গোবিন্দ মোদক: শিশু যখন পৃথিবীতে আসে, তখন সে কোনো সংস্কৃতি ছাড়াই জন্মগ্রহণ করে। তাকে ধীরে ধীরে সমাজের সাথে পরিচিত করে সামাজিক সত্তায় রুপান্তরিত করে সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়। মানব শিশু জন্মের পর থেকে সমাজের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলতে শিখে, আর সে শিক্ষা পায় প্রথম পর্যায়ে পরিবার থেকে ক্রমানয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ থেকেই।
সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া একটি জীবনব্যাপী ও বহুমখী প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ পুরোপুরি সামাজিক প্রাণীতে পরিণত হয়। সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন এর মতে- ‘সামাজিকীকরণ একটি প্রক্রিয়া যায় মাধ্যমে ব্যক্তি গোষ্ঠীর নিয়ম মেনে চলতে শেখে’।
একটি সুন্দর সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে সেই সমাজের ব্যক্তিদের সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ।যে সমাজের ব্যক্তিরা ছোট থেকে একটি সুন্দর সামাজিক নিয়মে বেড়ে উঠবে সমাজের ভালো কাজে গুলো দেখে বড় হবে এবং সেই কাজ গুলোকেই তাদের জীবনের অংশ বলে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাবে।
সামাজিকীকরণ এর প্রথম ধাপ হিসেবে পরিবার সবচেয়ে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।যে পরিবারে একটি ছোট শিশু গড়ে উঠবে সেই পরিবারের বড়দের আচার আচরণ লক্ষ্য করেই সেই শিশু অনুপ্রাণিত হবে তাদের সকল কিছু ফলো করবে এবং তেমনটি হয়ে উঠার ইচ্ছে পোষণ করবে।
বর্তমান যুগে খুব লক্ষণীয় বিষয় হিসেবে দেখা যায়, অনেক পরিবারের সদস্যরা তাদের ছোট শিশু সন্তানদের সময় দেয়ার সুযোগ পায় না বা প্রয়োজন অনুভব করে না। অন্য জনকে রেখে তাদের সন্তানের যত্ন নেয়ার ব্যবস্থা করে যায় ফলে যে ব্যক্তিটিকে উনারা রাখেন সেই ব্যক্তি ঐ শিশুটিকে যেভাবে শিখাবেন ঠিক সেই ভাবেই শিখে উঠে।ভাষা, আচার,আচরণ, ভালো-মন্দ সব কিছু ছোট থেকেই শিখে বড় হয় এবং তাই তাদের মাঝে বৃদ্ধি পায়।
একটি শিক্ষিত পরিবার অবশ্যই জানে কিভাবে সমাজে সুন্দর ভাবে চলতে হয় কি করলে সমাজের মঙ্গল হয় আর সেই পরিবারে ছোট শিশু জন্মের পর থেকে তাকে সময় দিয়ে ছোট কাল থেকেই শিখিয়ে তুলে কিভাবে ডাকতে হয় কাকে কি নামে সম্মোধন করতে হয় কোন কাজটি ভালো কোনটি মন্দ করা যাবে না সেই শিক্ষা দিয়ে থাকে পক্ষান্তরে সমাজের একটি অশিক্ষিত পরিবার বা সেই পরিবারের সকল সদস্য অসামাজিক কাজে জরিত তাদের পরিবারে যখন কোনো ছোট শিশুর জন্ম হবে সেই শিশুর বেড়ে উঠা থেকে লক্ষ করবে তার পরিবারের সদস্যদের ঐসকল কর্মকান্ড তাদের ভাষা আচার-আচরণ সেগুলো দেখে যখন একটি শিশু বড় হবে তার মাঝেও কিন্তু তার পরিবারের সদস্যদের ঐসকল কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার পেষণা জাগবে।
সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমাজের মানুষ,সঙ্গী বা খেলার সাথীদের আচরণ সকল কিছু পরিবারের পরপরই আরও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।এখন প্রায়ই দেখা যায় খুব শিক্ষিত বা সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর সন্তানদের অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যাওয়া এখানে কিন্তু পরিবারের বাহিরে গিয়ে তাদের সন্তান কাদের সাথে চলছে সে বিষয় গুলো খুব লক্ষণীয়।
বাহিরে মানুষ গুলো যাদের সাথে চলাফেরা করে তাদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐসকল কর্মকান্ডে যুক্ত হয়ে পড়ে। আমাদের সামাজিকীকরণ কেবল মাত্র শিশুকাল থেকে পরিবারের মাধ্যমে শেষ হয় এমনটা নয় এর বিকাশ পুরো জীবন ব্যাপী সেই পুরো সময় জুড়ে যারা সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে সমাজে চলে তারাই সমাজের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে।
সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ একটি সুন্দর সমাজ গঠনের ভিত্তি। প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা যদি সুশিক্ষায় বড় হয় সমাজের জন্য কোনটি মঙ্গল কোনটি খারাপ তা শিখে সমাজের মঙ্গলের লক্ষে কাজ করে যায় তবে সে সমাজের সুন্দর পরিবর্তন ঘটে সকলের বসবাসের যোগ্য হয়ে গড়ে উঠে।
সামাজিকীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি রাজনীতির সাথে পরিচিত হয় এবং ব্যক্তির মধ্যে চেতনা ও মেধার বিকাশ ঘটে। ব্যক্তির মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয় এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার ধারণা জন্ম নেয়। দেশগঠন, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সকল প্রকার সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং রাজনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে শিশুদের সামাজিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
লেখকঃ গোবিন্দ মোদক, সভাপতি, সঞ্জীবন যুব সংস্থা, ময়মনসিংহ জেলা শাখা। শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।