১০:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দৃঢ় জাতীয়তাবোধেই নিহিত স্বাধীনতার পূর্ণতা

ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল: স্বতন্ত্র স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালী জাতির ইতিহাসের এ যাবতকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের ৫০তম বর্ষে পাঠক মহলের সবাইকে লেখনীর শুরুতেই জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এই মাহেন্দ্র ক্ষণে দেশের সর্বত্র উৎসবের আমেজ বিরাজমান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এই উৎসবের আমেজে এনে দিয়েছে ভিন্ন এক মাত্রা! বিভিন্ন দেশ ও জাতির সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানগণ, তাঁদের সফরসঙ্গী, আন্তর্জাতিক ভাবে বরেণ্য সাংবাদিক, সাহিত্যিক তথা গুণীজনদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে আমাদের প্রাণের বাংলা ভূমি।

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ঐতিহাসিক এই অর্জনের বর্ণালী আয়োজন বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে কারুর কোনো সংশয় মাত্র নেই। কিন্তু দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সোনালী অর্জনকে স্মরণীয় করে রাখতে বর্তমান সরকার কোনো কমতি রাখেনি। অতি সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীর বিচারকার্য সমাধা, মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ে কিংবা পদ্মা সেতুর সফল সমাপ্তি এই বর্ণাঢ্য আয়োজনকে পূর্ণতা এনে দিয়েছে।

ঐতিহাসিক এই সন্ধ্যায় লেখনীর মাধ্যমে স্মরণ করতে চাই- মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব সময়ে জাতির জনকের দূরদর্শী অবিসংবাদিত নেতৃত্ব, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক দিশা দেখানো জাতীয় চার নেতার নেতৃত্ব-ত্যাগ-তিতিক্ষা, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযুদ্ধাগণের অসীম সাহসিকতা, বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র সমূহের তৎকালীন সরকার এবং তাঁদের জনগণকে।

স্মরণ করতে চাই বীর মনীষীদের, যারা আমাদেরকে সর্বাত্মক যুদ্ধের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, উপদেশ দিয়েছেন, মার্গ দেখিয়েছেন। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই সেসব গুণীজনদের, যাদের লেখনী, মুক্তিযুদ্ধে ভঙ্গুর শক্তির বাঙালীকেও মনোবল জুগিয়েছে। শ্রদ্ধা জানাতে চাই নাম না জানা হাজারো-লাখো মুক্তিকামী জনতাকে, যাঁরা আজ আমাকে স্বাধীনতা নিয়ে লিখার সুযোগ করে দিয়েছেন।

‘স্বাধীনতা’ –শুধুমাত্র এই একটি শব্দের উপর ভিত্তি করে আমাদের দেশের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে! রচিত হয়েছে হাজার হাজার কাব্য কিংবা উপন্যাস! কিন্তু স্বাধীনতা শুধুই যে রাজনৈতিক একটি উপমা, তা নয়! স্বাধীনতা শব্দটির মাহাত্ম্য, ব্যাপকতা এবং গভীরতা এর অর্থের চেয়েও ব্যাপক!

বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনশক্তি বয়সে তরুণ। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নানামুখী চক্রান্তে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে অসংখ্যবার। কিন্তু বর্তমান তরুণ শক্তি ধীরে ধীরে নিজেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সত্যি ইতিহাসকে জানার এবং তা ধারণ করার সক্ষমতা অর্জন করছে।

আজ যখন স্বাধীনতা নিয়ে নিজের মনোভাব প্রকাশ করতে চলেছি, তখন মনে পড়ছে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর কথা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক পুরুষ নেতাজীই প্রথম স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার লড়াইয়ে সবাইকে এক ছাতার নিচে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, স্বাধীনতা চেয়ে পাওয়া যায়না, ছিনিয়ে নিতে হয়”, কিংবা “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো” -স্বাধীনতা প্রসঙ্গে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অমর দুটো বাণী। কথাগুলো নেতাজী ব্রিটিশরাজ হতে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে বললেও, স্বাধীনতা পিপাসু প্রতিটি প্রাণ জানে উক্তি গুলোর গভীরতা এবং বাস্তবিকতা! বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিলো নেতাজীর জীবনী।

বর্তমানে স্বাধীনতার ব্যাখ্যা একেকজনের নিকট একেক রকম। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সামগ্রিকভাবে স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিলো শোষণ মুক্ত সমাজ গঠন করা, অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ, অসাম্প্রদায়িক এক বাংলা সৃষ্টি। বর্তমানে কালের ভেদে এই স্বাধীনতার অর্থ ও চিন্তার ধরণেও পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের নিকট স্বাধীনতার মানে বেকারত্ব নিরসন, আইন শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি বন্ধকরণ, সামাজিক অবস্থান নিশ্চিতকরণ সহ প্রভৃতি! স্বাপ্নিক তরুণদের নতুন উদ্যম আমাদের স্বাধীনতাকে নতুনভাবে তুলে ধরছে সবার কাছে।

সে প্রেক্ষিতেই আজকের লিখা, আমার কাছে স্বাধীনতার মানে কী?! এটি এমন এক প্রশ্ন, যার সুনির্দিষ্ট উত্তর হয়তো ইতিহাসের কোনো স্বাধীনতা সংগ্রামীই এক বাক্যে দিয়ে যেতে পারেননি কিংবা পারবেনও না। আমার মেধা, মনন এবং তরুণ চোখের দেখার শক্তি থেকে যতটা জেনেছি, বুঝেছি, সে উপলব্ধি থেকেই স্বাধীনতার ৫০তম জয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে আমার কাছে স্বাধীনতার মানেটুকু আজ লিখছি।

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নত রুচিশীলতা এবং মার্জিত পরিমিতিবোধ! আমার কাছে স্বাধীনতা মানে পরিকল্পিত নগর, সুষম উন্নয়ন! আমার কাছে স্বাধীনতা মানে সকলের অর্থনৈতিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা! আমার স্বাধীনতার দর্শন আমাকে একদিকে যেমন অধিকার সচেতন করে, বিবেকবান করে, তেমনই লাগামহীন আচরণ থেকে বিরত রাখে! আমার স্বাধীনতা আমাকে একদিকে যেমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে শেখায়, তেমনই দলমত নির্বিশেষে ভালো-কে সাধুবাদ জানাতেও শেখায়!

বিগত ৫০ বছরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি কী আমরা পেয়েছি? বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর দেশ এগিয়েছে কম, যেনো পিছিয়েছেই অনেক বেশি! সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে প্রতিনিয়ত! মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রই যেনো পরিবর্তন হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার পরবর্তী বছরগুলোয়!

ধনী বলে এক রকমের চিকিৎসা, গরীবদের জন্য অন্যরকম দায়সারা ব্যবস্থা -আমার স্বাধীনতার অভিধানে এটি রাষ্ট্রের মালিকদের সঙ্গে নেহায়েতই ভণ্ডামী এবং প্রতারণা! স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে এসেও আমরা দেখেছি সমাজের সর্বত্রই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প, অসাম্প্রদায়িকতার নামে ধর্মহীনতা, বাল্যবিবাহ, মাদক, গ্যাংবাজি, টেণ্ডারবাজি, চাঁদাবাজি সহ সীমাহীন দুর্নীতি!

আমাদের মনে রাখা উচিত, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন! অবকাঠামোগত উন্নয়ন কখনোই একটি জাতির স্বাধীনতা অর্জন কিংবা রক্ষা করেনা! আমাদের মূল সমস্যা আমাদের মানসিকতায়। এজন্যেই স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বর্ষে এসেও “স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি” -এই দুটো লাইনে আমাদের রাজনীতি আটকে গিয়েছে! আজও এখানে পান-সুপারীর মতো দরে ধর্মকে বিক্রি করা হয়! শিক্ষানীতির নামে চাপিয়ে দেয়া হয় খেয়ালখুশিমতো দলনীতি!

আজও আমার দেশে মেয়েরা রাস্তায় একা চলতে ভয় পায়! ধর্ষণ এখন নিত্যদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে! আজও এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে চরমভাবে দমিয়ে রাখা হয়! আজও আমার দেশে শিক্ষিত যুবকদের চাকরীর কোনো নিশ্চয়তা নেই! আজও আমার দেশের শত হাজার কোটি টাকা পাচার হয় বিদেশী প্রভু রাষ্ট্রগুলোতে! আজও এখানে জাতির পিতা, বিপ্লবী বাঘা যতীনদের ভাস্কর্য ভাঙার মতো ধৃষ্টতা দেখতে পাওয়া যায়!

স্বয়ং মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয় কিছুদিন পূর্বে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “রাজনীতি এখন গরীবের বউ, সবার ভাবি”-তে পরিণত হয়েছে! সবাই যার যার মতো এসে রাজনীতির উপর ভর করছে! প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যাক্তিবর্গের নৈতিক স্খলন, দেশের কর্তাব্যক্তিদের নীতিহীনতা, সীমাহীন দুর্নীতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, অমুক-তমুক বড় ভাইয়ের তৈলমর্দন ইত্যাদি সমস্যাগুলো আমাদেরকে দিনকে দিন আদর্শহীন এক রাষ্ট্রে পরিণত করছে!

তাহলে এইযে আমরা প্রতিবছর স্বাধীনতা, স্বাধীনতা বলে চিৎকার করি, সেটার মর্মার্থ কী? কোনো অর্জনই কী নেই ঝুলিতে আমাদের? আজ স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে এসে পেছন ফিরে তাকালেই আমরা দেখতে পাই প্রভূত উন্নয়ন বা অর্জন আমাদের রয়েছে! ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে বাংলাদেশকে আখ্যায়িত করা যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের বেকারত্ব নিরসনে বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে দেখছে! বাংলাদেশকে যারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞার চোখে দেখতো, তারা সবাই বর্তমানে বাংলাদেশকে সমীহ করছে। এটি আমাদের জাতীয় উন্নতির সর্বশেষ বড় উদাহরণ! এর পুরো কৃতিত্বের দাবিদার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব এবং দূরদর্শীতা।

অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা গত দশ বছরে দেশকে অনেক কিছুই দিয়েছে! কিন্তু পূর্বেই বলেছি অবকাঠামোগত বাহ্যিক উন্নয়নে স্বাধীনতার পূর্ণতা নেই! স্বাধীনতা রাষ্ট্রের মৌলিকতায়! আর সেই মৌলিকতা পূর্ণতা পাবে কেবল এবং কেবলমাত্র আমাদের সবার রুচিশীলতা, ভাবনা-চিন্তার দর্শন উন্নত হলে, সর্বোপরি দৃঢ় জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হলে!

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের যে বাংলাদেশ ছিলো, তা বিনির্মাণ এখন কোটি মাইল দূরের গন্তব্য! কিন্তু আমরা মানুষ! সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ! তাই চেষ্টার কোনো কমতি বা খামতি আমাদের রাখতে নেই! একাত্তরের অসম্ভবকে যদি আমরা সম্ভব করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সমাজের গাঠনিক চারিত্রিক উন্নতিও আমরাই করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।

আর এই লক্ষ্য পূরণে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি স্বপ্ন দেখা! ’৭১ এ যেমন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি যুদ্ধে জড়িয়েছিলাম, স্বাধীনতা হাসিলের যুদ্ধ! আজও ঐক্যবদ্ধ চেতনায় তেমন একটি স্বাপ্নিক যুদ্ধে নামতে হবে! উন্নত রুচিশীলতা এবং মার্জিত পরিমিতিবোধ হাসিলের যুদ্ধ! তবেই দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা, শিক্ষা, চিকিৎসা, সামাজিক অবস্থান থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা কাঙ্ক্ষিত অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন লাভ করতে পারবো।

এই যুদ্ধের অগ্রপথিক হবেন আমার দেশের তরুণ শিক্ষিত মেধাবীগণ, কলম সৈনিকগণ, স্বেচ্ছাসেবীগণ, পরিকল্পনাবিদ গণ, প্রকৌশলীগণ, চিকিৎসকগণ, সর্বোপরি সকলেই! প্রত্যেকের অবস্থান থেকে নৈতিক, মানসিক উন্নয়ন আমাদেরকে রাষ্ট্র বিনির্মানের সুযোগ করে দিবে! তবেই আমরা পাবো দুর্নীতিমুক্ত, শোষণমুক্ত, প্রতারণা মুক্ত, মাদক মুক্ত সুন্দর সমাজ। এই সমাজে থাকবেনা কোনো শিক্ষার অভাব কিংবা ক্ষুরধার যন্ত্রণা! থাকবেনা বাসস্থানের অভাব! রইবে না শিশুশ্রম! থাকবেনা বিদেশমুখিতা! আর যেদিন আমার দেশে আর কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর প্রয়োজন পড়বেনা, সেদিন আমি বুঝবো, আমি প্রকৃতই স্বাধীন!

সবশেষে শুধু এটুকুই বলবো, দেশ যেদিকেই যাক, ভালো কিংবা মন্দ যেমনই হোক না কেনো, উন্নয়ন হোক কিংবা না হোক, আমরা সকলেই পরিচয়ে বাংলাদেশী। আমাদের জাতীয় উন্নতির রূপরেখা যেমন আমাদেরকেই বের করতে হবে, তেমনই আমাদের ব্যর্থতার দায়ভারও সবাইকেই মাথা পেতে নিতে হবে। জাতি হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে বাঁচার সম্মিলিত প্রচেষ্টা আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই করতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ তম বর্ষ পূর্তিতে এই জাতীয়তাবোধ-ই হোক আমাদের ভবিষ্যৎ অগ্রগতির পাথেয়।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা। fahim.urp.ju@gmail.com

ট্যাগ:

দৃঢ় জাতীয়তাবোধেই নিহিত স্বাধীনতার পূর্ণতা

প্রকাশ: ০৪:৩৪:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০২১

ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল: স্বতন্ত্র স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালী জাতির ইতিহাসের এ যাবতকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের ৫০তম বর্ষে পাঠক মহলের সবাইকে লেখনীর শুরুতেই জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এই মাহেন্দ্র ক্ষণে দেশের সর্বত্র উৎসবের আমেজ বিরাজমান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এই উৎসবের আমেজে এনে দিয়েছে ভিন্ন এক মাত্রা! বিভিন্ন দেশ ও জাতির সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানগণ, তাঁদের সফরসঙ্গী, আন্তর্জাতিক ভাবে বরেণ্য সাংবাদিক, সাহিত্যিক তথা গুণীজনদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে আমাদের প্রাণের বাংলা ভূমি।

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ঐতিহাসিক এই অর্জনের বর্ণালী আয়োজন বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে কারুর কোনো সংশয় মাত্র নেই। কিন্তু দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সোনালী অর্জনকে স্মরণীয় করে রাখতে বর্তমান সরকার কোনো কমতি রাখেনি। অতি সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীর বিচারকার্য সমাধা, মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ে কিংবা পদ্মা সেতুর সফল সমাপ্তি এই বর্ণাঢ্য আয়োজনকে পূর্ণতা এনে দিয়েছে।

ঐতিহাসিক এই সন্ধ্যায় লেখনীর মাধ্যমে স্মরণ করতে চাই- মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব সময়ে জাতির জনকের দূরদর্শী অবিসংবাদিত নেতৃত্ব, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক দিশা দেখানো জাতীয় চার নেতার নেতৃত্ব-ত্যাগ-তিতিক্ষা, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযুদ্ধাগণের অসীম সাহসিকতা, বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র সমূহের তৎকালীন সরকার এবং তাঁদের জনগণকে।

স্মরণ করতে চাই বীর মনীষীদের, যারা আমাদেরকে সর্বাত্মক যুদ্ধের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, উপদেশ দিয়েছেন, মার্গ দেখিয়েছেন। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই সেসব গুণীজনদের, যাদের লেখনী, মুক্তিযুদ্ধে ভঙ্গুর শক্তির বাঙালীকেও মনোবল জুগিয়েছে। শ্রদ্ধা জানাতে চাই নাম না জানা হাজারো-লাখো মুক্তিকামী জনতাকে, যাঁরা আজ আমাকে স্বাধীনতা নিয়ে লিখার সুযোগ করে দিয়েছেন।

‘স্বাধীনতা’ –শুধুমাত্র এই একটি শব্দের উপর ভিত্তি করে আমাদের দেশের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে! রচিত হয়েছে হাজার হাজার কাব্য কিংবা উপন্যাস! কিন্তু স্বাধীনতা শুধুই যে রাজনৈতিক একটি উপমা, তা নয়! স্বাধীনতা শব্দটির মাহাত্ম্য, ব্যাপকতা এবং গভীরতা এর অর্থের চেয়েও ব্যাপক!

বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনশক্তি বয়সে তরুণ। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নানামুখী চক্রান্তে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে অসংখ্যবার। কিন্তু বর্তমান তরুণ শক্তি ধীরে ধীরে নিজেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সত্যি ইতিহাসকে জানার এবং তা ধারণ করার সক্ষমতা অর্জন করছে।

আজ যখন স্বাধীনতা নিয়ে নিজের মনোভাব প্রকাশ করতে চলেছি, তখন মনে পড়ছে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর কথা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক পুরুষ নেতাজীই প্রথম স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার লড়াইয়ে সবাইকে এক ছাতার নিচে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, স্বাধীনতা চেয়ে পাওয়া যায়না, ছিনিয়ে নিতে হয়”, কিংবা “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো” -স্বাধীনতা প্রসঙ্গে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অমর দুটো বাণী। কথাগুলো নেতাজী ব্রিটিশরাজ হতে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে বললেও, স্বাধীনতা পিপাসু প্রতিটি প্রাণ জানে উক্তি গুলোর গভীরতা এবং বাস্তবিকতা! বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিলো নেতাজীর জীবনী।

বর্তমানে স্বাধীনতার ব্যাখ্যা একেকজনের নিকট একেক রকম। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সামগ্রিকভাবে স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিলো শোষণ মুক্ত সমাজ গঠন করা, অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ, অসাম্প্রদায়িক এক বাংলা সৃষ্টি। বর্তমানে কালের ভেদে এই স্বাধীনতার অর্থ ও চিন্তার ধরণেও পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের নিকট স্বাধীনতার মানে বেকারত্ব নিরসন, আইন শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি বন্ধকরণ, সামাজিক অবস্থান নিশ্চিতকরণ সহ প্রভৃতি! স্বাপ্নিক তরুণদের নতুন উদ্যম আমাদের স্বাধীনতাকে নতুনভাবে তুলে ধরছে সবার কাছে।

সে প্রেক্ষিতেই আজকের লিখা, আমার কাছে স্বাধীনতার মানে কী?! এটি এমন এক প্রশ্ন, যার সুনির্দিষ্ট উত্তর হয়তো ইতিহাসের কোনো স্বাধীনতা সংগ্রামীই এক বাক্যে দিয়ে যেতে পারেননি কিংবা পারবেনও না। আমার মেধা, মনন এবং তরুণ চোখের দেখার শক্তি থেকে যতটা জেনেছি, বুঝেছি, সে উপলব্ধি থেকেই স্বাধীনতার ৫০তম জয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে আমার কাছে স্বাধীনতার মানেটুকু আজ লিখছি।

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নত রুচিশীলতা এবং মার্জিত পরিমিতিবোধ! আমার কাছে স্বাধীনতা মানে পরিকল্পিত নগর, সুষম উন্নয়ন! আমার কাছে স্বাধীনতা মানে সকলের অর্থনৈতিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা! আমার স্বাধীনতার দর্শন আমাকে একদিকে যেমন অধিকার সচেতন করে, বিবেকবান করে, তেমনই লাগামহীন আচরণ থেকে বিরত রাখে! আমার স্বাধীনতা আমাকে একদিকে যেমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে শেখায়, তেমনই দলমত নির্বিশেষে ভালো-কে সাধুবাদ জানাতেও শেখায়!

বিগত ৫০ বছরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি কী আমরা পেয়েছি? বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর দেশ এগিয়েছে কম, যেনো পিছিয়েছেই অনেক বেশি! সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে প্রতিনিয়ত! মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রই যেনো পরিবর্তন হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার পরবর্তী বছরগুলোয়!

ধনী বলে এক রকমের চিকিৎসা, গরীবদের জন্য অন্যরকম দায়সারা ব্যবস্থা -আমার স্বাধীনতার অভিধানে এটি রাষ্ট্রের মালিকদের সঙ্গে নেহায়েতই ভণ্ডামী এবং প্রতারণা! স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে এসেও আমরা দেখেছি সমাজের সর্বত্রই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প, অসাম্প্রদায়িকতার নামে ধর্মহীনতা, বাল্যবিবাহ, মাদক, গ্যাংবাজি, টেণ্ডারবাজি, চাঁদাবাজি সহ সীমাহীন দুর্নীতি!

আমাদের মনে রাখা উচিত, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন! অবকাঠামোগত উন্নয়ন কখনোই একটি জাতির স্বাধীনতা অর্জন কিংবা রক্ষা করেনা! আমাদের মূল সমস্যা আমাদের মানসিকতায়। এজন্যেই স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বর্ষে এসেও “স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি” -এই দুটো লাইনে আমাদের রাজনীতি আটকে গিয়েছে! আজও এখানে পান-সুপারীর মতো দরে ধর্মকে বিক্রি করা হয়! শিক্ষানীতির নামে চাপিয়ে দেয়া হয় খেয়ালখুশিমতো দলনীতি!

আজও আমার দেশে মেয়েরা রাস্তায় একা চলতে ভয় পায়! ধর্ষণ এখন নিত্যদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে! আজও এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে চরমভাবে দমিয়ে রাখা হয়! আজও আমার দেশে শিক্ষিত যুবকদের চাকরীর কোনো নিশ্চয়তা নেই! আজও আমার দেশের শত হাজার কোটি টাকা পাচার হয় বিদেশী প্রভু রাষ্ট্রগুলোতে! আজও এখানে জাতির পিতা, বিপ্লবী বাঘা যতীনদের ভাস্কর্য ভাঙার মতো ধৃষ্টতা দেখতে পাওয়া যায়!

স্বয়ং মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয় কিছুদিন পূর্বে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “রাজনীতি এখন গরীবের বউ, সবার ভাবি”-তে পরিণত হয়েছে! সবাই যার যার মতো এসে রাজনীতির উপর ভর করছে! প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যাক্তিবর্গের নৈতিক স্খলন, দেশের কর্তাব্যক্তিদের নীতিহীনতা, সীমাহীন দুর্নীতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, অমুক-তমুক বড় ভাইয়ের তৈলমর্দন ইত্যাদি সমস্যাগুলো আমাদেরকে দিনকে দিন আদর্শহীন এক রাষ্ট্রে পরিণত করছে!

তাহলে এইযে আমরা প্রতিবছর স্বাধীনতা, স্বাধীনতা বলে চিৎকার করি, সেটার মর্মার্থ কী? কোনো অর্জনই কী নেই ঝুলিতে আমাদের? আজ স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে এসে পেছন ফিরে তাকালেই আমরা দেখতে পাই প্রভূত উন্নয়ন বা অর্জন আমাদের রয়েছে! ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে বাংলাদেশকে আখ্যায়িত করা যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের বেকারত্ব নিরসনে বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে দেখছে! বাংলাদেশকে যারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞার চোখে দেখতো, তারা সবাই বর্তমানে বাংলাদেশকে সমীহ করছে। এটি আমাদের জাতীয় উন্নতির সর্বশেষ বড় উদাহরণ! এর পুরো কৃতিত্বের দাবিদার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব এবং দূরদর্শীতা।

অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা গত দশ বছরে দেশকে অনেক কিছুই দিয়েছে! কিন্তু পূর্বেই বলেছি অবকাঠামোগত বাহ্যিক উন্নয়নে স্বাধীনতার পূর্ণতা নেই! স্বাধীনতা রাষ্ট্রের মৌলিকতায়! আর সেই মৌলিকতা পূর্ণতা পাবে কেবল এবং কেবলমাত্র আমাদের সবার রুচিশীলতা, ভাবনা-চিন্তার দর্শন উন্নত হলে, সর্বোপরি দৃঢ় জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হলে!

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের যে বাংলাদেশ ছিলো, তা বিনির্মাণ এখন কোটি মাইল দূরের গন্তব্য! কিন্তু আমরা মানুষ! সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ! তাই চেষ্টার কোনো কমতি বা খামতি আমাদের রাখতে নেই! একাত্তরের অসম্ভবকে যদি আমরা সম্ভব করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সমাজের গাঠনিক চারিত্রিক উন্নতিও আমরাই করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।

আর এই লক্ষ্য পূরণে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি স্বপ্ন দেখা! ’৭১ এ যেমন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি যুদ্ধে জড়িয়েছিলাম, স্বাধীনতা হাসিলের যুদ্ধ! আজও ঐক্যবদ্ধ চেতনায় তেমন একটি স্বাপ্নিক যুদ্ধে নামতে হবে! উন্নত রুচিশীলতা এবং মার্জিত পরিমিতিবোধ হাসিলের যুদ্ধ! তবেই দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা, শিক্ষা, চিকিৎসা, সামাজিক অবস্থান থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা কাঙ্ক্ষিত অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন লাভ করতে পারবো।

এই যুদ্ধের অগ্রপথিক হবেন আমার দেশের তরুণ শিক্ষিত মেধাবীগণ, কলম সৈনিকগণ, স্বেচ্ছাসেবীগণ, পরিকল্পনাবিদ গণ, প্রকৌশলীগণ, চিকিৎসকগণ, সর্বোপরি সকলেই! প্রত্যেকের অবস্থান থেকে নৈতিক, মানসিক উন্নয়ন আমাদেরকে রাষ্ট্র বিনির্মানের সুযোগ করে দিবে! তবেই আমরা পাবো দুর্নীতিমুক্ত, শোষণমুক্ত, প্রতারণা মুক্ত, মাদক মুক্ত সুন্দর সমাজ। এই সমাজে থাকবেনা কোনো শিক্ষার অভাব কিংবা ক্ষুরধার যন্ত্রণা! থাকবেনা বাসস্থানের অভাব! রইবে না শিশুশ্রম! থাকবেনা বিদেশমুখিতা! আর যেদিন আমার দেশে আর কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর প্রয়োজন পড়বেনা, সেদিন আমি বুঝবো, আমি প্রকৃতই স্বাধীন!

সবশেষে শুধু এটুকুই বলবো, দেশ যেদিকেই যাক, ভালো কিংবা মন্দ যেমনই হোক না কেনো, উন্নয়ন হোক কিংবা না হোক, আমরা সকলেই পরিচয়ে বাংলাদেশী। আমাদের জাতীয় উন্নতির রূপরেখা যেমন আমাদেরকেই বের করতে হবে, তেমনই আমাদের ব্যর্থতার দায়ভারও সবাইকেই মাথা পেতে নিতে হবে। জাতি হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে বাঁচার সম্মিলিত প্রচেষ্টা আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই করতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ তম বর্ষ পূর্তিতে এই জাতীয়তাবোধ-ই হোক আমাদের ভবিষ্যৎ অগ্রগতির পাথেয়।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা। fahim.urp.ju@gmail.com