০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত কিনতে চাইলে আলোচনায় প্রস্তুত: রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারত কিছু কিনতে চাইলে রাশিয়া আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়ে দিলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ০১ এপ্রিল, শুক্রবার, নয়াদিল্লীতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

পুতিনের ঘনিষ্ঠ এই সহচর বলেন, “ভারত যদি কিছু কিনতে চায়, আমরা আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছি। আমরা পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য যেকোনো সহযোগিতায় পৌছাতে প্রস্তুত।”

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে দুই দেশের মধ্যে। এহেন পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জব্দ করতে রাশিয়ার উপর একগুচ্ছ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান-সহ একাধিক দেশ। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করাও বন্ধ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ‘সুইফট’ ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এমতাবস্থায়, জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আজকের বক্তব্যটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিশ্লেষকগণ।

এর আগে লাভরভের সাথে বৈঠক নিয়ে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, “নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অনেকটা প্রোপাগান্ডার মতো মনে হচ্ছে! যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ অবধি ইউরোপীয় দেশগুলোই রাশিয়া থেকে বেশি তেল আমদানি করছিলো।”

জানা গিয়েছে, জয়শঙ্কর ও লাভরভের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে অপরিশোধিত তেল আমদানি ও ‘রুবল-রুপি মেকানিজম’ তৈরি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের পর এটাই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর।

বৈঠকে পুতিনের সহযোগী রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেছেন, “ভারত ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে বন্ধুত্বই মূল ভিত্তি।” মার্কিন সহ পশ্চিমী সমালোচকদের ইঙ্গিত করে লাভরভ বলেছেন যে, “আমাদের পশ্চিমী বন্ধুরা ইউক্রেনের সংকটের জন্য অর্থবহ একাধিক আন্তর্জাতিক ইস্যুর গুরুত্বকে খাটো করতে আগ্রহী।”

ইউক্রেনে রুশ আগ্রসনের নিন্দা করলেও পুতিনের দেশের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপের ভাগীদার হয়নি ভারত। দিল্লি এক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। যার প্রশংসা করছেন লাভরভ। বলেছেন, “ভারত আমাদের অবস্থান জানে, আমরা কিছুই লুকোইনি। কিছুতে প্রভাবিত হয়ে একতরফাভাবে নয়, ভারত বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ ও যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা প্রশংসনীয়।”

লাভরভ সাফ জানিয়েছেন যে, রাশিয়া ‘বহু মেরুকৃত বিশ্বে’র পক্ষে। বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন ও পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার মুখে বন্ধু ভারতকে আরও কাছে চাইছে রাশিয়া, বিশেষ করে বাণিজ্য ও তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের বাজারে নজর রয়েছে মস্কোর।

এদিকে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে রাশিয়ার জন্য দেশের ‘মানি মার্কেট’ তথা অর্থ বাজার খুলে দিয়েছে ভারত। এর ফলে ভারতের শেয়ার বাজারে লগ্নি করতে বা বন্ড ইস্যু করে টাকা তুলতে পারবে মস্কো। মনে করা হচ্ছে, সস্তায় তেলের পরিবর্তে এটাই পুতিন প্রশাসনের জন্য মোদি সরকারের উপহার।

জানা গিয়েছে, সোভিয়েতের পতনের পর থেকে রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভারতের বাজারে লেনদেন করতে পারবে রাশিয়া। রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা বাবদ ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই মস্কোকে টাকা দিচ্ছে ভারত। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

ট্যাগ:
জনপ্রিয়

ভারত কিনতে চাইলে আলোচনায় প্রস্তুত: রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশ: ০২:৫৪:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ এপ্রিল ২০২২

ভারত কিছু কিনতে চাইলে রাশিয়া আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়ে দিলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ০১ এপ্রিল, শুক্রবার, নয়াদিল্লীতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

পুতিনের ঘনিষ্ঠ এই সহচর বলেন, “ভারত যদি কিছু কিনতে চায়, আমরা আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছি। আমরা পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য যেকোনো সহযোগিতায় পৌছাতে প্রস্তুত।”

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে দুই দেশের মধ্যে। এহেন পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জব্দ করতে রাশিয়ার উপর একগুচ্ছ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান-সহ একাধিক দেশ। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করাও বন্ধ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ‘সুইফট’ ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এমতাবস্থায়, জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আজকের বক্তব্যটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিশ্লেষকগণ।

এর আগে লাভরভের সাথে বৈঠক নিয়ে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, “নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অনেকটা প্রোপাগান্ডার মতো মনে হচ্ছে! যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ অবধি ইউরোপীয় দেশগুলোই রাশিয়া থেকে বেশি তেল আমদানি করছিলো।”

জানা গিয়েছে, জয়শঙ্কর ও লাভরভের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে অপরিশোধিত তেল আমদানি ও ‘রুবল-রুপি মেকানিজম’ তৈরি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের পর এটাই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর।

বৈঠকে পুতিনের সহযোগী রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেছেন, “ভারত ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে বন্ধুত্বই মূল ভিত্তি।” মার্কিন সহ পশ্চিমী সমালোচকদের ইঙ্গিত করে লাভরভ বলেছেন যে, “আমাদের পশ্চিমী বন্ধুরা ইউক্রেনের সংকটের জন্য অর্থবহ একাধিক আন্তর্জাতিক ইস্যুর গুরুত্বকে খাটো করতে আগ্রহী।”

ইউক্রেনে রুশ আগ্রসনের নিন্দা করলেও পুতিনের দেশের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপের ভাগীদার হয়নি ভারত। দিল্লি এক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। যার প্রশংসা করছেন লাভরভ। বলেছেন, “ভারত আমাদের অবস্থান জানে, আমরা কিছুই লুকোইনি। কিছুতে প্রভাবিত হয়ে একতরফাভাবে নয়, ভারত বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ ও যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা প্রশংসনীয়।”

লাভরভ সাফ জানিয়েছেন যে, রাশিয়া ‘বহু মেরুকৃত বিশ্বে’র পক্ষে। বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন ও পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার মুখে বন্ধু ভারতকে আরও কাছে চাইছে রাশিয়া, বিশেষ করে বাণিজ্য ও তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের বাজারে নজর রয়েছে মস্কোর।

এদিকে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে রাশিয়ার জন্য দেশের ‘মানি মার্কেট’ তথা অর্থ বাজার খুলে দিয়েছে ভারত। এর ফলে ভারতের শেয়ার বাজারে লগ্নি করতে বা বন্ড ইস্যু করে টাকা তুলতে পারবে মস্কো। মনে করা হচ্ছে, সস্তায় তেলের পরিবর্তে এটাই পুতিন প্রশাসনের জন্য মোদি সরকারের উপহার।

জানা গিয়েছে, সোভিয়েতের পতনের পর থেকে রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভারতের বাজারে লেনদেন করতে পারবে রাশিয়া। রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা বাবদ ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই মস্কোকে টাকা দিচ্ছে ভারত। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক