ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে সাক্ষাৎ করেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে তারা আলোচনা করেন।
বৈঠকের শুরুতে জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের আগের বৈঠকের পর থেকে কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) ও পররাষ্ট্রসচিব চীন সফর করেছেন এবং আমাদের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমি আনন্দিত যে আজ এ নিয়ে আরও মতবিনিময় করার সুযোগ পেলাম।”
বৈঠক নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জয়শঙ্কর বলেন, ভারত-চীন সম্পর্ক কঠিন সময় পার করলেও এমন বৈঠক পারস্পরিক মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এটি ছিল জয়শঙ্কর ও ওয়াং ই-এর মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠক। এর আগে ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ব্রাজিলে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে তাদের সাক্ষাৎ হয়েছিল, যা অক্টোবর ২০২৪ সালে রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে হওয়া আলোচনার ধারাবাহিকতা।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট শি-এর বৈঠকটি হয়েছিল ভারতের সঙ্গে চীনের পূর্ব লাদাখের লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) সংলগ্ন পশ্চিমাঞ্চলে সীমান্ত বাহিনী প্রত্যাহারের চুক্তির দু’দিন পর। ওই চুক্তির মাধ্যমে পূর্ব লাদাখের শেষ দুই সংঘর্ষস্থল – ডেমচক ও দেপসাং-এর বিরোধ মীমাংসিত হয়।
ভারত ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই জোহানেসবার্গ বৈঠক এমন এক সময়ে হলো, যখন দুই দেশ ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে কৈলাশ মানসসরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
এছাড়া, উভয় দেশ নীতিগতভাবে সরাসরি বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু করা এবং আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর জলবিদ্যুৎ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়সহ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তগুলো চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্র ও চীনের ভাইস ফরেন মিনিস্টারের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেওয়া হয়েছিল।
২০২০ সালের জুন মাসে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যেখানে ২০ জন ভারতীয় সেনা শহীদ হন। চীনেরও বিপুলসংখ্যক সেনা হতাহত হয়েছিল, যদিও তারা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
এই ঘটনার পর উভয় দেশ সীমান্তে সেনা সমাবেশ বাড়ায়। পরে একাধিক সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে গালওয়ান উপত্যকা (জুলাই ২০২০), প্যাংগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ তীর (ফেব্রুয়ারি ২০২১), গোগরা (আগস্ট ২০২১) এবং হট স্প্রিংস (সেপ্টেম্বর ২০২২) থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়।
তবে পূর্ব লাদাখের শেষ দুই সংঘর্ষস্থল – ডেমচক ও দেপসাং-এর বিষয়ে কোনো সমাধান হয়নি, যা শেষ পর্যন্ত অক্টোবর ২০২৪ সালে চুক্তির মাধ্যমে সমাধান হয়। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক