সামরিক বাহিনীতে পারমাণবিক অস্ত্রের অন্তর্ভুক্তি নিষিদ্ধ করতে ভারত একটি সার্বজনীন, বৈষম্যহীন এবং যাচাইযোগ্য পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে বিশ্বাসী বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। পাশাপাশি একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে ভারতের যে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং মতামত রয়েছে, সেটিও মনে করিয়ে দেন তিনি।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার, জাতিসংঘের ৭৬ তম সাধারণ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ সভায় এসব কথা বলেন তিনি। শ্রিংলা বলেন, “ভারতের নিজস্ব মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আমরা পারমাণবিক অস্ত্রের প্রথম ব্যবহারে বিশ্বাসী নই। একই সঙ্গে অপারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঘোর বিরোধী ভারত।”
অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক আরও বলেন, “ভারত বিশ্বাস করে, ধাপে-ধাপে কাজ করার মাধ্যমে অর্জিত হবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্য। সবাইকে অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। ইতোপূর্বে ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে আমাদের জমা দেয়া কাগজপত্রে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে।”
এসময় নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে ইতোপূর্বে ভারতের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং প্রস্তাবনার উপর বিস্তর আলোচনা করেন শ্রিংলা। পাশাপাশি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহকে সঙ্গে নিয়ে পুনরায় নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন শুরুর আহবান জানান তিনি। পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্রের অনিচ্ছাকৃত বা দুর্ঘটনাজনিত ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য মারাত্মক বিপদ এবং তা মোকাবিলায় এখন থেকেই পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন শ্রিংলা।
উল্লেখ্য, পারমানবিক শক্তিধর দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভারত বহু বছর যাবত একটি নীতি মেনে আসছে। আর তা হল, আক্রান্ত না হলে দেশটি নিজে থেকে কারো ওপর পারমানবিক হামলা চালাবে না। এই ‘নো ফার্স্ট ইউজ ডকট্রিন’ এর মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে ভারত নীতিগত দিক থেকে একটি উচ্চতর অবস্থানে থাকে। অর্থাৎ, ভারতের আগে হামলা করার সামর্থ্য আছে, কিন্তু শান্তির জন্য সে তা করছে না।
তবে ১৯৯৮ সালে ‘নো ফার্স্ট ইউজ ডকট্রিন’ ঘোষণার পর, ২০০৩ সালে ভারত সেটির কিছুটা সংস্কার বা পরিমার্জন করে। যাতে বলা হয়, কেবল পারমানবিক হামলা নয়, কেমিক্যাল বা বায়োলজিক্যাল অস্ত্র ব্যবহার করে কেউ হামলা চালালেও ভারত পরমাণু হামলা চালাতে পারবে।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক