ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং যেকোনো ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত করার অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেছেন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ০৪ অক্টোবর, সোমবার, নয়াদিল্লিতে তরুণ বিজ্ঞানীদের উৎসাহিত ও পুরস্কৃত করতে ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (ডিআরডিও) কর্তৃক আয়োজিত ‘ডেয়ার টু ড্রীম ২.০’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
রাজনাথ সিং বলেন, “বিশ্বজুড়ে বর্তমানে প্রতিটি রাষ্ট্র নিজেদের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে মনযোগ দিয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, সীমান্ত বিরোধ এবং সামুদ্রিক আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতার কারণে সামরিক সরঞ্জামের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারত সাশ্রয়ী এবং মানসম্মত পদ্ধতির প্রতিরক্ষা সামগ্রীর মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এখানে পাবলিক, প্রাইভেট এবং রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্টরের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন পড়বে।””
বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, “ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের নির্মাতা ও প্রস্তুতকারকগণ সাশ্রয়ী, নিখুঁত এবং বিশ্বমানের প্রতিরক্ষা সামগ্রী তৈরী করেন। এটি একদিকে যেমন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে বর্ধিত করে, তেমনই আত্মনির্ভর ভারত গড়তে সহায়ক। দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতেই গোটা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ।”
এবারের ডেয়ার টু ড্রীম পুরস্কারে ব্যাক্তিগত বিভাগে জয়ী হয়েছেন ২২ জন এবং স্টার্টআপ বিভাগে জয়ী হয়েছেন ১৮ জন। সবাইকে পুরস্কৃত করার পাশাপাশি পরবর্তী পুরস্কারটির পরবর্তী সিজন আয়োজনেরও ঘোষণা করেন রাজনাথ।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সাল থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ বিজ্ঞানীদের উৎসাহিত করার জন্য ডেয়ার টু ড্রীম পুরস্কার দিয়ে আসছে ডিআরডিও। মূলত, সাবেক রাষ্ট্রপতি, ভারতের ‘মিসাইল ম্যান’ খ্যাত এ পি জে আব্দুল কালামের স্মরণে ‘দ্য কালাম ভিশন – ডেয়ার টু ড্রীম’ নামে পুরস্কারটি চালু করা হয় ২০১৮ সালে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতির ৮৭ তম জন্ম বার্ষিকীতে এই পুরস্কারটি চালু করা হয়।
রাজনাথ বলেন, “ভারত ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে পৃথিবীর প্রাচীনতম দেশ। অন্যদিকে তরুণ জনসংখ্যা বিচারে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্র। আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশই তরুণ। তাই আমাদেরকে নতুন জিনিস শিখতে, পর্যবেক্ষণ করতে এবং উদ্ভাবনের দিকে মনযোগী হতে হবে।”
এসময় ডিআরডিও কর্তৃক পরিচালিত নানান কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন মোদী মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ এই নেতা। এসবের পাশাপাশি ইতোমধ্যে ভারত বিভিন্ন মডেলের যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক এবং সাবমেরিন তৈরীর মেগা প্রকল্প শুরু করেছে বলে জানান রাজনাথ সিং। এখানে বেসরকারী কোম্পানী সমূহের অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে তাদেরকে বৈশ্বিক জায়ান্ট হতে সাহায্য করবে বলেও অভিমত দেন তিনি।
সম্প্রতি এয়ারবাসের সঙ্গে ৫৬টি সামরিক উড়োজাহাজ ক্রয়ের চুক্তির প্রসঙ্গেও আলোচনা করেন তিনি। রাজনাথ জানান, ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি গত সাত বছরে প্রায় আটত্রিশ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়েছে।
প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ে দেশীয়করণের গুরুত্ব তুলে ধরে আত্মনির্ভর ভারত গড়তে নিজেদের পূর্ব অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। এসময়, উদাহরণ স্বরূপ, আইডেক্স, টিওটি, ডিআরডিও সহ প্রভৃতি সংস্থা ও বিষয়ের উৎকর্ষ সাধনের কথা তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি এসব সেক্টরে স্টার্ট-আপ, উদ্ভাবন কর্মসূচী এবং গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথাও বর্ণনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সামরিক বাহিনীর উৎকর্ষ সাধনে মনযোগ দিয়েছে ভারত। বিমান, নৌ এবং সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সম্প্রতি ফ্রান্সের বিমান নির্মাতা সংস্থা এয়ারবাসের সঙ্গে ২২ হাজার কোটি রুপি বা ৩০০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে ভারত।
এ চুক্তির আওতায় এয়ারবাসের সি২৯৫ মডেলের ৫৬টি উড়োজাহাজ ক্রয় করবে দিল্লি। ভারতীয় বিমানবাহিনীর বহরে যুক্ত হবে এসব উড়োজাহাজ। চুক্তির আওতায় আগামী চার বছরের মধ্যে ১৬টি উড়োজাহাজ ভারতে পাঠাবে এয়ারবাস। বাকি ৪০টি উড়োজাহাজ ভারতে টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেম লিমিটেডের কারখানায় নির্মাণ করবে এয়ারবাস।
আলোচনার এক পর্যায়ে রাজনাথ জানান, ডিআরডিও’র তৈরী তিনটি পণ্য সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেগুলো যথাক্রমে,
১। ARINC818 ভিডিও প্রসেসিং এবং স্যুইচিং মডিউল: ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য তৈরি মডিউলটি ইতোমধ্যে বিমান বাহিনীর উপ -প্রধান এয়ার মার্শাল সন্দীপ সিং -এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এটি উচ্চ ব্যান্ডউইথ, কম বিলম্ব, চ্যানেল বন্ধন, সহজ নেটওয়ার্কিং সহ একটি অত্যাধুনিক মডিউল এবং এটি ৫ম প্রজন্মের বিমান উন্নয়ন কর্মসূচি পূরণ করবে।
২। সোনার পারফরমেন্স মডেলিং সিস্টেম: ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য বিকশিত হয়েছে। সিস্টেমটি নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল সতীশ নামদিও ঘোড়মাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ, সাবমেরিন এবং জলের নজরদারি স্টেশন ইত্যাদির জন্য দরকারী।
৩। বান্ড ব্লাস্টিং ডিভাইস Mk-II: ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য তৈরি এই যন্ত্রটি ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিপি মোহান্তির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। যুদ্ধকালীন পদাতিক বাহিনীর যান্ত্রিক গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য এটি ডাইচ-কাম-বান্ড বাধার উচ্চতা কমাতে ব্যবহৃত হয়।
সর্বোপরি, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধুনিকায়ন করতে নিজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করণের মাধ্যমে নিজ বক্তব্য শেষ করেন রাজনাথ।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক