বর্তমান বিশ্ব পরিক্রমায় প্রতিটি রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে দেশ গুলোর মধ্যে অভিবাসন এবং নাগরিকদের ভ্রমণ সুবিধার বিষয়ে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার ডাক দিলো ভারত। গত ১৫ অক্টোবর, শুক্রবার, জেনেভায় অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংলাপে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের কনস্যুলার, পাসপোর্ট ও ভিসা এবং বিদেশী ভারতীয় বিষয়ক সংস্থার (সিপিভি ও ওআইএ) সচিব সঞ্জয় ভট্টাচার্য।
সঞ্জয় বলেন, “অভিবাসন খাতে প্রকৃতপক্ষে এক ধরণের মন্থর গতির সৃষ্টি হয়েছে। করোনা মহামারী এর প্রভাব আরও দৃশ্যমান করে তুলেছে। অর্থনীতির পুনর্গঠন, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, নতুন শিল্প ও ডাটার ব্যবহার এবং বয়স্ক সমাজ শ্রমবাজারকে কীভাবে প্রভাবিত করে, পরিবর্তন করে, তা আমরা লক্ষ্য করেছি। এই পরিবর্তনের যুগে আমাদের গতিশীল হতে হবে। পরিস্থিতি পরিবর্তন করে আমাদের জনগণকে অধিকতর সুবিধা প্রদান করতে।”
এসময়, যেকোনো রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মসূচিতে অভিবাসন নীতি মূলধারার সঙ্গে সংযোজন করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান সঞ্জয়। একই সঙ্গে, নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনের জন্য গ্লোবাল কম্প্যাক্ট (জিসিএম) এর গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি। জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং অর্থনীতির অগ্রগতিতে অবদান রাখতে নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগের জবাব দেয়ার নিমিত্তে জিসিএম এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন এই কূটনীতিক।
আলোচনাকালে ভারত কর্তৃক আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) পূর্ণ সদস্যপদ প্রাপ্তির স্মৃতিমন্থন করেন সঞ্জয়। তাছাড়া, করোনা কালে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র কীভাবে অভিবাসীদের রক্ষার চেষ্টা করেছে, সেটিও ব্যক্ত করেন সঞ্জয়। তিনি বলেন, “বৈশ্বিক কর্মসূচির অন্যতম প্রধান এজেন্ডা ছিলো অভিবাসীদের উপর কীভাবে করোনার গভীর এবং বিরূপ প্রভাব ঠেকানো যায়!”
ভারত সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) কাউন্সিলের সঙ্গে নব উদ্যমে কাজ শুরু করেছে বলে জানান সঞ্জয়। অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক কর্মকর্তা বলেন, “বহুপাক্ষিক ট্র্যাক ছাড়াও ভারত আইওএম সমর্থিত বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উন্নতিকল্পে ইতোমধ্যে অংশ নিয়েছে। যেমনঃ কলম্বো প্রক্রিয়া, আবুধাবী প্রক্রিয়া এবং বুদাপেস্ট প্রক্রিয়া।”
পাশাপাশি অভিবাসন ও অভিবাসী ইস্যুতে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে হওয়া কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেন সঞ্জয়। একই সঙ্গে, অনিয়মিত অভিবাসন, চোরাচালান ও পাচার মোকাবেলার উদ্দেশ্যে ভারত ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুমোদন করেছে বলে জানান তিনি।
এসময় আন্তর্জাতিক অভিবাসন নীতির সফলতা বিবৃত করতে গিয়ে পাঁচটি মূলকথা কথা উল্লেখ করেন সঞ্জয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “একটি আন্তর্জাতিক অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে রাখতে হবে, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অভিবাসীদের প্রত্যাবর্তন।”
দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে তিনি ব্যক্ত করেন, “অভিবাসন ও নাগরিকদের ভ্রমণ সুবিধা নিশ্চায়নের বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বহুপাক্ষিক ও ঘটনার অংশীদার দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সমন্বয় সাধন করতে হবে।”
তৃতীয় নীতি হিসেবে সঞ্জয় উল্লেখ করেন, “অভিবাসন প্রত্যাশী কর্মী ও পেশাদারগণ যেনো বিদেশে গিয়ে একটি নিরাপদ, কর্মক্ষম এবং আইনি ভাবে নিরাপদ উপায়ে চলাচল করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।”
চতুর্থ পয়েন্টে ভারতীয় এই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, “অভিবাসন ইস্যুতে জাতীয় অগ্রাধিকারের পাশাপাশি জিসিএম লক্ষ্য সমূহ সুসংহত করতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।”
এবং সর্বশেষ পঞ্চম ধাপে তিনি বলেন, “দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সক্ষমতা।”
উপরোক্ত এই পাঁচটি নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের সিপিভি ও ওআইএ সচিব একটি সামগ্রিক এবং বাস্তববাদী এজেন্ডা গ্রহণের জন্য জেনেভা বৈঠকে অংশ নেয়া সকলের প্রতি আহবান জানান। একটি সফল আন্তর্জাতিক অভিবাসন পর্যালোচনা ফোরামের মঞ্চ স্থাপন করা সম্ভব হবে বলে মত দেন তিনি।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক