সমাপ্ত হলো বহুল প্রতীক্ষিত ৪র্থ ভারত-মার্কিন ২+২ মন্ত্রীপর্যায়ের সংলাপ। গত ১১ এপ্রিল, সোমবার, মার্কিন মুল্লুকের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। অন্যদিকে, মার্কিন প্রতিনিধিত্ব করেন বাইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন।
এসময়, বৈশ্বিক জ্বালানী, প্রতিরক্ষা, উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক অংশীদারিত্বের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন উপস্থিত চার মন্ত্রী। ইউক্রেনের ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট মোকাবেলায় সম্ভাব্য করণীয় নিয়েও বিস্তর আলোচনা করেছেন তারা। বৈঠকের পর এক যৌথ প্রেস বিবৃতিতে সংলাপের আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়। সেখানে, ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও মজবুতের উপর জোর দেয়া হয়েছে।
বিবৃতি অনুসারে, ইউক্রেনে মানবিক সংঘাত বন্ধ ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের পথ সন্ধানের আহবান জানিয়েছেন মন্ত্রীগণ। দ্ব্যর্থহীনভাবে বেসামরিক মৃত্যুর নিন্দা করেছেন তারা। সমসাময়িক বৈশ্বিক ব্যবস্থা, জাতিসংঘের সনদ, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সমস্ত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে অবিলম্বে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন বন্ধের ডাক দেন মন্ত্রীগণ।
পাশাপাশি, একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য কোয়াড সম্পর্কের স্থিতিশীলতার উপরও জোর দেন তারা। এজন্য, কোয়াড দেশগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক বাণিজ্য, ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম এবং উন্নয়ন বরাদ্দ আরও বাড়ানোর বিষয়ে বিশদ মতবিনিময় করেন চার মন্ত্রী।
এর আগে, এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে বৈঠকে বসেছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানেও ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্বের জয়গান করা হয়েছিলো উভয় রাষ্ট্রপ্রধানের তরফে। পাশাপাশি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থানের ব্যাখ্যাও দেন মোদী।
এদিকে, ২+২ বৈঠকে, ভারতের মহাকাশ বিভাগ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে একটি চুক্তি, নিকট ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংলাপ শুরু করা, সামরিক মহড়ার পরিধি বাড়ানো, সাইবার-ইন্টারনেট সুরক্ষা, বিশেষ বাহিনী, বাণিজ্য উদ্যোগ এবং আলোচনাধীন অন্যান্য উদ্যোগ নিয়ে বিশদ কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এসবের পাশাপাশি, আফগান ইস্যুতেও মতবিনিময় করেন মন্ত্রীগণ। তালেবান সরকারকে নিরাপত্তা পরিষদের ২৫৯৩ নং রেজুলেশন মেনে চলার আহবান জানান তারা। তাছাড়া, নারী, শিশু এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানবাধিকার নিশ্চিতের বিষয়েও কথা বলেন মন্ত্রীগণ।
২+২ বৈঠকের আলোচনা চলাকালীন মার্কিন কোম্পানিগুলোর সাথে উন্নয়ন এবং সহ-উৎপাদনের বিষয়ে ভারতের আগ্রহের কথাও ব্যক্ত করেছেন ভারতীয় মন্ত্রীগণ। একইভাবে, ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেন তারা।
জানা গিয়েছে, ভারত-মার্কিন ভূ-স্থানিক তথ্যের আদান-প্রদানে সহায়তা করার জন্য বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট (বিইসিএ) – এর সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের দিকে অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছেন মন্ত্রীগণ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ নিয়েও বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে।
ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সন্ত্রাসবাদকে ব্যবহারের বিষয়টি বৈঠকে বিশেষভাবে আলোচিত হয়। বৈঠকে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় রাষ্ট্রই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং আইনের শাসন প্রচারে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। আল-কায়েদা, আইএসআইএস/দায়েশ, লস্কর-ই-তৈয়্যবা (এলইটি) এবং জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেএম) এর মতো জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান নেতৃবৃন্দ। এক্ষেত্রে, পাকিস্তানকে একটি টেকসই পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান তারা।
ভারত-মার্কিন এফটিএ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক