গোলশূন্য ড্র’কে বলা হয় ম্যাড়মেড়ে ড্র। গতকাল বুধবারের এল ক্লাসিকোর ক্ষেত্রে অন্তত এই তথ্য খাটে না। দুই দলই মর্যাদার এল ক্লাসিকোতে মুখোমুখি হয়েছিল সেরা ফর্ম নিয়ে। ম্যাচের ফলেও তারই প্রতিফলন।
মর্যাদার লড়াইয়ে রিয়াল-বার্সার কেউ হারেনি। দীর্ঘ ১৭ বছর পর গোলশূন্য ড্র হয়েছে ন্যু-ক্যাম্পের আগুন-তপ্ত এল ক্লাসিকো।
ম্যাচে গোলই শুধু হয়নি। একটা ফুটবল ম্যাচ চরম উত্তেজনা ও রোমাঞ্চকর হওয়ার বাকি সব উপাদানই বিদ্যমান ছিল। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, ধাক্কা-ধাক্কি, জার্সি টানাটানি, হলুদকার্ড, পেনাল্টি বিতর্ক-সবিই ছিল ম্যাচে। সংশয় ছিল কাতালুনিয়ান স্বাধীনতাপন্থী সহিংস হামলার। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু ঘটেনি। ম্যাচটা ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হয়েই বাড়ি ফিরেছে সফরকারী রিয়াল মাদ্রিদ।
জিদানের দল ফিরেছে হতাশা এবং স্বস্তি-দুটোকেই সঙ্গে নিয়ে। রিয়ালেল আক্ষেপ, মাঠে অপেক্ষাকৃত শ্রেয়তার দল ছিল তারাই। বিশেষ করে প্রথমার্ধে সফরকারী রিয়ালই ছিল সেরা দল।
একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক বার্সেলোনার নাকে-মুখের জল এক করে ছেড়েছে। কিন্তু সেরা পারফরম্যান্সের পরও জিদানের দল ন্যু-ক্যাম্প থেকে জয় নিয়ে ফিরতে পারেনি।
এই না পারার পেছনে রিয়ালেল পেনাল্টি না পাওয়ার হতাশাও আছে। স্প্যানিশ ফুটবলবোদ্ধাদের অভিমত, একটি নয়, ম্যাচে দুটি পেনাল্টি প্রাপ্য ছিল রিয়ালের। কিন্তু রেফারি একটি পেনাল্টিও দেয়নি। পেনাল্টি আক্ষেপের পাশাপাশি গোল বাতিলের আক্ষেপেও পুড়তে হয়েছে রিয়ালকে।
ম্যাচের ৭২ মিনিটে বার্সেলোনার জালে ঠিকই বল জড়িয়ে দিয়েছিলেন দীর্ঘ দিন পর শুরুর একাদশে জায়গা পাওয়া গ্যারেথ বেল। কিন্তু তার গোলটি বাতিল হয়েছে অফসাইডের খড়্গে।
এই হতাশার উল্টো পাশে রিয়ালেল স্বস্তি, জয় না পেলেও ন্যু-ক্যাম্প থেকে তাদের অন্তত হার নিয়ে ফিরতে হয়নি। এল ক্লাসিকোর আগুনে লড়াইয়ে দুই দলের খেলোয়াড়েরাই স্নায়ুচাপে ভোগে। সেই সুবাদেই এল ক্লাসিকোতে গোল হয় দেদারছে। কিন্তু কাল কোনো দলই গোল করতে পারেনি। এল ক্লাসিকো সর্বশেষ গোলশূন্যভাবে শেষ হয়েছিল সেই ২০০২ সালের নভেম্বরে। এরপর যত এল ক্লাসিকো হয়েছে, গোল হয়েছেই।
ন্যু-ক্যাম্পের এল ক্লাসিকোতে উল্লেখ করার মতো কিছুই করতে পারেননি লিওনেল মেসি। মাঠে তাকে নজরবন্দী করে রাখার জন্য ফেদে ভালভার্দেকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন রিয়াল কোচ জিদান। উরুগুইয়ান তরুণ যে ৮০ মিনিট মাঠে ছিলেন, নিজের কাজটা করেছেন ঠিকঠাক মতো।
মেসিকে মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল হতে দেননি। মেসিকে বল নিয়ে মুভই করতে দেননি ফেদে ভালভার্দে। ৮০ মিনিটে তার বদলি হিসেবে লুকা মড্রিচকে মাঠে নামান জিদান। ম্যাচের বাকি সময়টুকুতে মেসিকে পাহাড়ায় রাখার কাজটা করেছেন এই ক্রোয়েশিয়ান মিডফল্ডারই।
মেসির নিষ্প্রভতার দিনে লুইস সুয়ারেজ, আতোইন গ্রিজমান, আনসু ফাতিরাও বিশেষ চমক দেখাতে ব্যর্থ। তুলনামূলকভাবে বেশি ঝলক দেখিয়েছেন রিয়ালের ওয়েলস উইঙ্গার গ্যারেথ বেল।
ওয়েলস তারকাকে ম্যাচের পর ম্যাচ বেঞ্চে বসিয়ে রাখছেন জিদান। কিন্তু বেল এল ক্লাসিকোতে ভালো করেন, এই থিউরি অনুযায়ীই কাল তাকে শুরুর একাদশে নামান জিদান। ওয়েলস তারকা কোচের আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, দুর্ভাগ্য রিয়ালের, গোল করে দলকে জেতাতে পারেননি।
ন্যু-ক্যাম্পের এই ড্র, একটা বার্তাই দিয়ে রাখল, এবারের লা লিগার শিরোপা লড়াইটা দারুণ জমবে। দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল সমান পয়েন্ট নিয়ে। ম্যাচটা ড্র হওয়ায় এখনো দুই দলের পয়েন্ট ৩৬ করে। বার্সেলোনা শীর্ষে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায়।