ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতীয় নেভীর এক দৃশ্যমান, বিশ্বাসযোগ্য এবং প্রতিক্রিয়াশীল উপস্থিতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ২৮ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, নয়াদিল্লীতে নেভাল কমান্ডার কনফারেন্সের সমাপনী দিনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
রাজনাথ বলেন, “আমাদের নিয়মানুবর্তিতা, ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং কার্যক্রমের দরুণ ভারত মহাসাগর অঞ্চলের অন্যতম পছন্দের এবং গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদারে পরিণত হয়েছি আমরা।” এসময়, সম্প্রতি ভারতীয় নেভীর তত্ত্বাবধানে ৩৯ টি দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মহড়া ‘মিলান’ এর সফল পরিসমাপ্তিতে নৌবাহিনীকে অভিনন্দন জানান রাজনাথ।
আলোচনাকালে, ভারতীয় নেভীর যোগ্য সেনানীদের পেশাদারিত্ব এবং আত্মত্যাগের ভূয়সী প্রশংসা করেন রাজনাথ। তিনি বলেন, “জাতির সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষা এবং ক্রমশ উর্ধ্বগামী ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অনবদ্য ভূমিকা রাখেছে নৌবাহিনী। এসময়, সাম্প্রতি মাসগুলোতে ভারতীয় নেভী কর্তৃক নিজ সমুদ্র সীমায় পরিচালিত মাদক বিরোধী অভিযান, সফল উদ্ধার অভিযান, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্র প্রদেশে বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণের ব্যাপক প্রশংসা করেন মোদী মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রী।
এক পর্যায়ে বিশ্বজুড়ে বিরাজমান নিরাপত্তা অবস্থা নিয়েও মতবিনিময় করেন রাজনাথ। চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ প্রমাণ করেছে আত্মনির্ভরশীলতার প্রয়োজনীয়তা ও ব্যাপকতা!”
বক্তব্য প্রদানকালে সরকারের আত্মনির্ভর ভারত গঠন উদ্যোগের প্রশংসা করেন রাজনাথ। একই সঙ্গে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে অগ্রগামী ভূমিকা রাখায় ভারতীয় নৌবাহিনীর নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।
রাজনাথ সিং বলেন, “নৌবাহিনীকে অবশ্যই আত্মনির্ভরতার পথের নেতৃত্ব দিতে হবে এবং ভারতের সমুদ্র বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং জাতীয় সমৃদ্ধির প্রয়োজনীয় গ্যারান্টার হিসেবে থাকতে হবে।”
ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “এটি লক্ষ্য করা আনন্দদায়ক যে সরকারের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, নৌবাহিনী তার মূলধন বাজেটের ৬৪% এরও বেশি আমাদের নিজস্ব অর্থনীতিতে পুনঃবিনিয়োগ করেছে। এই পরিমাণটি চলতি আর্থিক বছরে দেশীয় ক্রয়ের দিকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত!”
তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন যে, ভারতের নির্মিতব্য ৪১ টি জাহাজ ও সাবমেরিনের মধ্যে ৩৯ টি ভারতীয় শিপইয়ার্ডে তৈরি হচ্ছে। রাজনাথ বলেন, “এখন পর্যন্ত যে গতিবেগ অর্জন করা হয়েছে তার ওপর ভরসা করা গুরুত্বপূর্ণ।”
এই প্রেক্ষাপটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সিং ঊর্ধ্বতন নৌ নেতৃত্বকে ভবিষ্যৎ সক্ষমতা বিকাশের উপর তাদের ফোকাস বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেন, যাতে দেশের সামুদ্রিক শক্তি দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের সাথে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পায়।
ভারতের প্রথম দেশীয় বিমানবাহী বাহক (আইএসি) এর অগ্রগতি এবং তিনটি সামুদ্রিক পরীক্ষা সফলভাবে সমাপ্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিক্রান্তের বিতরণ আরেকটি মাইলফলক ঘটনা হবে। আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ তম বছরে জাহাজটি বিতরণ এবং চালু করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা দরকার, যা ‘আজাদিকা অমৃত মহোৎসভ’-এর জন্য উপযুক্ত শ্রদ্ধা হবে!”
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আত্মনির্ভর ভারত গঠনের দিকে বিশেষ মনযোগ দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার। সাম্প্রতিক জরিপেও দেখা গিয়েছে, সামরিক ব্যায়ের দিক দিয়ে রাশিয়াকেও পেছনে ফেলেছে ভারত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরই তৃতীয় অবস্থানে ভারত। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক