ভারতের সাথে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে তা আরও স্থিতিশীল করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ০৮ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের ইস্যুতে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানান, “এ ব্যাপারে আমাদের বিদেশমন্ত্রী বুধবার লোকসভায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেই সূত্র ধরেই বলতে চাই, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য সেই সম্পর্ককে স্থিতিশীল করা।’’
লোকসভায় রাশিয়ার নাম না নিলেও, তাদের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তবে একই সঙ্গে জানিয়েছিলেন, রাশিয়া ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার রাষ্ট্র’। কূটনীতি এবং সংলাপের মাধ্যমেই সংঘাত মেটানোর সওয়াল করে তাঁর দাবি ছিল, ‘‘ভারতকে কোনও এক পক্ষ বেছে নিতে হলে, শান্তির পক্ষকেই বেছে নেওয়া হবে। অবিলম্বে হিংসা বন্ধের পক্ষপাতী আমরা।’’
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ধরেই অরিন্দম বাগচী বলেন, “রাশিয়া ইস্যুতে ভারতের অবস্থানকে সাম্প্রতিক রাজনীতির সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিৎ নয়। আমরা বরাবরই সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখার পক্ষে।”
বাগচী আরও জানান, “ভারত রাশিয়ার সাথে আর্থিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বরাবরই খোলামেলা ছিল এবং বর্তমান পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও দু দেশের মধ্যে কী ধরণের অর্থপ্রদান ব্যবস্থা কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।”
তবে রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্ক এবং রুশ-ইউক্রেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের অবস্থানের তীব্র নিন্দা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো। ভারতের বন্ধুপ্রতীম এসব রাষ্ট্রের হতাশার বিষয়ে বাগচী বলেন, “আমি নির্দিষ্ট করে বলতে চাই, আপনারা সবাই জানেন, রাশিয়ার সাথে আমাদের আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য এই সম্পর্কের স্থিতিশীলতার দিকে। আমরা জাতীয় স্বার্থে এটি করতে চাই।”
তাই, রুশ-ইউক্রেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বাগচী বলেন, “আমি মনে করি আমাদের অবস্থান বেশ স্পষ্ট। আমাদের সবটাই একটি খোলা বইয়ের মতো। আমি মনে করি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ইতোমধ্যে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে।”
অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক বলেন, “আমরা শুধু বলতে চাচ্ছি যে, যেখানে রাশিয়া থেকে ইউরোপের শক্তির প্রবাহ এখনও অবধি অব্যহত রয়েছে, সার ক্রয় অব্যহত রয়েছে, সেখানে আমাদেরকে রাজনীতির মারপ্যাঁচে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। আমরা শান্তির পক্ষে সবসময়ই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট রেখেছি।”
এর আগে ভারত-রাশিয়া আর্থিক লেনদেনের ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন মার্কিন উপ-নিরাপত্তা উপদেষ্টা দলীপ সিং। এর প্রেক্ষিতে ভারতকে কড়া পরিণতি বরণ করতে হতে পারে বলেও হুমকি দেন তিনি। এর জবাবে বাগচী বলেন, “আমরা সমসাময়িক অর্থনৈতিক বিষয়ে তাঁর সফরের সময়ই বিস্তৃত আলোচনা করেছি। জি-২০, পরিকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত সহ সব ধরণের সকল বিষয়েই তাঁর সঙ্গে আমাদের মতবিনিময় হয়েছে।”
ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র আরও বলেন, “দলীপ সিং আমাদেরকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য এবং কার্যকারিতা সম্পর্কেও অবহিত করেছেন। আমরাও আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। তাই আমি মনে করি, আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে রয়েছে।”
এসময়, আসন্ন ২+২ বৈঠক নিয়েও আলোচনা করেন বাগচী। তিনি আসন্ন বৈঠকের সফলতা কামনা করেন।
রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে ভারতের ওপর কোনো চাপ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমি মনে করি না কোনো চাপ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তবে সেগুলো সব ধরণের বাণিজ্যে নয়, বরং নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে।” খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক