০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ একমাত্র নারী সাংবাদিক সেলিনা পারভীন

এমএসবি নাজনীন লাকী: দেশপ্রেমে বলিয়ান সাংবাদিক সেলিনা পারভীন। তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা দায়িত্বশীল মানুষ, একজন স্বাধীন সাহসী কলম সৈনিক। একজন সংগ্রামী মা। কাগজে-কলমে-সংবাদে-সত্যে আপোষহীন সাংবাদিক। যিনি ১৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত সাংবাদিকতা করে গিয়েছেন।

তিনি “শিলালিপি” সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কাজ করেন সাপ্তাহিক ললনা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বিভাগে। তাছাড়াও তিনি সাপ্তাহিক বেগম, আজাদ, সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক পাকিস্তানে লিখতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের অংশ হিসেবে ১৩ ডিসেম্বর আল বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হওয়ার পর তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় এবং ১৮ ডিসেম্বর রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়।

সেলিনা পারভীনের জন্ম নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ছোট কল্যাণনগর গ্রামে ১৯৩১ সালের ৩১ মার্চ। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ফেনী জেলার ৩৬০, মাস্টার বাড়ি, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (সাবেক নাজির রোড)। তাঁর পিতা মৌলভী আবিদুর রহমান। মাতা মোসাম্মৎ সাজেদা খাতুন। তাঁর প্রকৃত নাম মনোয়ারা বেগম। ১৯৫৪ সালে তিনি এফিডেভিট করে সেলিনা পারভীন নাম গ্রহণ করেন।

ফেনীর সরলা বালিকা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেনীর পৈতৃক বাড়িটি ব্রিটিশ সরকার দখল করে নেয়। ফলে তাঁর পিতা মৌলভী আবিদুর রহমান সপরিবারে গ্রামে চলে যান।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই তিনি সাহিত্যের অনুরাগী হয়ে গল্প ও কবিতা লিখা শুরু করেন। গ্রামীণ কুসংস্কারের মারপ্যাঁচে তাঁর পড়ালেখার সাময়িক ইতি ঘটে। ১৯৪৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর অমতে তখনকার প্রথামত বিয়ে দেয়া হয়। তিনি ঐ বয়সে স্বামীর সাথে থাকার কথা ভাবতে পারেননি। ১০ বছর টিকেছিল সে বিয়ে অর্থাৎ ১৯৫৫ সালে তাঁর তালাক হয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি আবার পড়ালেখা শুরু করেন। ১৯৪৯ প্রাইভেট ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কৃতকার্য হননি।

১৯৪৫ সাল থেকেই তিনি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিজেকে স্বশিক্ষিত করে তুলেছিলেন। শুরুতে তিনি কবিতা লিখতেন। এরপর প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন লিখতেন ও প্রকাশ করতেন সাপ্তাহিক বেগম, আজাদ, সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক পূর্বদেশসহ বিভিন্ন পত্রিকায়।

তিনি প্রথম ঢাকায় আসেন ১৯৫৬ সালে আত্মনির্ভরশীলতা সংগ্রামে। ১৯৫৭ সালে তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালে নাসিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে মেট্রনের চাকরি নেন। পরের বছর কর্তৃপক্ষের সাথে মতের অমিল হওয়ায় তিনি চাকুরি ছেড়ে দেন। ১৯৬০-৬১ সালে আজিমপুর বেবিহোমে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬২ সালে পারিবারিক চাপে একজন রাজনীতিবিদকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। এই সংসারে ১৯৬৩ সালে তিনি ছেলে সুমন জাহিদকে জন্ম দেন। এবং ১৯৬৮ সালে এই বিয়েতেও ছাড়াছাড়ি হয়।

                                                                                                  ছবি: ছেলে সুমন জাহিদের সাথে সাংবাদিক সেলিনা পারভীন

১৯৬৫ সালে সলিমুল্লাহ এতিমখানায় কিছুকাল চাকরি করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় সম্পাদকের সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি ললনা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বিভাগে যোগ দেন। বিজ্ঞাপন সংগ্রহ, টাকা তোলাসহ সব কাজ একাই করতেন। পত্রিকা অফিস থেকে বেতন হিসাবে অনেক সময় তেমন কিছুই পেতেন না।

ললনায় কাজ করার সময় ১৯৬৯ সালে বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বের করেন “শিলালিপি” নামে একটি পত্রিকা। তিনি নিজেই এটি সম্পাদনা ও প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন। শিলালিপি ছিল তাঁর নিজের সন্তানের মত। তখন এই পত্রিকায় লিখতেন- শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হান, ড. বোরহান উদ্দিন খানসহ দেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীর লেখা নিয়ে প্রকাশিত শিলালিপি সকলেরই নজর কেড়েছিল। স্বাধীনতার পক্ষের পত্রিকা শিলালিপি। এই সুবাদে ঢাকার বুদ্ধিজীবী মহলে অনেকের সাথেই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন তিনি।

১৯৬৯-এর রাজনৈতিক আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। নিজেও শরিক হন গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন কর্মকাণ্ডে। ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে পড়তেন ‘৬৯-এর ২১ ফেব্রুয়ারি পল্টনের জনসভায় বা শহিদ মিনার থেকে বের হওয়া নারীদের মিছিলে যোগ দিতে। শরিক হতেন বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদসভাতেও। অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখদের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে সমাজতন্ত্রের প্রতিও আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। এরই মধ্যে শুরু হয় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় সেলিনা পারভীন ঢাকায় ছিলেন। তাঁর বাসায় মাঝে মাঝে রাতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আসতেন। খাওয়া-দাওয়া করে চলে যাওয়ার আগে তারা সেলিনা পারভীনের কাছ থেকে সংগৃহীত ঔষধ, কাপড় আর অর্থ নিয়ে যেতেন। শিলালিপির বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়েই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন।

চারিদিকে তখন চলছে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, প্রতিরোধ। চারপাশে শুধু বুলেটের শব্দ আর বারুদের গন্ধ, চিৎকার, গোঙানি, রক্তস্রোত আর মৃত্যু। এরই মাঝে ললনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। শিলালিপির উপরও নেমে আসে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর খড়গ। হাশেম খানের প্রচ্ছদ করা একটি শিলালিপির প্রকাশিতব্য সংখ্যা নিষিদ্ধ করে দেয় পাকিস্তান সরকার। পরে প্রকাশের অনুমতি মিললেও নতুনভাবে সাজানোর শর্ত দেয়া হয়। সেলিনা পারভীন বরাবরের মতো প্রচ্ছদ না নিয়ে তার ভাইয়ের ছেলের ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে শিলালিপির সর্বশেষ সংখ্যা বের করেন। কিন্তু এর আগের সংখ্যার জন্যই সেলিনা পারভীন পাকিস্তানি ও তাদের দালালদের নজরে পড়ে যান—যেটাতে ছিল দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের লেখা এবং স্বাধীনতার পক্ষের লেখা। স্বাধীনতার স্বপক্ষের বুদ্ধিজীবীদের লেখা দিয়ে বের করায় আবার পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পরেন সেলিনা পারভীন। শিলালিপির আরেকটি সংখ্যা বের করার আগেই তাঁকে পাকিস্তানি আল বদর বাহিনী অপহরণ করে এবং পরে নির্মমভাবে হত্যা করে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার প্রয়াস হিসেবে।

১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল। দেশ স্বাধীন হতে আর মাত্র তিন দিন বাকি। বেশ কিছু অঞ্চল ইতোমধ্যে মুক্ত হয়ে গেছে। সাংবাদিক সেলিনা পারভীন তখন বাস করতেন সিদ্ধেশ্বরীতে। ১১৫ নং নিউ সার্কুলার রোডে (বর্তমানে ২৯ নম্বর শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক) তাঁর বাড়িতে। তিনি ছেলে সুমন জাহিদকে গোসল শেষে ছোটভাই উজির উদ্দিনের সাথে খেলতে ছাদে পাঠিয়ে রান্না করছিলেন।

তখন আনুমানিক দুপুর ১.৩০ মিনিট বাজে। শহরে তখন কারফিউ। রাস্তায় মিলিটারি। পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য বিমান থেকে চিঠি ফেলা হচ্ছে। হঠাৎ দূরে একটা গাড়ির আওয়াজ হল। তাঁর  বাড়ির উল্টো দিকে খান আতার বাসার সামনে E.P.R.TC-এর ফিয়াট মাইক্রোবাস ও লরি থামল। সেই বাসার প্রধান গেইট ভেঙে ভিতরে ঢুকে গেল কিছু আল বদর কর্মী। তাদের সবাই একই রঙের পোশাক পরা ও মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা। একসময় তাঁর ফ্ল্যাটে এসেও কড়া নাড়ে তারা। সেলিনা পারভীন নিজে দরজা খুলে দেন। লোকগুলো তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এবং এ সময় তাঁর সাথে লোকগুলোর বেশ কিছু কথা হয়।

ঐ সময় তিনি ছেলে সুমনের মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন,

‘সুমন তুমি মামার সঙ্গে খেয়ে নিও, আমি যাব আর আসব’।

এটাই ছিল ছেলের সঙ্গে সেলিনা পারভীনের শেষ কথা। পরবর্তীতে জানা যায় চৌধুরী মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে সেদিন আলবদর বাহিনী সেলিনা পারভীনকে ধরে নিয়ে যায়। ১৭ ডিসেম্বর শহীদ মুনীর চৌধুরী ও কবীর চৌধুরীর ভাই শমসের চৌধুরীর কাছ থেকে তাঁর ভাই উজির ও মহসিন জানতে পারে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাঁর লাশ পড়ে আছে।

১৮ ডিসেম্বর সেলিনা পারভীনের গুলিতে-বেয়নেটে ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। ১৩ ডিসেম্বর যেদিন তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তখন তাঁর পরনে ছিল সাদা শাড়ি- ব্লাউজ, পায়ে সাদা মোজা। ফলে অনেক লাশের মধ্যেও তাঁকে দেখে সহজে সনাক্ত করতে পারেন তাঁর ভাই উজির ও মহসিন। ১৪ ডিসেম্বর আরও অনেক বুদ্ধিজীবীর মতো পাকিস্তানের দালাল আলবদর বাহিনীর ঘৃণিত নরপশুরা সেখানেই সেলিনা পারভীনকে হত্যা করে। ১৮ ডিসেম্বরেই তাকে আজিমপুর কবরস্থানে শহিদদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে সমাহিত করা হয়।

১৩ ডিসেম্বর দুপুরে বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর ওনাকে অনেক নির্যাতন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৩৫ বছর পরে জানা যায়। ওই ঘটনা সেলিনা পারভীনের একমাত্র ছেলে সুমন জাহিদকে বলেন মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন। উনাকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেলিনা পারভীনের মৃত্যুর কারণে উনি বেঁচে যান। পেছন থেকে হাত ছুটিয়ে, চোখ খুলে দৌঁড়ে পালান তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন সুমন জাহিদকে বলেন,

“যখন তিনদিন তাদের রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুর ফিজিকাল সেন্টারে রাখা হয়েছিল ওই সময় তাদের খেতে দেওয়া হয়নি, বসতে দেওয়া হয়নি। এমনকি প্রাকৃতিক কোন কাজও করতে দেওয়া হয়নি। বরং উনাদেরকে নির্যাতন করা হয়ছে। যে লিখতো তার আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছে। যে চোখের ডাক্তার ছিলেন তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। বুকের পাজর ভেঙ্গে কলিজা বের করে নেওয়া হয়েছে।”

রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শেষ সময়ে যখন সেলিনা পারভীনকে নিয়ে দাঁড় কারানো হয়, উনি বুঝতে পেরেছিলেন কি হচ্ছে। তখন উনি করুনভাবে বলেছেন-

‘তোমরা আমার ধর্মের ভাই। তোমরা আমার ধর্মের বাবা। আমাকে ছেড়ে দাও। ঘরে আমার আট বছরের একটা সন্তান আছে।’

ওরা সেলিনার কোন কথাই শোনেনি। উল্টো বেয়নেট দিয়ে তাঁর মুখ ফেড়ে দেয়। সেলিনা চিৎকার করছে। কথা গুলিয়ে যাচ্ছে। বেয়নেট উনার বুকে চার্জ করে। এরপর নিচে পরে গিয়ে যখন চিৎকার করেন তখন গুলি করে হত্যা করে।

১৯৯১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ সেলিনা পারভীনের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।

শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন ছিলেন একজন সূর্যসন্তান। কিন্তু স্বাধীনতার সূর্যের আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ তিনি দেখে যেতে পারেননি। নিজের রক্তে রঙিন করেছেন আমাদের লাল সবুজের পতাকা। রঙিন করেছেন আমাদের স্বাধীনতার সূর্য কে। আমরা পেয়েছি আমাদের বিজয়। যা আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। আর এই শ্রেষ্ঠ অর্জনে জীবন দিয়েছেন সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীন। তিনি আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন অথচ অমর এক প্রাণ শক্তিতে আমাদের সাহস দিয়ে যাচ্ছেন সত্য সুন্দরে আপোষহীন হতে।

 

তথ্যসূত্র:

১। বাংলা পিডিয়া।

২। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক সম্পাদক- মোঃ শাহ্ আলমগীর। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ।

৩। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল -২ এ  শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের একমাত্র সন্তান লেখক ও সংগঠক সুমন জাহিদ -এর সাক্ষ্য।

 

সেলিনা

লেখক: এমএসবি নাজনীন লাকী, সমাজকর্মী, msblucky16@gmail.com

ট্যাগ:
জনপ্রিয়

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ একমাত্র নারী সাংবাদিক সেলিনা পারভীন

প্রকাশ: ১২:৫৯:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০

এমএসবি নাজনীন লাকী: দেশপ্রেমে বলিয়ান সাংবাদিক সেলিনা পারভীন। তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা দায়িত্বশীল মানুষ, একজন স্বাধীন সাহসী কলম সৈনিক। একজন সংগ্রামী মা। কাগজে-কলমে-সংবাদে-সত্যে আপোষহীন সাংবাদিক। যিনি ১৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত সাংবাদিকতা করে গিয়েছেন।

তিনি “শিলালিপি” সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কাজ করেন সাপ্তাহিক ললনা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বিভাগে। তাছাড়াও তিনি সাপ্তাহিক বেগম, আজাদ, সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক পাকিস্তানে লিখতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের অংশ হিসেবে ১৩ ডিসেম্বর আল বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হওয়ার পর তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় এবং ১৮ ডিসেম্বর রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়।

সেলিনা পারভীনের জন্ম নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ছোট কল্যাণনগর গ্রামে ১৯৩১ সালের ৩১ মার্চ। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ফেনী জেলার ৩৬০, মাস্টার বাড়ি, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (সাবেক নাজির রোড)। তাঁর পিতা মৌলভী আবিদুর রহমান। মাতা মোসাম্মৎ সাজেদা খাতুন। তাঁর প্রকৃত নাম মনোয়ারা বেগম। ১৯৫৪ সালে তিনি এফিডেভিট করে সেলিনা পারভীন নাম গ্রহণ করেন।

ফেনীর সরলা বালিকা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেনীর পৈতৃক বাড়িটি ব্রিটিশ সরকার দখল করে নেয়। ফলে তাঁর পিতা মৌলভী আবিদুর রহমান সপরিবারে গ্রামে চলে যান।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই তিনি সাহিত্যের অনুরাগী হয়ে গল্প ও কবিতা লিখা শুরু করেন। গ্রামীণ কুসংস্কারের মারপ্যাঁচে তাঁর পড়ালেখার সাময়িক ইতি ঘটে। ১৯৪৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর অমতে তখনকার প্রথামত বিয়ে দেয়া হয়। তিনি ঐ বয়সে স্বামীর সাথে থাকার কথা ভাবতে পারেননি। ১০ বছর টিকেছিল সে বিয়ে অর্থাৎ ১৯৫৫ সালে তাঁর তালাক হয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি আবার পড়ালেখা শুরু করেন। ১৯৪৯ প্রাইভেট ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কৃতকার্য হননি।

১৯৪৫ সাল থেকেই তিনি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিজেকে স্বশিক্ষিত করে তুলেছিলেন। শুরুতে তিনি কবিতা লিখতেন। এরপর প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন লিখতেন ও প্রকাশ করতেন সাপ্তাহিক বেগম, আজাদ, সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক পূর্বদেশসহ বিভিন্ন পত্রিকায়।

তিনি প্রথম ঢাকায় আসেন ১৯৫৬ সালে আত্মনির্ভরশীলতা সংগ্রামে। ১৯৫৭ সালে তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালে নাসিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে মেট্রনের চাকরি নেন। পরের বছর কর্তৃপক্ষের সাথে মতের অমিল হওয়ায় তিনি চাকুরি ছেড়ে দেন। ১৯৬০-৬১ সালে আজিমপুর বেবিহোমে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬২ সালে পারিবারিক চাপে একজন রাজনীতিবিদকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। এই সংসারে ১৯৬৩ সালে তিনি ছেলে সুমন জাহিদকে জন্ম দেন। এবং ১৯৬৮ সালে এই বিয়েতেও ছাড়াছাড়ি হয়।

                                                                                                  ছবি: ছেলে সুমন জাহিদের সাথে সাংবাদিক সেলিনা পারভীন

১৯৬৫ সালে সলিমুল্লাহ এতিমখানায় কিছুকাল চাকরি করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় সম্পাদকের সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি ললনা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বিভাগে যোগ দেন। বিজ্ঞাপন সংগ্রহ, টাকা তোলাসহ সব কাজ একাই করতেন। পত্রিকা অফিস থেকে বেতন হিসাবে অনেক সময় তেমন কিছুই পেতেন না।

ললনায় কাজ করার সময় ১৯৬৯ সালে বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বের করেন “শিলালিপি” নামে একটি পত্রিকা। তিনি নিজেই এটি সম্পাদনা ও প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন। শিলালিপি ছিল তাঁর নিজের সন্তানের মত। তখন এই পত্রিকায় লিখতেন- শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হান, ড. বোরহান উদ্দিন খানসহ দেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীর লেখা নিয়ে প্রকাশিত শিলালিপি সকলেরই নজর কেড়েছিল। স্বাধীনতার পক্ষের পত্রিকা শিলালিপি। এই সুবাদে ঢাকার বুদ্ধিজীবী মহলে অনেকের সাথেই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন তিনি।

১৯৬৯-এর রাজনৈতিক আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। নিজেও শরিক হন গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন কর্মকাণ্ডে। ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে পড়তেন ‘৬৯-এর ২১ ফেব্রুয়ারি পল্টনের জনসভায় বা শহিদ মিনার থেকে বের হওয়া নারীদের মিছিলে যোগ দিতে। শরিক হতেন বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদসভাতেও। অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখদের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে সমাজতন্ত্রের প্রতিও আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। এরই মধ্যে শুরু হয় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় সেলিনা পারভীন ঢাকায় ছিলেন। তাঁর বাসায় মাঝে মাঝে রাতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আসতেন। খাওয়া-দাওয়া করে চলে যাওয়ার আগে তারা সেলিনা পারভীনের কাছ থেকে সংগৃহীত ঔষধ, কাপড় আর অর্থ নিয়ে যেতেন। শিলালিপির বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়েই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন।

চারিদিকে তখন চলছে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, প্রতিরোধ। চারপাশে শুধু বুলেটের শব্দ আর বারুদের গন্ধ, চিৎকার, গোঙানি, রক্তস্রোত আর মৃত্যু। এরই মাঝে ললনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। শিলালিপির উপরও নেমে আসে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর খড়গ। হাশেম খানের প্রচ্ছদ করা একটি শিলালিপির প্রকাশিতব্য সংখ্যা নিষিদ্ধ করে দেয় পাকিস্তান সরকার। পরে প্রকাশের অনুমতি মিললেও নতুনভাবে সাজানোর শর্ত দেয়া হয়। সেলিনা পারভীন বরাবরের মতো প্রচ্ছদ না নিয়ে তার ভাইয়ের ছেলের ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে শিলালিপির সর্বশেষ সংখ্যা বের করেন। কিন্তু এর আগের সংখ্যার জন্যই সেলিনা পারভীন পাকিস্তানি ও তাদের দালালদের নজরে পড়ে যান—যেটাতে ছিল দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের লেখা এবং স্বাধীনতার পক্ষের লেখা। স্বাধীনতার স্বপক্ষের বুদ্ধিজীবীদের লেখা দিয়ে বের করায় আবার পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পরেন সেলিনা পারভীন। শিলালিপির আরেকটি সংখ্যা বের করার আগেই তাঁকে পাকিস্তানি আল বদর বাহিনী অপহরণ করে এবং পরে নির্মমভাবে হত্যা করে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার প্রয়াস হিসেবে।

১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল। দেশ স্বাধীন হতে আর মাত্র তিন দিন বাকি। বেশ কিছু অঞ্চল ইতোমধ্যে মুক্ত হয়ে গেছে। সাংবাদিক সেলিনা পারভীন তখন বাস করতেন সিদ্ধেশ্বরীতে। ১১৫ নং নিউ সার্কুলার রোডে (বর্তমানে ২৯ নম্বর শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক) তাঁর বাড়িতে। তিনি ছেলে সুমন জাহিদকে গোসল শেষে ছোটভাই উজির উদ্দিনের সাথে খেলতে ছাদে পাঠিয়ে রান্না করছিলেন।

তখন আনুমানিক দুপুর ১.৩০ মিনিট বাজে। শহরে তখন কারফিউ। রাস্তায় মিলিটারি। পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য বিমান থেকে চিঠি ফেলা হচ্ছে। হঠাৎ দূরে একটা গাড়ির আওয়াজ হল। তাঁর  বাড়ির উল্টো দিকে খান আতার বাসার সামনে E.P.R.TC-এর ফিয়াট মাইক্রোবাস ও লরি থামল। সেই বাসার প্রধান গেইট ভেঙে ভিতরে ঢুকে গেল কিছু আল বদর কর্মী। তাদের সবাই একই রঙের পোশাক পরা ও মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা। একসময় তাঁর ফ্ল্যাটে এসেও কড়া নাড়ে তারা। সেলিনা পারভীন নিজে দরজা খুলে দেন। লোকগুলো তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এবং এ সময় তাঁর সাথে লোকগুলোর বেশ কিছু কথা হয়।

ঐ সময় তিনি ছেলে সুমনের মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন,

‘সুমন তুমি মামার সঙ্গে খেয়ে নিও, আমি যাব আর আসব’।

এটাই ছিল ছেলের সঙ্গে সেলিনা পারভীনের শেষ কথা। পরবর্তীতে জানা যায় চৌধুরী মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে সেদিন আলবদর বাহিনী সেলিনা পারভীনকে ধরে নিয়ে যায়। ১৭ ডিসেম্বর শহীদ মুনীর চৌধুরী ও কবীর চৌধুরীর ভাই শমসের চৌধুরীর কাছ থেকে তাঁর ভাই উজির ও মহসিন জানতে পারে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাঁর লাশ পড়ে আছে।

১৮ ডিসেম্বর সেলিনা পারভীনের গুলিতে-বেয়নেটে ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। ১৩ ডিসেম্বর যেদিন তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তখন তাঁর পরনে ছিল সাদা শাড়ি- ব্লাউজ, পায়ে সাদা মোজা। ফলে অনেক লাশের মধ্যেও তাঁকে দেখে সহজে সনাক্ত করতে পারেন তাঁর ভাই উজির ও মহসিন। ১৪ ডিসেম্বর আরও অনেক বুদ্ধিজীবীর মতো পাকিস্তানের দালাল আলবদর বাহিনীর ঘৃণিত নরপশুরা সেখানেই সেলিনা পারভীনকে হত্যা করে। ১৮ ডিসেম্বরেই তাকে আজিমপুর কবরস্থানে শহিদদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে সমাহিত করা হয়।

১৩ ডিসেম্বর দুপুরে বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর ওনাকে অনেক নির্যাতন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৩৫ বছর পরে জানা যায়। ওই ঘটনা সেলিনা পারভীনের একমাত্র ছেলে সুমন জাহিদকে বলেন মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন। উনাকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেলিনা পারভীনের মৃত্যুর কারণে উনি বেঁচে যান। পেছন থেকে হাত ছুটিয়ে, চোখ খুলে দৌঁড়ে পালান তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন সুমন জাহিদকে বলেন,

“যখন তিনদিন তাদের রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুর ফিজিকাল সেন্টারে রাখা হয়েছিল ওই সময় তাদের খেতে দেওয়া হয়নি, বসতে দেওয়া হয়নি। এমনকি প্রাকৃতিক কোন কাজও করতে দেওয়া হয়নি। বরং উনাদেরকে নির্যাতন করা হয়ছে। যে লিখতো তার আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছে। যে চোখের ডাক্তার ছিলেন তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। বুকের পাজর ভেঙ্গে কলিজা বের করে নেওয়া হয়েছে।”

রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শেষ সময়ে যখন সেলিনা পারভীনকে নিয়ে দাঁড় কারানো হয়, উনি বুঝতে পেরেছিলেন কি হচ্ছে। তখন উনি করুনভাবে বলেছেন-

‘তোমরা আমার ধর্মের ভাই। তোমরা আমার ধর্মের বাবা। আমাকে ছেড়ে দাও। ঘরে আমার আট বছরের একটা সন্তান আছে।’

ওরা সেলিনার কোন কথাই শোনেনি। উল্টো বেয়নেট দিয়ে তাঁর মুখ ফেড়ে দেয়। সেলিনা চিৎকার করছে। কথা গুলিয়ে যাচ্ছে। বেয়নেট উনার বুকে চার্জ করে। এরপর নিচে পরে গিয়ে যখন চিৎকার করেন তখন গুলি করে হত্যা করে।

১৯৯১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ সেলিনা পারভীনের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।

শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন ছিলেন একজন সূর্যসন্তান। কিন্তু স্বাধীনতার সূর্যের আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ তিনি দেখে যেতে পারেননি। নিজের রক্তে রঙিন করেছেন আমাদের লাল সবুজের পতাকা। রঙিন করেছেন আমাদের স্বাধীনতার সূর্য কে। আমরা পেয়েছি আমাদের বিজয়। যা আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। আর এই শ্রেষ্ঠ অর্জনে জীবন দিয়েছেন সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীন। তিনি আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন অথচ অমর এক প্রাণ শক্তিতে আমাদের সাহস দিয়ে যাচ্ছেন সত্য সুন্দরে আপোষহীন হতে।

 

তথ্যসূত্র:

১। বাংলা পিডিয়া।

২। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক সম্পাদক- মোঃ শাহ্ আলমগীর। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ।

৩। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল -২ এ  শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের একমাত্র সন্তান লেখক ও সংগঠক সুমন জাহিদ -এর সাক্ষ্য।

 

সেলিনা

লেখক: এমএসবি নাজনীন লাকী, সমাজকর্মী, msblucky16@gmail.com