০৪:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলতি বছরেই ভারত-যুক্তরাজ্য এফটিএ চান মোদী-জনসন

চলতি বছরের শেষ নাগাদ ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পন্ন করতে চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২২ এপ্রিল, শুক্রবার, নয়াদিল্লিতে ভারত সরকারের সুপ্রিমোর সঙ্গে বৈঠক শেষে জনসন বলেন, “পরের সপ্তাহে আলোচনার পরবর্তী ধাপ শুরু হবে। এ বছরের দিওয়ালির আগেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শেষ করতে মধ্যস্থতাকারীদের বলেছি। এই দশকের শেষ নাগাদ ভারতে আমাদের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে।”

এদিকে, জনসনের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “গত বছর আমাদের মধ্যে একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চলতি দশকের শেষ নাগাদ আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্য স্বরূপ “রোডম্যাপ-২০৩০” ঘোষণা করেছি। আজকের বৈঠকেও আমরা এই রোডম্যাপের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছি। ভবিষ্যতের জন্যেও কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে আজ।”

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে মোদী বলেন, “উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দল মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়ে কাজ করছে। আলোচনা ভালভাবে এগিয়ে চলেছে এবং এই বছরের শেষ নাগাদ এফটিএ শেষ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা হচ্ছে।”

এসময়, অস্ট্রেলিয়া ও আরব আমিরাতের সাথে সম্প্রতি হওয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা বলেন তিনি। মোদী বলেন, “আমরা একই প্রতিশ্রুতি ও গতির সাথে যুক্তরাজ্যের সাথেও এফটিএ সম্পন্ন করতে চাই। আমরা প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়াতেও সম্মত হয়েছি। আমরা ‘স্বনির্ভর ভারত’-এর জন্য উত্পাদন, প্রযুক্তি, নকশা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সমর্থনকে স্বাগত জানাই।”

মোদীর সাথে বৈঠকের বিষয়ে জনসন বলেন, “আমাদের দারুণ কথা হয়েছে। সবদিক থেকে মজবুত হয়েছে আমাদের সম্পর্ক। বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে ভারত এবং ব্রিটেনের যে সম্পর্ক আছে, তা বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

নাম না করে চীনকে বার্তা দিয়ে জনসন বলেন, “গত বছর থেকে স্বৈরাচারী জোটের তরফ থেকে বিপদ তৈরি হচ্ছে। তাই ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে মুক্ত রাখার জন্য আমাদের সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে মুক্ত রাখতে আকাশপথ, মহাকাশ এবং সমুদ্রপথে সমস্যার মোকাবিলা করতে একমত হয়েছি আমরা। নিজেদের দেশে তৈরি শক্তির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই সফরের ফলে আমাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে।”

যৌথ বিবৃতির এক পর্যায়ে ভারতীয় করোনা টিকার কার্যকারিতা নিয়েও কথা বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমরা একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছি। অক্সফোর্ড (বিশ্ববিদ্যালয়) এবং সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (এসআইআই) যৌথ উদ্যোগে (করোনাভাইরাস টিকা) তৈরি করা হয়েছে। যা ১০০ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দিতে ব্যবহৃত হয়েছে। আমিও ভারতীয় করোনা টিকা নিয়েছি। যা ভালো কাজ করেছে। ভারতকে ধন্যবাদ।”

এদিকে, ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও গভীর করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, ”ব্রিটেন ভারতীয় পরিকল্পনায় তৈরি ফাইটার জেটের জন্য সাহায্য করবে। এছাড়াও ভারত মহাসাগরে থাকা হুমকির জবাব ও শনাক্তকরণে নতুন প্রযুক্তির জন্য ভারতের সব ধরনের প্রয়োজনকে সমর্থনের চেষ্টা করবে ব্রিটেন। স্থল, সমুদ্র, বায়ু, মহাকাশ এবং সাইবার দুনিয়া জুড়ে নতুন হুমকির মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে আমরা সম্মত হয়েছি। যার মধ্যে নতুন ফাইটার জেট এবং সামুদ্রিক প্রযুক্তিতে অংশীদারিত্বও রয়েছে। যাতে সমুদ্র-ক্ষেত্রের হুমকিও শনাক্ত করা যায় এবং তার জবাব দেওয়া যায়।”

ব্রিফিংকালে কোপ-২৬ এর সময় গৃহীত রেজুলেশন নিয়েও কথা বলেন দুই প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ব্রিটেনে অবস্থানরত ভারতীয় প্রবাসীদের নিয়েও বিস্তর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও বর্তমান বৈশ্বিক ইস্যুতেও মতবিনিময় করেন দুই বিশ্ব নেতা।

উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো দুদিনের সফরে ভারতে এসেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গতকাল ভারতে নেমেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছিলেন, “ভারতের সাথে যুক্তরাজ্যের অংশীদারিত্ব বর্তমান বিশ্বে ঝড়ো সমুদ্রের আলোকবর্তিকা। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শক্তি সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা পর্যন্ত আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আমাদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাই।”

প্রসঙ্গত, গত বছর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্য স্বরূপ “রোডম্যাপ-২০৩০” ঘোষণা করা হয়। এই রোডম্যাপের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, দু দেশের মধ্যকার বিদ্যমান বাণিজ্য সম্পর্ক দ্বিগুণ করা এবং আর্থিক ভিত্তি মজবুত করা। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

 

ট্যাগ:

চলতি বছরেই ভারত-যুক্তরাজ্য এফটিএ চান মোদী-জনসন

প্রকাশ: ১০:৪৯:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২

চলতি বছরের শেষ নাগাদ ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পন্ন করতে চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২২ এপ্রিল, শুক্রবার, নয়াদিল্লিতে ভারত সরকারের সুপ্রিমোর সঙ্গে বৈঠক শেষে জনসন বলেন, “পরের সপ্তাহে আলোচনার পরবর্তী ধাপ শুরু হবে। এ বছরের দিওয়ালির আগেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শেষ করতে মধ্যস্থতাকারীদের বলেছি। এই দশকের শেষ নাগাদ ভারতে আমাদের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে।”

এদিকে, জনসনের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “গত বছর আমাদের মধ্যে একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চলতি দশকের শেষ নাগাদ আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্য স্বরূপ “রোডম্যাপ-২০৩০” ঘোষণা করেছি। আজকের বৈঠকেও আমরা এই রোডম্যাপের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছি। ভবিষ্যতের জন্যেও কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে আজ।”

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে মোদী বলেন, “উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দল মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়ে কাজ করছে। আলোচনা ভালভাবে এগিয়ে চলেছে এবং এই বছরের শেষ নাগাদ এফটিএ শেষ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা হচ্ছে।”

এসময়, অস্ট্রেলিয়া ও আরব আমিরাতের সাথে সম্প্রতি হওয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা বলেন তিনি। মোদী বলেন, “আমরা একই প্রতিশ্রুতি ও গতির সাথে যুক্তরাজ্যের সাথেও এফটিএ সম্পন্ন করতে চাই। আমরা প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়াতেও সম্মত হয়েছি। আমরা ‘স্বনির্ভর ভারত’-এর জন্য উত্পাদন, প্রযুক্তি, নকশা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সমর্থনকে স্বাগত জানাই।”

মোদীর সাথে বৈঠকের বিষয়ে জনসন বলেন, “আমাদের দারুণ কথা হয়েছে। সবদিক থেকে মজবুত হয়েছে আমাদের সম্পর্ক। বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে ভারত এবং ব্রিটেনের যে সম্পর্ক আছে, তা বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

নাম না করে চীনকে বার্তা দিয়ে জনসন বলেন, “গত বছর থেকে স্বৈরাচারী জোটের তরফ থেকে বিপদ তৈরি হচ্ছে। তাই ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে মুক্ত রাখার জন্য আমাদের সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে মুক্ত রাখতে আকাশপথ, মহাকাশ এবং সমুদ্রপথে সমস্যার মোকাবিলা করতে একমত হয়েছি আমরা। নিজেদের দেশে তৈরি শক্তির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই সফরের ফলে আমাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে।”

যৌথ বিবৃতির এক পর্যায়ে ভারতীয় করোনা টিকার কার্যকারিতা নিয়েও কথা বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমরা একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছি। অক্সফোর্ড (বিশ্ববিদ্যালয়) এবং সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (এসআইআই) যৌথ উদ্যোগে (করোনাভাইরাস টিকা) তৈরি করা হয়েছে। যা ১০০ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দিতে ব্যবহৃত হয়েছে। আমিও ভারতীয় করোনা টিকা নিয়েছি। যা ভালো কাজ করেছে। ভারতকে ধন্যবাদ।”

এদিকে, ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও গভীর করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, ”ব্রিটেন ভারতীয় পরিকল্পনায় তৈরি ফাইটার জেটের জন্য সাহায্য করবে। এছাড়াও ভারত মহাসাগরে থাকা হুমকির জবাব ও শনাক্তকরণে নতুন প্রযুক্তির জন্য ভারতের সব ধরনের প্রয়োজনকে সমর্থনের চেষ্টা করবে ব্রিটেন। স্থল, সমুদ্র, বায়ু, মহাকাশ এবং সাইবার দুনিয়া জুড়ে নতুন হুমকির মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে আমরা সম্মত হয়েছি। যার মধ্যে নতুন ফাইটার জেট এবং সামুদ্রিক প্রযুক্তিতে অংশীদারিত্বও রয়েছে। যাতে সমুদ্র-ক্ষেত্রের হুমকিও শনাক্ত করা যায় এবং তার জবাব দেওয়া যায়।”

ব্রিফিংকালে কোপ-২৬ এর সময় গৃহীত রেজুলেশন নিয়েও কথা বলেন দুই প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ব্রিটেনে অবস্থানরত ভারতীয় প্রবাসীদের নিয়েও বিস্তর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও বর্তমান বৈশ্বিক ইস্যুতেও মতবিনিময় করেন দুই বিশ্ব নেতা।

উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো দুদিনের সফরে ভারতে এসেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গতকাল ভারতে নেমেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছিলেন, “ভারতের সাথে যুক্তরাজ্যের অংশীদারিত্ব বর্তমান বিশ্বে ঝড়ো সমুদ্রের আলোকবর্তিকা। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শক্তি সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা পর্যন্ত আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আমাদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাই।”

প্রসঙ্গত, গত বছর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্য স্বরূপ “রোডম্যাপ-২০৩০” ঘোষণা করা হয়। এই রোডম্যাপের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, দু দেশের মধ্যকার বিদ্যমান বাণিজ্য সম্পর্ক দ্বিগুণ করা এবং আর্থিক ভিত্তি মজবুত করা। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক