প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব, সাইবার সুরক্ষা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্থিতিস্থাপকতা এবং ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়াতে ঐক্যমতে পৌঁছেছে ভারত এবং যুক্তরাজ্য। ২২ এপ্রিল, শুক্রবার, দিল্লি সফরের দ্বিতীয় দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে সম্মত হন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ ব্রিফিং এ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দ্বিপক্ষীয় মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি আগামী অক্টোবর নাগাদ সম্পন্ন হতে পারে।”
দুই শীর্ষ নেতার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতি প্রদান করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, “গত বছর ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চলতি দশকের শেষ নাগাদ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্য স্বরূপ “রোডম্যাপ-২০৩০” ঘোষণা করেছে দু দেশ। আজকের বৈঠকেও এই রোডম্যাপের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছেন দুই শীর্ষ নেতা। ভবিষ্যতের জন্যেও কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে আজ।”
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সাইবারস্পেসের মাধ্যমে একটি ডিজিটাল জীবন্ত সেতু তৈরী হয়েছে, যা আমাদের নাগরিক, শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করতে এবং আমাদের ভাগ করা সমৃদ্ধির প্রচার করতে দেয়। যেহেতু আমরা নতুন সুযোগের সদ্ব্যবহার করি, তাই এই খাতে আমাদের অবশ্যই ক্রমবর্ধমান হুমকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে।” উল্লেখ্য, গতবছর মে মাসে নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব বাঁড়াতে ও সাইবার গভর্ন্যান্সের উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করতে সম্মত হয়েছিলেন মোদী ও জনসন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “অফলাইনে বিশ্ব ব্যবস্থা যেরূপ, একইভাবে অনলাইন কার্যক্রমকেও একটি আন্তর্জাতিক নীতি-নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। আমরা ক্রমাগত হুমকির বিরুদ্ধে অ্যাডভান্সড প্রশমন কৌশলগুলোর পাশাপাশি সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় সহযোগিতাকে আরও গভীর করব।”
দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার ঝুঁকি কমাতে দায়িত্বশীল রাষ্ট্রের আচরণের স্বেচ্ছাসেবী এবং বাধ্যতামূলক নিয়মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয় ভারত ও যুক্তরাজ্য। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে ‘সাইবারস্পেসে আচরণ’ এবং ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে তথ্য ও টেলিযোগাযোগ’ ক্ষেত্রে উন্নয়নের উপর ‘ওপেন এন্ডেড ওয়ার্কিং গ্রুপ’ এসবেরই প্রমাণ।”
যৌথ বিবৃতি অনুসারে, “উভয় পক্ষ জাতিসংঘের কাঠামোর অধীনে আইসিটি-এর অপরাধীদের দ্বারা ব্যবহার প্রতিরোধে একটি বিস্তৃত আন্তর্জাতিক কনভেনশন বিশদ করতে কাজ করবে যাতে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ, দমন, প্রশমন, তদন্ত এবং বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা যায়। সাইবার অপরাধের শিকার এবং ডেটা সুরক্ষা সহ যথাযথ সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করা যায়।”
এসময়, ইন্টারন্যাশনাল কাউন্টার র্যানসমওয়্যার ইনিশিয়েটিভের অধীনে ভারত এবং যুক্তরাজ্য ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় কাজ করছে বলেও জানানো হয়। বলা হয়, “ভারত এবং যুক্তরাজ্য তাদের পারস্পরিক সাইবার স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য অংশীদারিত্বে কাজ করবে। একটি সামগ্রিক এবং সমগ্র-সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পন্ন করতে চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বিষয়ে পরের সপ্তাহে আলোচনার পরবর্তী ধাপ শুরু হবে। চলতি বছরের দিওয়ালির আগেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শেষ করতে চাইছে দু দেশ। এই দশকের শেষ নাগাদ ভারত ও যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে।
এদিকে, যৌথ ব্রিফিং এর এক পর্যায়ে ভারতীয় করোনা টিকার কার্যকারিতা নিয়েও কথা বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমরা একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছি। অক্সফোর্ড (বিশ্ববিদ্যালয়) এবং সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (এসআইআই) যৌথ উদ্যোগে (করোনাভাইরাস টিকা) তৈরি করা হয়েছে। যা ১০০ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দিতে ব্যবহৃত হয়েছে। আমিও ভারতীয় করোনা টিকা নিয়েছি। যা ভালো কাজ করেছে। ভারতকে ধন্যবাদ।”
এদিকে, ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও গভীর করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, ”ব্রিটেন ভারতীয় পরিকল্পনায় তৈরি ফাইটার জেটের জন্য সাহায্য করবে। এছাড়াও ভারত মহাসাগরে থাকা হুমকির জবাব ও শনাক্তকরণে নতুন প্রযুক্তির জন্য ভারতের সব ধরনের প্রয়োজনকে সমর্থনের চেষ্টা করবে ব্রিটেন। স্থল, সমুদ্র, বায়ু, মহাকাশ এবং সাইবার দুনিয়া জুড়ে নতুন হুমকির মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে আমরা সম্মত হয়েছি। যার মধ্যে নতুন ফাইটার জেট এবং সামুদ্রিক প্রযুক্তিতে অংশীদারিত্বও রয়েছে। যাতে সমুদ্র-ক্ষেত্রের হুমকিও শনাক্ত করা যায় এবং তার জবাব দেওয়া যায়।”
ব্রিফিংকালে কোপ-২৬ এর সময় গৃহীত রেজুলেশন নিয়েও কথা বলেন দুই প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ব্রিটেনে অবস্থানরত ভারতীয় প্রবাসীদের নিয়েও বিস্তর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। একই সাথে, সন্ত্রাসবাদ ও বর্তমান বৈশ্বিক ইস্যুতেও মতবিনিময় করেন দুই বিশ্ব নেতা।
উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো দুদিনের সফরে ভারতে এসেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গতকাল ভারতে নেমেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছিলেন, “ভারতের সাথে যুক্তরাজ্যের অংশীদারিত্ব বর্তমান বিশ্বে ঝড়ো সমুদ্রের আলোকবর্তিকা। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শক্তি সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা পর্যন্ত আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আমাদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাই।”
প্রসঙ্গত, গত বছর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্য স্বরূপ “রোডম্যাপ-২০৩০” ঘোষণা করা হয়। এই রোডম্যাপের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, দু দেশের মধ্যকার বিদ্যমান বাণিজ্য সম্পর্ক দ্বিগুণ করা এবং আর্থিক ভিত্তি মজবুত করা। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক