মিহির ভোসলে ।। ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক: ইতালির রোমে আয়োজিত এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন নরেন্দ্র মোদী। এর মধ্য দিয়ে প্রায় এক যুগ পর ইউরোপের দেশটি সফর করেন কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সফরকালে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। ব্যক্তিগত স্তরে এটিই ছিলো তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ।
গত ২৯ অক্টোবর, শুক্রবার, বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। তবে বৈঠকটি নেহায়েত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সীমা ছাড়িয়ে বৈশ্বিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে অভিমত দিয়েছেন ইতালির ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল স্টাডিজ এর ইউরোপ ও গ্লোবাল গভর্নেন্সের কেন্দ্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সহ-প্রধান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ফ্রাঙ্কো ব্রুনি।
গত ০১ নভেম্বর, সোমবার, ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশ্লেষক ব্রুনি বলেন, “জি-২০ ফোরামের ভবিষ্যত নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে ভারত-ইতালির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। দেশ দুটোর মধ্যে সম্পর্ক ক্রমাগত উর্ধ্বমুখী। দ্রাঘি-মোদীর সাম্প্রতিক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও অর্থপূর্ণ।”
ব্রুনি বলেন, “আপনারা লক্ষ্য করলেই দেখবেন, এবারের সম্মেলনে যোগ দিতে এসে মোদী কেবল দ্রাঘির সঙ্গে বৈঠক করেই ক্ষান্ত হোননি। উপরন্তু পোপ এবং আরও অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে সক্ষম হোন তিনি। জি-২০ সম্মেলনেও এর প্রভাব আমরা দেখেছি। তাই ধারণা করি, এই সম্পর্ক জি-২০ ফোরামের ভবিষ্যত নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তাই বলাই বাহুল্য, এই বৈঠকটির একটি বৈশ্বিক তাৎপর্য রয়েছে।”
এই কূটনৈতিক বিশ্লেষক আরও বলেন, “জি-২০ ফোরামের আলোচনার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে অনেককে। যদিও এটি দ্বিপাক্ষিক মিটিং বা আলোচনার জন্য উপযুক্ত স্থান নয়, তথাপি বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও আসন্ন বিশ্ব পুনর্গঠনে এবারের বৈঠকগুলোর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। হয়তো এমন কিছু নিয়েও আলোচনা হয়েছে, যা জি-২০ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে তুলনামূলক কম সঙ্গতিপূর্ণ।”
তবে জি-২০ ফোরাম যে বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের অন্যতম প্রধান প্ল্যাটফর্ম, তা স্বীকার করতে ভুলেননি ব্রুনি। সাম্প্রতিক আফগান ইস্যুতেও এখনও অবধি বিশ্ব কোনো সম্মিলিত এবং কার্যকর সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বলে মনে করেন ইতালির বোকোনি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের এই এমেরিটাস অধ্যাপক। আফগানিস্তানের পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে ভারত সহ গোটা অঞ্চল জুড়ে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্রুনি বলেন, “অবিলম্বে আফগান ইস্যুর সমাধানের চেষ্টা বাদ দিয়ে ভারত, রাশিয়া, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এই অঞ্চলটিতে একটি সহযোগিতার কাঠামো তৈরী করা। যেহেতু ইউরোপ বর্তমানে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত, তাই স্বভাবতই ইউরোপ এই আলোচনার টেবিলে জড়াবেনা। তবে ধারণা করি কিছু ইউরোপীয় দেশ হয়তো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যাবে শেষ অবধি।”
এসময়, বৈশ্বিক পরাশক্তি এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাভাজন হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা পূর্বক সম্ভাব্য সন্ত্রাসী সকল কর্মকাণ্ড বানচাল করতে হবে। সর্বোপরি, অঞ্চলজুড়ে এবং বৈশ্বিকভাবে সকল শক্তির মধ্যে একটি সমঝোতা তৈরী পূর্বক যেকোনো ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রোধ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।