করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফলকাম হতে টিকার মেধাস্বত্ত্ব প্রত্যাহার এবং নিত্য নতুন বাণিজ্য বাধা দূরীকরণের আহবান জানিয়েছে ভারত। ১২ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ইতালীর নেপলস শহরে অনুষ্ঠিত জি-২০ জোটের বাণিজ্য মন্ত্রীদের বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা বলেন ভারতের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গয়াল।
মন্ত্রী বলেন, “মহামারীর বিরুদ্ধে জয়ী হতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহের সকল ধরণের সীমাবদ্ধতা দ্রুত সমাধান করতে হবে। এজন্য, করোনা ভ্যাকসিন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকরণ গুলোতে সাময়িকভাবে হলেও মেধাস্বত্ত্ব প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে গোটা বিশ্বই বিপদে আবদ্ধ রয়ে যাবে।”
মোদী সরকারের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ এই মন্ত্রী আরও বলেন, “ভ্যাকসিন বিভাজনের মতো বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট নতুন বাণিজ্য বাধা দূর করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে পাসপোর্ট সমস্যা সহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান করতে হবে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অভিবাসীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে হবে।”
এসময়, সার্বজনীন টিকা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার উপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। পাশাপাশি এই লক্ষ্য পূরণে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং সমন্বয় সাধনের উপরও জোর দেন বর্ষীয়ান এই নেতা।
আলোচনাকালে, সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা খাতকে বিশ্বের সকল অঞ্চল ও রাষ্ট্রের জন্যে অ্যাক্সেসযোগ্য করার নিমিত্তে গোটা ব্যবস্থাকে অবাধ প্রবাহের সুযোগ প্রদানের আহবান জানান গয়াল। এই লক্ষ্য পূরণে জি-২০ রাষ্ট্র এবং এর নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
এই প্রবাহের আওতায় ভারতের তৈরীকৃত ‘ই-সঞ্জীবনী’ টেলিমেডিসিন উদ্যোগ বিশ্বের সকলের কাছে পৌছানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তিনি। উল্লেখ্য, এই সেবার ফলে প্রতিনিয়ত উপকৃত হচ্ছেন লাখো কোটি ভারতীয় জনতা।
নিজ বক্তব্য প্রদানকালে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা – ২০৩০ অর্জন করতে ভারত কর্তৃক গৃহীত নানান পদক্ষেপ সম্পর্কে বৈঠকে যোগ দেয়া বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতাদের বর্ণনা করেন গয়াল। তিনি বলেন, “প্যারিস চুক্তি অনুসারে প্রতিশ্রুত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা এই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি রয়েছি এবং ঠিক ট্র্যাক মতোই এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা জাতিসংঘের সকল উন্নত অর্থনীতির সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি ট্রান্সফার অব টেকনোলজি এবং ক্লাইমেট ফাইন্যান্স সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করার আহবান জানাই।”
এসময়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গৃহীত নানান পদক্ষেপ, আন্তর্জাতিক সৌর জোট গঠন ও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা, মৎস্য সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারে গৃহীত পদক্ষেপ, দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতের অন্তর্ভূক্ত করা সহ নানা বিষয়ে কথা বলেন ভারতীয় মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, এবারের জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, ব্রাজিল, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মেক্সিকোর শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেছেন গয়াল। আলোচনাকালে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিনিময় করেন তাঁরা। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি প্রচলনের ব্যাপারেও তাঁদের সঙ্গে বিস্তর আলোচনা হয় গয়ালের।
এসবের পাশাপাশি আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আসন্ন ১২ তম বাণিজ্য মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সাফল্য কামনা করেন গয়াল।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক