মোঃমোস্তাফিজুর রহমান: ডিএনএ এর পুরো নাম deoxyriboneucleic acid. এটি মূলত অক্সিজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং হাইড্রোজেন এর দ্বারা গঠিত ম্যাক্রোমলিকিউল। এটি রাসায়নিক তথ্যের অনুবর্তী ফিতার মতো বস্তু। আমাদের দেহকোষ বা সেলের নিউক্লিয়াসে এর অবস্থান।
পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের ডিএনএ টেস্ট এর ফলাফল ভিন্ন ভিন্ন। তাই এই ফলাফলকে ব্যবহার করে যেকোনো শনাক্তকরণ কাজ খুব সহজ হতে পারে।
আজকাল নারী-শিশু হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশী। গুম এর ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া অপরাধীদের ছাড়াও আপনজন শনাক্তকরণ নিয়ে নানান সময়ে পড়তে হয় বড় ধরণের বিপাকে। আগুনে পোড়া লাশ, পানিতে পঁচে যাওয়া দেহ শনাক্তকরণ বেশ জটিল হয়ে পড়েছে। পিতৃত্ব, মাতৃত্ব নির্ধারণ এও দেখা যাচ্ছে জটিলতা।
যদিও উপরোক্ত অপরাধ ও শনাক্তকরণ এ ফরেনসিক বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে, তবে সন্দেহভাজন ব্যক্তির অভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জটিলতা আসছে ডিএনএ টেস্ট এর পরও। অনেক সময় এ বিভাগের কাজ এতটা দীর্ঘ হয় যে ভুক্তভোগী উপযুক্ত বিচার পাবার আশা ছেড়ে দেয়।
পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৩৯টি এবং হত্যা মামলা হয়েছে ৩৫১টি। শুধু মামলা হয় কিন্তু অপরাধের বিচার হয় না।তাই ডিএনএ টেস্ট প্রযুক্তি উপযুক্ত প্রয়োগ প্রয়োজন।
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্মনিবন্ধন এর মতো ডিএনএ টেস্টও হবে বাধ্যতামূলক। আর সেই টেস্টের রেজাল্ট কোড আকারে জমা থাকবে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অনলাইন সার্ভারে। আর স্মার্টকার্ড এর আইডি নং এর নিচে যুক্ত করা হবে টেস্ট এর ফলাফল। অনলাইনে যেমন আইডি নং সার্চ দিলেই ঐ ব্যক্তির সকল তথ্য চলে আসে ঠিক তেমনি ডিএনএ টেস্ট এর কোড দিয়ে সার্চ করলেও সকল তথ্য পাওয়া যাবে।
এক্ষেত্রে যে সুবিধাটা হবে তা হল, অপরধী বা যে ব্যক্তিকে শনাক্তকরণে প্রয়োজন তার দেহের ডিএনএ বহনকারী একটি নমুনায় (চুল,নখ,ত্বক,রক্ত,বীর্য ইত্যাদি) যথেষ্ট হবে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের খোঁজার প্রয়োজন পড়বে না। বাংলাদেশে এ পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ হলে যাবতীয় অপরাধ ও শনাক্তকরণ এর জটিলতা দূর করা সম্ভব বলে আশা করা যায়।
লেখক: মোঃমোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষার্থী, বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়