সমঝোতা স্মারক, তথ্য ফিউশন কেন্দ্র স্থাপন এবং আবুধাবি, সেশেলস এবং মাদাগাস্কারে ভারতের বহুপাক্ষিক সামুদ্রিক সমন্বয় কেন্দ্র; এবং, হোয়াইট শিপিং ইনফরমেশন এক্সচেঞ্জ চুক্তি সহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এবারের কনক্লেভে বিশেষজ্ঞ ও বক্তাগণ তিনটি সেশনে বক্তব্য রাখবেন বলে জানা গিয়েছে। সেগুলো যথাক্রমে,
* উদীয়মান অ-প্রথাগত হুমকি মোকাবেলায় সম্মিলিত সামুদ্রিক দক্ষতার ব্যবহার
* সামুদ্রিক আইন প্রয়োগের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা
*. আইওআর-তে জাতীয় এখতিয়ারের বাইরের এলাকায় উদীয়মান অপ্রথাগত হুমকি প্রশমিত করার জন্য প্রয়োজনীয়তা
এছাড়াও, অঞ্চলজুড়ে হাইড্রোগ্রাফি এবং সামুদ্রিক তথ্য আদান-প্রদানের ইস্যুতেও ব্যাপক আলোচনা হবে সংলাপে। কনক্লেভের অংশ হিসেবে, দর্শকদের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া প্রদর্শনী’-তে ভারতের দেশীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং মারমুগাও পোর্ট ট্রাস্ট, গোয়ার সাবমেরিনের জন্য ডিপ সাবমারজেন্স রেসকিউ ভেসেল এর ক্ষমতা দেখার সুযোগ দেওয়া হবে।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক