জলবায়ু অর্থায়নের বর্তমান পরিকল্পনা ২০০৯ সালে নির্ধারিত কাঠামো অনুসারে চলতে পারেনা বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। কোপ-২৬ সম্মেলনে মোদী সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার লক্ষ্য পূরণ করতে কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করা উচিত।”
গত ০২ নভেম্বর, মঙ্গলবার, কোপ-২৬ সম্মেলনের এক ফাঁকে সমমনা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বক্তৃতা দিয়ে গিয়ে এসব কথা বলেন ভূপেন্দ্র। এসময়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সকল রাষ্ট্রকে একত্রে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহবান জানান তিনি। ভূপেন্দ্র বলেন, “অর্থনৈতিক, অভিযোজন খাত, বাজার ব্যবস্থা এবং পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী করতে পারি।”
নিজ বক্তব্যের এক পর্যায়ে, জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করার উপর জোর দেয়ার পাশাপাশি অর্থায়ন নিরীক্ষণের দিকেও ভ্রূক্ষেপ করেন ভূপেন্দ্র। কার্বন নিঃসরণ নিরীক্ষণ প্রশমনের জন্য যেমন একটি স্বতন্ত্র কাঠামো বা ব্যবস্থা তৈরী করা হয়েছিলো, তার আদলে জলবায়ু অর্থায়নের নিরীক্ষণের উপর জোর দেন তিনি।
এক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং সকল প্রকার বাণিজ্য যুদ্ধ ভুলে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে পরামর্শ দেন ভূপেন্দ্র।
এসময় এসডিজি বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার বিষয়ে ভারতের দৃঢ় সঙ্কল্পের পুনর্ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। এসব লক্ষ্য অর্জনে জলবায়ু সুরক্ষা নিশ্চিত করা যে ভারতের প্রথম অঙ্গীকার, সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন তিনি।
একই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক সৌর জোট (আইএসএ), কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিডিআরআই) এবং লিডারশিপ গ্রুপ ফর ইন্ডাস্ট্রি ট্রানজিশন (লিডআইটি) সহ জলবায়ু রক্ষায় ভারতের বিভিন্ন বৈশ্বিক উদ্যোগে সমর্থন করার জন্য সকল উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানান ভূপেন্দ্র যাদব। তৃতীয় বিশ্বের জন্য একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টার প্রশংসাও করেন তিনি।
ভারতের কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মতে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের দাবি দাওয়া পেশ করার বিষয়ে দৃঢ় সঙ্কল্প ব্যক্ত করেছে এলএমডিসি (উন্নয়নশীল ফোরামের) দেশগুলো।
এলএমডিসি রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক দাবিকৃত পয়েন্ট গুলো:
*কোপ-২৬ থেকে গৃহীত সকল সিদ্ধান্তকে অবশ্যই কনভেনশনের মৌলিক নীতিগুলোর প্রতি সম্মান জানাতে হবে।
*উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই জলবায়ু অর্থায়ন, প্রযুক্তির হস্তান্তর এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহকে সহায়তা অব্যহত রাখতে হবে।
*উন্নত দেশগুলো কর্তৃক ইতোপূর্বে প্রতিশ্রুতি দেয়া অর্থ বরাদ্দ সরবরাহ না করার বিষয়টি জোরেসোরে উত্থাপন করা।
*প্যারিস চুক্তির রুলসবুক দ্রুত চূড়ান্ত করতে হবে।
বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করেন বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট লুইস আলবার্তো আর্স কাতাকোরা। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, চীন, কিউবা, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলা।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক