০১:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধের ডাক মোদীর

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। গত ০১ এপ্রিল, শুক্রবার, নয়াদিল্লীতে বৈঠকে মিলিত হোন দুই নেতা। এসময়, রুশ মন্ত্রীর কাছে ইউক্রেনে দ্রুত সহিংসতা বন্ধের আহবান জানান ভারত সরকারের সুপ্রিমো।

পরবর্তীতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “ইউক্রেন ইস্যুতে চলমান শান্তি আলোচনা সহ সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অবহিত করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সঙ্কট সমাধানের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ভারত শান্তি প্রচেষ্টায় যেকোনো উপায়ে অবদান রাখতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও এসময় রুশ মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।”

জানা গিয়েছে, বিগত ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ভারত ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত কর্মসূচির অগ্রগতি নিয়েও পর্যালোচনা করেন দুই নেতা।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে দুই দেশের মধ্যে। এহেন পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জব্দ করতে রাশিয়ার উপর একগুচ্ছ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান-সহ একাধিক দেশ।

রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করাও বন্ধ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ‘সুইফট’ ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর এটাই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে সাক্ষাতের আগে ভারতে নেমেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে দেখা করেন পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র লাভরভ।

জানা গিয়েছে, জয়শঙ্কর ও লাভরভের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে অপরিশোধিত তেল আমদানি ও ‘রুবল-রুপি মেকানিজম’ তৈরি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে পুতিনের সহযোগী রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেছেন, “ভারত ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে বন্ধুত্বই মূল ভিত্তি।”

মার্কিন সহ পশ্চিমী সমালোচকদের ইঙ্গিত করে লাভরভ বলেছেন যে, “আমাদের পশ্চিমী বন্ধুরা ইউক্রেনের সংকটের জন্য অর্থবহ একাধিক আন্তর্জাতিক ইস্যুর গুরুত্বকে খাটো করতে আগ্রহী।”

ইউক্রেনে রুশ আগ্রসনের নিন্দা করলেও পুতিনের দেশের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপের ভাগীদার হয়নি ভারত। দিল্লি এক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। যার প্রশংসা করছেন লাভরভ। বলেছেন, “ভারত আমাদের অবস্থান জানে, আমরা কিছুই লুকোইনি। কিছুতে প্রভাবিত হয়ে একতরফাভাবে নয়, ভারত বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ ও যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা প্রশংসনীয়।”

লাভরভ সাফ জানিয়েছেন যে, রাশিয়া ‘বহু মেরুকৃত বিশ্বে’র পক্ষে। বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন ও পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার মুখে বন্ধু ভারতকে আরও কাছে চাইছে রাশিয়া, বিশেষ করে বাণিজ্য ও তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের বাজারে নজর রয়েছে মস্কোর।

এদিকে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে রাশিয়ার জন্য দেশের ‘মানি মার্কেট’ তথা অর্থ বাজার খুলে দিয়েছে ভারত। এর ফলে ভারতের শেয়ার বাজারে লগ্নি করতে বা বন্ড ইস্যু করে টাকা তুলতে পারবে মস্কো। মনে করা হচ্ছে, সস্তায় তেলের পরিবর্তে এটাই পুতিন প্রশাসনের জন্য মোদি সরকারের উপহার।

জানা গিয়েছে, সোভিয়েতের পতনের পর থেকে রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভারতের বাজারে লেনদেন করতে পারবে রাশিয়া। রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা বাবদ ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই মস্কোকে টাকা দিচ্ছে ভারত। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

ট্যাগ:

ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধের ডাক মোদীর

প্রকাশ: ০৪:২৮:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। গত ০১ এপ্রিল, শুক্রবার, নয়াদিল্লীতে বৈঠকে মিলিত হোন দুই নেতা। এসময়, রুশ মন্ত্রীর কাছে ইউক্রেনে দ্রুত সহিংসতা বন্ধের আহবান জানান ভারত সরকারের সুপ্রিমো।

পরবর্তীতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “ইউক্রেন ইস্যুতে চলমান শান্তি আলোচনা সহ সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অবহিত করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সঙ্কট সমাধানের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ভারত শান্তি প্রচেষ্টায় যেকোনো উপায়ে অবদান রাখতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও এসময় রুশ মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।”

জানা গিয়েছে, বিগত ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ভারত ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত কর্মসূচির অগ্রগতি নিয়েও পর্যালোচনা করেন দুই নেতা।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে দুই দেশের মধ্যে। এহেন পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জব্দ করতে রাশিয়ার উপর একগুচ্ছ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান-সহ একাধিক দেশ।

রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করাও বন্ধ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ‘সুইফট’ ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর এটাই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে সাক্ষাতের আগে ভারতে নেমেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে দেখা করেন পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র লাভরভ।

জানা গিয়েছে, জয়শঙ্কর ও লাভরভের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে অপরিশোধিত তেল আমদানি ও ‘রুবল-রুপি মেকানিজম’ তৈরি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে পুতিনের সহযোগী রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেছেন, “ভারত ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে বন্ধুত্বই মূল ভিত্তি।”

মার্কিন সহ পশ্চিমী সমালোচকদের ইঙ্গিত করে লাভরভ বলেছেন যে, “আমাদের পশ্চিমী বন্ধুরা ইউক্রেনের সংকটের জন্য অর্থবহ একাধিক আন্তর্জাতিক ইস্যুর গুরুত্বকে খাটো করতে আগ্রহী।”

ইউক্রেনে রুশ আগ্রসনের নিন্দা করলেও পুতিনের দেশের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপের ভাগীদার হয়নি ভারত। দিল্লি এক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। যার প্রশংসা করছেন লাভরভ। বলেছেন, “ভারত আমাদের অবস্থান জানে, আমরা কিছুই লুকোইনি। কিছুতে প্রভাবিত হয়ে একতরফাভাবে নয়, ভারত বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ ও যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা প্রশংসনীয়।”

লাভরভ সাফ জানিয়েছেন যে, রাশিয়া ‘বহু মেরুকৃত বিশ্বে’র পক্ষে। বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন ও পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার মুখে বন্ধু ভারতকে আরও কাছে চাইছে রাশিয়া, বিশেষ করে বাণিজ্য ও তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের বাজারে নজর রয়েছে মস্কোর।

এদিকে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে রাশিয়ার জন্য দেশের ‘মানি মার্কেট’ তথা অর্থ বাজার খুলে দিয়েছে ভারত। এর ফলে ভারতের শেয়ার বাজারে লগ্নি করতে বা বন্ড ইস্যু করে টাকা তুলতে পারবে মস্কো। মনে করা হচ্ছে, সস্তায় তেলের পরিবর্তে এটাই পুতিন প্রশাসনের জন্য মোদি সরকারের উপহার।

জানা গিয়েছে, সোভিয়েতের পতনের পর থেকে রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভারতের বাজারে লেনদেন করতে পারবে রাশিয়া। রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা বাবদ ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই মস্কোকে টাকা দিচ্ছে ভারত। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক