০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত-নেপাল ট্রেন পরিষেবার উদ্বোধন

ভারত ও নেপালের মধ্যে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেনের যাত্রা শুরু হলো। ০২ এপ্রিল, শনিবার, ভারতে সফররত নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে দুই দেশের মধ্যে এই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করলেন। দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের অবসরে এ রেল যাত্রার উদ্বোধন করেন।

ভারতের বিহার প্রদেশের জয়নগর থেকে নেপালের কুরথা পর্যন্ত এ ব্রডগেজ ট্রেন চলবে। দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। ৬১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছর এই রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। একই সঙ্গে নেপালে চালু হলো ভারতীয় ‘রুপে’ কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা। এর আগে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভুটানে ‘রুপে’ কার্ড চালু হয়েছে।

এই ৩৫ কিলোমিটার পথ আসলে ৬৮.৭ কিলোমিটার লম্বা জয়নগর-বিজলপুরা-বারদিবাস রেলপথের একটি অংশ। বাকি অংশের কাজ দুটিভাগে শেষ করা হবে। মোট ১১০০ জন যাত্রী নিয়ে ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে চলবে এই ট্রেন। এছাড়াও পাঁচ কামরার এই ট্রেনের একটি কামরা হবে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রেনও চলাচল করবে বলে জানা গিয়েছে।

এর আগে গত ০১ এপ্রিল, শুক্রবার, তিন দিনের সফরে ভারতে পৌঁছান নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই তার প্রথম ভারত সফর। শেষবার ২০১৭ সালে ভারতে আসেন তিনি। শনিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে সংযোগকারী এই ট্রেন পরিষেবার সূচনা করেন দুই নেতা।

বিহারের জয়নগর থেকে নেপালের বিজলপুরা পর্যন্ত রেলপথ ব্রিটিশ আমলেই চালু হয়েছিল। ১৯৩৭ সালে ন্যারোগেজ লাইন ছিল। ২০০১ সালে নেপালে বন্যার জেরে সেই রেলসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর থেকেই ফের রেল সংযোগের দাবি জোরালো হচ্ছিল।

হায়দরাবাদ হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর মোদী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দেউবা ও আমি ঠিক করেছি, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যসহ সব ধরনের যোগাযোগ বাড়ানো হবে। জয়নগর–কুরথা রেলপথ এরই অংশ। শান্তি, উন্নতি ও প্রগতির পথে নেপালের যাত্রায় ভারত সব সময়ের সহযাত্রী।”

দেউবা বলেন, “নেপালের প্রতি ভারতের মৈত্রী আজকের নয়।” তাঁর সফর এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। কোভিড নিয়ন্ত্রণে ভারতের ভূমিকা উল্লেখ করে নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতিষেধক দিয়ে ভারত যেভাবে নেপালকে সাহায্য করেছে, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।”

এছাড়া, নেপালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ভারতীয় সংস্থার যোগদান বাড়াতে রাজি হয়েছেন উভয় প্রধানমন্ত্রী। ফলে নেপাল থেকে ভারতে আরও বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য নেপাল ১০৫ তম সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক সোলার অ্যালায়েন্সের যোগ দিয়েছে। নেপালের দুর্গম জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য ভারতীয় অর্থানুকূল্যে তৈরি ‘সোলু করিডর ট্রান্সমিশন’ প্রকল্পও শনিবার নেপালকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মোদী-দেউবার রেললাইন উদ্বোধন কার্যক্রম শেষে পরবর্তীতে এ নিয়ে এক বিশেষ প্রেস ব্রিফিং এ বক্তব্য দেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও। সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক বলেন, “এই ট্রেন পরিষেবা চালুর মধ্য দিয়ে উভয় পাশের সীমান্তের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে।”

রেল প্রকল্প ছাড়াও বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা পূর্বক উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও জানিয়েছেন শ্রিংলা। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি এই রেল সংযোগটি অনেকভাবেই গেম চেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হবে।”

উল্লেখ্য, ০৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দেউবার বারাণসী সফরের কথা রয়েছে। সেখানে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

ট্যাগ:

ভারত-নেপাল ট্রেন পরিষেবার উদ্বোধন

প্রকাশ: ০৪:৪০:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২

ভারত ও নেপালের মধ্যে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেনের যাত্রা শুরু হলো। ০২ এপ্রিল, শনিবার, ভারতে সফররত নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে দুই দেশের মধ্যে এই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করলেন। দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের অবসরে এ রেল যাত্রার উদ্বোধন করেন।

ভারতের বিহার প্রদেশের জয়নগর থেকে নেপালের কুরথা পর্যন্ত এ ব্রডগেজ ট্রেন চলবে। দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। ৬১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছর এই রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। একই সঙ্গে নেপালে চালু হলো ভারতীয় ‘রুপে’ কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা। এর আগে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভুটানে ‘রুপে’ কার্ড চালু হয়েছে।

এই ৩৫ কিলোমিটার পথ আসলে ৬৮.৭ কিলোমিটার লম্বা জয়নগর-বিজলপুরা-বারদিবাস রেলপথের একটি অংশ। বাকি অংশের কাজ দুটিভাগে শেষ করা হবে। মোট ১১০০ জন যাত্রী নিয়ে ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে চলবে এই ট্রেন। এছাড়াও পাঁচ কামরার এই ট্রেনের একটি কামরা হবে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রেনও চলাচল করবে বলে জানা গিয়েছে।

এর আগে গত ০১ এপ্রিল, শুক্রবার, তিন দিনের সফরে ভারতে পৌঁছান নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই তার প্রথম ভারত সফর। শেষবার ২০১৭ সালে ভারতে আসেন তিনি। শনিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে সংযোগকারী এই ট্রেন পরিষেবার সূচনা করেন দুই নেতা।

বিহারের জয়নগর থেকে নেপালের বিজলপুরা পর্যন্ত রেলপথ ব্রিটিশ আমলেই চালু হয়েছিল। ১৯৩৭ সালে ন্যারোগেজ লাইন ছিল। ২০০১ সালে নেপালে বন্যার জেরে সেই রেলসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর থেকেই ফের রেল সংযোগের দাবি জোরালো হচ্ছিল।

হায়দরাবাদ হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর মোদী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দেউবা ও আমি ঠিক করেছি, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যসহ সব ধরনের যোগাযোগ বাড়ানো হবে। জয়নগর–কুরথা রেলপথ এরই অংশ। শান্তি, উন্নতি ও প্রগতির পথে নেপালের যাত্রায় ভারত সব সময়ের সহযাত্রী।”

দেউবা বলেন, “নেপালের প্রতি ভারতের মৈত্রী আজকের নয়।” তাঁর সফর এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। কোভিড নিয়ন্ত্রণে ভারতের ভূমিকা উল্লেখ করে নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতিষেধক দিয়ে ভারত যেভাবে নেপালকে সাহায্য করেছে, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।”

এছাড়া, নেপালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ভারতীয় সংস্থার যোগদান বাড়াতে রাজি হয়েছেন উভয় প্রধানমন্ত্রী। ফলে নেপাল থেকে ভারতে আরও বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য নেপাল ১০৫ তম সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক সোলার অ্যালায়েন্সের যোগ দিয়েছে। নেপালের দুর্গম জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য ভারতীয় অর্থানুকূল্যে তৈরি ‘সোলু করিডর ট্রান্সমিশন’ প্রকল্পও শনিবার নেপালকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মোদী-দেউবার রেললাইন উদ্বোধন কার্যক্রম শেষে পরবর্তীতে এ নিয়ে এক বিশেষ প্রেস ব্রিফিং এ বক্তব্য দেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও। সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক বলেন, “এই ট্রেন পরিষেবা চালুর মধ্য দিয়ে উভয় পাশের সীমান্তের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে।”

রেল প্রকল্প ছাড়াও বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা পূর্বক উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও জানিয়েছেন শ্রিংলা। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি এই রেল সংযোগটি অনেকভাবেই গেম চেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হবে।”

উল্লেখ্য, ০৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দেউবার বারাণসী সফরের কথা রয়েছে। সেখানে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক