বিশ্বের সমৃদ্ধ দুই গণতন্ত্র এবং একই সাথে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দুটো অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারত এবং নেদারল্যান্ডসকে ঘনিষ্ঠ মিত্র আখ্যা দিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। গত ০৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার, নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলেম-আলেকজান্ডার এবং রানী ম্যাক্সিমার দ্বারা আয়োজিত এক ভোজসভায় বক্তব্য প্রদানকালে এমন কথা বলেন ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান।
উল্লেখ্য, তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বর্তমানে নেদারল্যান্ডস রয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। গত ০৪ এপ্রিল, সোমবার, তুর্কমেনিস্তান সফর শেষে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে পৌঁছান তিনি। দেশটির মহামান্য রাজা উইলেম আলেকজান্ডার এবং রানী ম্যাক্সিমার আমন্ত্রণে সেখানে ভ্রমণ করছেন বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান। ০৭ এপ্রিল অবধি সেখানে অবস্থান করবেন তিনি।
এর মধ্য দিয়ে, ১৯৮৮ সালের পর এবারই প্রথম নেদারল্যান্ডস সফরে গেলেন ভারতের কোনো রাষ্ট্রপতি। সফরকালে নেদারল্যান্ডসের রাজপরিবার ছাড়াও দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট এবং অন্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে কোবিন্দের।
ভোজসভায় ভাষণ প্রদানকালে এক পর্যায়ে কোবিন্দ বলেন, “চলতি বছরটি আমাদের দ্বিপাক্ষিক যাত্রার এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমরা আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তি করতে যাচ্ছি। ভারতবর্ষও নিজ স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করছে। ভারতকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম দেশগুলোর একটি নেদারল্যান্ডস। এটি আমাদের সম্পর্কের গভীরতাকে প্রতিফলিত করে।”
ডাচ রাজা-রাণীর উদ্দেশ্যে ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, “এখানে আপনাদের সুন্দর দেশে, টিউলিপের দেশে থাকতে পেরে আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী, পণ্ডিত এবং অভিযাত্রীদের জন্মস্থান এই দেশটি। আধুনিক ব্যবসা-বাণিজ্যের গোড়াপত্তনও এখানেই হয়েছিলো।”
কোবিন্দ আরও বলেন, “প্রবাদ আছে, ঈশ্বর বিশ্ব তৈরী করেছেন, ডাচরা নেদারল্যান্ডস! এ থেকে বুঝা যায় ডাচদের অনন্য ক্ষমতা ও দক্ষতা! বহুত্ববাদ, অন্তর্ভুক্তি, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আইনের শাসন নেদারল্যান্ডসকে চিত্রিত করে। এটি ভারতের সাথে সম্পর্কেরও অনন্য ভিত্তি।”
এসময়, নেদারল্যান্ডসকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিবেচনাতেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে আখ্যা দেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, “একটি মুক্ত এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের মূল প্রবক্তা হিসাবে আমরা নেদারল্যান্ডস এর সাথে বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির জন্য কাজ করার নিমিত্তে একটি অভিন্ন প্রতিশ্রুতি শেয়ার করি। সংযোগ, শক্তি স্থানান্তর এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে নেদারল্যান্ডস৷”
ভারত-নেদারল্যান্ডস ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ও মজবুত করার বিষয়েও বক্তব্য প্রদান করেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি।
এর আগে সফরের দ্বিতীয় দিনে, মঙ্গলবার, নেদারল্যান্ডসের কেউকেনহফের বিশ্বখ্যাত টিউলিপ গার্ডেন পরিদর্শন করেন রামনাথ কোবিন্দ। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াপকে হোয়েকস্ট্রা। সেখানে একটি হলুদ টিউলিপ ফুলের নামকরণও করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। ফুলটির প্রজাতির নাম রাখা হয়েছে, ‘মৈত্রী’।
মূলত, নেদারল্যান্ডসের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তিতে এমন ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনার অবতারণা হয়। এজন্য ডাচ সরকার এবং জনগণের নিকট কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পূর্বেই আজাদি কা মহোৎসব ঘোষণা দিয়েছিলো মোদী সরকার। এই প্রেক্ষিতে, জল, কৃষি, উদ্ভাবন, শক্তি, জলবায়ু এবং সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন খাতে বিস্তৃত সহযোগিতা করতে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গেও সম্পর্ক পুনর্মূল্যানের চিন্তা করছে সরকার।
স্বাধীনতার ৭৫ বছরে পা রাখায় এবং আজাদি কা মহোৎসব উদযাপনের অংশ হিসেবে ভারতকে ৩০০০ তাজা টিউলিপ ফুল উপহার দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। সবগুলো ফুল জওহরলাল নেহরু ভবনের বাগানে রোপণ করা হয়েছে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক