বৃহস্পতিবার (১ জুন) উত্তর প্রদেশের বাহরইচে, ভারত-নেপাল সীমান্ত বরাবর উত্তর প্রদেশের প্রথম স্থল বন্দরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ‘প্রচন্ড’। এদিন সকাল সাড়ে এগারোটায় নয়া দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই ‘রূপাইডিহা ল্যান্ড পোর্ট’-এর উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এই স্থল বন্দরটি তৈরি করেছে ভারতের ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি। ল্যান্ড পোর্ট হল আন্তর্জাতিক সীমান্তের এক অংশ, যেখান দিয়ে পণ্যবাহী এবং যাত্রীবাহী যানবাহন পরিবহণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রূপাইডিহা স্থলবন্দরটি তৈরি করা হয়েছে ১১৫ একর জমির উপর, খরচ হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ভারত-নেপাল আন্তর্জাতিক সীমান্তের দুই পাশেই বেশ কয়েকটি চেক পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্তের দুই পাশের এই চেকপয়েন্টগুলিতে এক ছাদের নীচেই দুই দেশের শুল্ক, অভিবাসন ও অন্যান্য পরিষেবা বিভাগগুলিকে আনা হয়েছে। এর ফলে পণ্যবাহী ট্রাকগুলির আন্তঃসীমান্ত পরিবহণ আরও সহজতর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্থলবন্দরটি উদ্বোধনের আগে, নয়া দিল্লির ‘হায়দরাবাদ হাউসে’ এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন ভারত এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রীরা। শক্তি, যোগাযোগ, বাণিজ্যের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে, ভারত ও নেপাল দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। অর্থনীতি, সীমান্ত সমস্যা এবং পরিকাঠামোর উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে। বাণিজ্য ও জ্বালানি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দুই পক্ষের মধ্যে সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে দুই দেশের অংশীদারিত্বকে ‘সুপার হিট’ করার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। রূপাইডিহা স্থল বন্দর উদ্বোধনের পাশাপাশি বিহারের বাথনাহা থেকে নেপাল কাস্টম ইয়ার্ড পর্যন্ত একটি পণ্যবাহী ট্রেনের যাত্রার সূচনাও করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকের পর, নেপালের প্রধানমন্ত্রী ‘প্রচন্ড’-এর উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “আমরা আমাদের সম্পর্ককে হিমালয়ের উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। সেই চেতনাতেই আমরা সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা-সহ সমস্ত সমস্যার সমাধান করব। দুই দেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বন্ধন আরও জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড এবং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, রামায়ণ সার্কিট সম্পর্কিত প্রকল্পগুলির কাজে দ্রুততা আনা হবে।”
বুধবারই, চারদিনের সফরে ভারতে পা রেখেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকুমার দহল। গত ডিসেম্বর মাসেই নেপালের ক্ষমতায় এসেছে প্রচণ্ড সরকার। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পর, প্রথম বিদেশ সফরেই তিনি ভারতে এলেন। ভারতে আসার পর প্রথমেই নেপালি প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে। এদিন প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা প্রচণ্ডর। সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি এই সফরে উজ্জয়িন এবং ইন্দোর ভ্রমণও করবেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী।
ভারতে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত শঙ্কর পি শর্মা, তাঁদের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে ‘গুডউইল ভিসিট’ বলেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, নেপালি প্রধানমন্ত্রীর এই ভারত সফর নেপাল এবং ভারতের সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রা দেবে। এর আগে, ২০২২ সালের এপ্রিলে নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা নয়া দিল্লি সফরে এসেছিলেন। তার পরের মাসেই নেপালের লুম্বিনি শহরের সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক