মার্কিন মুল্লুকের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সদ্য সমাপ্ত ৪র্থ ২+২ মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে নিজের মূল্যায়ন ব্যক্ত করেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যবস্থা নেয়া থেকে আরম্ভ করে করোনা মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কিংবা সামুদ্রিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে উদীয়মান প্রযুক্তির প্রচার, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একসাথে যা করবে, তাই দৃশ্যমান পার্থক্য এনে দিবে।”
বৈঠকের সূচনালগ্নেই ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ভারত-মার্কিন সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবেই অগ্রসর হয়েছে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানেও দৃশ্যমান প্রভাব দেখাচ্ছে।”
৪র্থ ২+২ মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিয়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, “কিছুক্ষণ পূর্বে রাষ্ট্রপতি বাইডেন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভার্চুয়াল বৈঠকে আমরা উপস্থিত ছিলাম। আমরা এই বৈঠকের কথোপকথন থেকে নিঃসন্দেহে উপকৃত হয়েছি।”
মোদী মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য আরও বলেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, কার্যত এমন কোন ক্ষেত্র নেই, যেখানে আমরা একে অপরের সাথে সহযোগিতা করছি না। আমাদের মধ্যে বিদ্যমান সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জের বিস্তৃতি এমন যে, সেগুলো ক্রস কাটিং সংলাপের মাধ্যমে আরও কার্যকরভাবে সমাধান করা সম্ভব। সেজন্যে ২+২ বৈঠক দিনকে দিন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।”
জয়শঙ্কর বলেন, “যেহেতু আমরা চতুর্থবারের মত এই বৈঠকে অংশ নিচ্ছি, এটুকু বলতে পারি যে, আমরা যে পরিমাণ অগ্রগতি করেছি, তাতে আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারি। আমাদের মধ্যে ১৬০ বিলিয়ন ডলারের ট্রেড একাউন্ট, ২০০,০০০ ছাত্রদের সুযোগ প্রদান সহ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা সহ সকল খাতেই আমাদের বেশ ভালো ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়েছে।”
আঞ্চলিক ইস্যুর ক্ষেত্রে মার্কিন-ভারত সম্পর্ক নিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের ঘনিষ্ঠতার একটি উল্লেখযোগ্য ফোকাস ইন্দো-প্যাসিফিকের সাথে সম্পর্কিত। কোয়াড গঠন এবং এর প্রয়োজনীয়তাও পূর্বোক্ত বিষয়টির সাথেই সম্পর্কযুক্ত। এ বিষয়ে আমাদের আরও সুচারুভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিয়ম-ভিত্তিক ইন্দো-প্যাসিফিক এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেয়। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য আমাদের অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এসময়, বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, দ্রব্যমূল্য এবং লজিস্টিক ব্যাঘাত নিয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেন জয়শঙ্কর। পাশাপাশি আফগানিস্তান এবং ইউক্রেন ইস্যুতেও উপস্থিত অন্য নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি।
একইভাবে, বৈশ্বিক জ্বালানী, প্রতিরক্ষা, উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক অংশীদারিত্বের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য কোয়াড সম্পর্কের স্থিতিশীলতার উপরও জোর দেন অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক। জন্য, কোয়াড দেশগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক বাণিজ্য, ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম এবং উন্নয়ন বরাদ্দ আরও বাড়ানোর বিষয়ে মত দেন তিনি।
এর আগে, এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে বৈঠকে বসেছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানেও ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্বের জয়গান করা হয়েছিলো উভয় রাষ্ট্রপ্রধানের তরফে। পাশাপাশি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থানের ব্যাখ্যাও দেন মোদী।
এদিকে, ২+২ বৈঠকে, ভারতের মহাকাশ বিভাগ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে একটি চুক্তি, নিকট ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংলাপ শুরু করা, সামরিক মহড়ার পরিধি বাড়ানো, সাইবার-ইন্টারনেট সুরক্ষা, বিশেষ বাহিনী, বাণিজ্য উদ্যোগ এবং আলোচনাধীন অন্যান্য উদ্যোগ নিয়ে বিশদ কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ভারত-মার্কিন এফটিএ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক