০২:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন উচ্চতায় কোপেনহেগেন-নয়াদিল্লী সম্পর্ক

সম্প্রতি তিনদিনের ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে গিয়েছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন। ০৯ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর অবধি হওয়া তাঁর এই সফরটি বিশেষ কিছু কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, মহামারী পরবর্তী সময়ে প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভারত সফর সম্পন্ন করেছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন। এর পাশাপাশি সফরটি চলাকালে চারটি সমঝোতা স্মারক বিনিময়ের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাঁর এই সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরের গুরুত্ব এবং ফলাফল নিয়েই আজ আমাদের প্রতিবেদন।

ফ্রেডেরিকসেনের এবারের সফরে ভারতের সঙ্গে হওয়া চুক্তির মাঝে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে- উৎপাদনশীলতা ও কৃষকদের আয় বৃদ্ধিকল্পে কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার, খাদ্য নিরাপত্তা, কোল্ড চেইন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, সার, মৎস্য, জলজ চাষ খাতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সহ সংশ্লিষ্ট সকল খাতে অংশীদারিত্ব বাড়ানো।

মনে রাখতে হবে, এবারের ভারত সফরে ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর দেশের এক ঝাঁক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রেণীর প্রতিনিধি দল। তাঁরা সবাই এসব ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পাদন এবং সমঝোতা স্মারক বিনিময়ে ফ্রেডেরিকসেনের সাহচার্য করেছেন। ফলে ভারতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের বিষয়েও নতুন কোনো সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতেই পারে!

এবারের সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন ফ্রেডেরিকসেন। এসব বৈঠকের ফলে নিঃসন্দেহে উভয় রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে এক ধরণের সৌহার্দ্য ও ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। এই বিষয়টিও দু পক্ষের ভবিষ্যত পথ পরিক্রমায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ইতোমধ্যে আমরা সবাই জানি যে, গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডেনমার্কের সঙ্গে একটি কৌশলগত সবুজ অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে ভারত। উভয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার ভার্চুয়াল বৈঠকে এই ঘোষণাটি দেয়া হয়েছিলো। এবার ভারতে এসেই স্মার্ট ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, বর্জ্য থেকে সর্বোত্তম সম্পদ তৈরি প্রকল্প, দক্ষ সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার মতো প্রকল্প গুলো পরিদর্শনে যান ফ্রেডেরিকসেন। ফলে সবুজ কৌশলগত অংশীদারিত্ব সম্পর্কেও এক নতুন অগ্রগতির সঞ্চার হয়েছে।

তাছাড়া, স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অংশীদারিত্বের বিষয়ে বেশ ঘনিষ্ঠ হতে দেখা গিয়েছে দু দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে। পরিবেশ বান্ধব এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার বৃদ্ধিতে ভারতের যে অঙ্গীকার, তাতে আপাদমস্তক সায় দিয়েছেন ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সৌর জোটেও যোগ দিয়েছে ডেনমার্ক। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও বিস্তর আলোচনা করেছে দু পক্ষ। তাই স্বভাবতই ফ্রেডেরিকসেনের এবারের সফরটি বেশ প্রভাব ফেলেছে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিমন্ডলেও।

দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বাইরে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় করেছেন মোদী ও ফ্রেডেরিকসেন

ভারত ত্যাগের পূর্বে আগামী ২০২২ সালে ভারত-ডেনমার্ক শীর্ষ সম্মেলনের জন্যে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ডেনমার্ক সফরে যাবার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ফ্রেডেরিকসেন। পাশাপাশি ডেনমার্কের রাণী দ্বিতীয় মার্গ্রেথের পক্ষে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকেও দেশটি সফরের আমন্ত্রণ বার্তা দেন তিনি। ফলে একটু হলেও দু পক্ষের সম্পর্কের অগ্রগতির আচ টের পাওয়া যাচ্ছে।

সর্বোপরি, ভারত এবং ডেনমার্কের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে ব্যাপক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। গত ২০১৯ সালে উভয় দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর পূর্তির হয়েছে। পাশাপাশি গত বছর (২০২০) ভারত এবং ডেনমার্কের মধ্যকার প্রথম যোগসূত্র স্থাপনের ৪০০ বছরও পূর্ণ হয়েছে। তাছাড়া, ভারতে এখনও প্রায় ২০০’র বেশি ডেনিশ কোম্পানীর বিনিয়োগ রয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৬০ টি ভারতীয় কোম্পানী ডেনমার্কে বাণিজ্য করছে।

তাই বলাই যায়, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে কোপেনহেগেন-নয়াদিল্লী সম্পর্ক।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

 

ট্যাগ:

নতুন উচ্চতায় কোপেনহেগেন-নয়াদিল্লী সম্পর্ক

প্রকাশ: ০২:৫৪:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১

সম্প্রতি তিনদিনের ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে গিয়েছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন। ০৯ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর অবধি হওয়া তাঁর এই সফরটি বিশেষ কিছু কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, মহামারী পরবর্তী সময়ে প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভারত সফর সম্পন্ন করেছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন। এর পাশাপাশি সফরটি চলাকালে চারটি সমঝোতা স্মারক বিনিময়ের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাঁর এই সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরের গুরুত্ব এবং ফলাফল নিয়েই আজ আমাদের প্রতিবেদন।

ফ্রেডেরিকসেনের এবারের সফরে ভারতের সঙ্গে হওয়া চুক্তির মাঝে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে- উৎপাদনশীলতা ও কৃষকদের আয় বৃদ্ধিকল্পে কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার, খাদ্য নিরাপত্তা, কোল্ড চেইন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, সার, মৎস্য, জলজ চাষ খাতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সহ সংশ্লিষ্ট সকল খাতে অংশীদারিত্ব বাড়ানো।

মনে রাখতে হবে, এবারের ভারত সফরে ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর দেশের এক ঝাঁক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রেণীর প্রতিনিধি দল। তাঁরা সবাই এসব ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পাদন এবং সমঝোতা স্মারক বিনিময়ে ফ্রেডেরিকসেনের সাহচার্য করেছেন। ফলে ভারতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের বিষয়েও নতুন কোনো সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতেই পারে!

এবারের সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন ফ্রেডেরিকসেন। এসব বৈঠকের ফলে নিঃসন্দেহে উভয় রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে এক ধরণের সৌহার্দ্য ও ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। এই বিষয়টিও দু পক্ষের ভবিষ্যত পথ পরিক্রমায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ইতোমধ্যে আমরা সবাই জানি যে, গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডেনমার্কের সঙ্গে একটি কৌশলগত সবুজ অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে ভারত। উভয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার ভার্চুয়াল বৈঠকে এই ঘোষণাটি দেয়া হয়েছিলো। এবার ভারতে এসেই স্মার্ট ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, বর্জ্য থেকে সর্বোত্তম সম্পদ তৈরি প্রকল্প, দক্ষ সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার মতো প্রকল্প গুলো পরিদর্শনে যান ফ্রেডেরিকসেন। ফলে সবুজ কৌশলগত অংশীদারিত্ব সম্পর্কেও এক নতুন অগ্রগতির সঞ্চার হয়েছে।

তাছাড়া, স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অংশীদারিত্বের বিষয়ে বেশ ঘনিষ্ঠ হতে দেখা গিয়েছে দু দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে। পরিবেশ বান্ধব এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার বৃদ্ধিতে ভারতের যে অঙ্গীকার, তাতে আপাদমস্তক সায় দিয়েছেন ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সৌর জোটেও যোগ দিয়েছে ডেনমার্ক। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও বিস্তর আলোচনা করেছে দু পক্ষ। তাই স্বভাবতই ফ্রেডেরিকসেনের এবারের সফরটি বেশ প্রভাব ফেলেছে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিমন্ডলেও।

দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বাইরে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় করেছেন মোদী ও ফ্রেডেরিকসেন

ভারত ত্যাগের পূর্বে আগামী ২০২২ সালে ভারত-ডেনমার্ক শীর্ষ সম্মেলনের জন্যে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ডেনমার্ক সফরে যাবার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ফ্রেডেরিকসেন। পাশাপাশি ডেনমার্কের রাণী দ্বিতীয় মার্গ্রেথের পক্ষে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকেও দেশটি সফরের আমন্ত্রণ বার্তা দেন তিনি। ফলে একটু হলেও দু পক্ষের সম্পর্কের অগ্রগতির আচ টের পাওয়া যাচ্ছে।

সর্বোপরি, ভারত এবং ডেনমার্কের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে ব্যাপক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। গত ২০১৯ সালে উভয় দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর পূর্তির হয়েছে। পাশাপাশি গত বছর (২০২০) ভারত এবং ডেনমার্কের মধ্যকার প্রথম যোগসূত্র স্থাপনের ৪০০ বছরও পূর্ণ হয়েছে। তাছাড়া, ভারতে এখনও প্রায় ২০০’র বেশি ডেনিশ কোম্পানীর বিনিয়োগ রয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৬০ টি ভারতীয় কোম্পানী ডেনমার্কে বাণিজ্য করছে।

তাই বলাই যায়, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে কোপেনহেগেন-নয়াদিল্লী সম্পর্ক।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক