নিজস্ব প্রতিবেদক: উপমহাদেশের কিংবদন্তী প্রয়াত আবুল মনসুর আহমদ এর ১২২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর নিজ উপজেলা ত্রিশালে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। গত ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ইং, বৃহস্পতিবার, সমাজসেবামূলক সংগঠন সঞ্জীবন যুব সংস্থার উদ্যোগে ত্রিশাল উপজেলা পরিষদ কনফারেন্স রুমে উক্ত অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
ত্রিশাল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোস্তাফিজুর রহমান এর সভাপতিত্বে এবং সঞ্জীবন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পর্ষদের সভাপতি ফাহিম আহম্মেদ মন্ডলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিশাল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব আব্দুল মতিন সরকার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিশাল পৌরসভার সুযোগ্য মেয়র জনাব এবিএম আনিসুজ্জামান আনিস।
আলোচ্য বক্তাগণ আবুল মনসুর আহমদের স্মৃতি ধরে রেখে তাঁর কীর্তি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে নানা ধরণের বক্তব্য তুলে ধরেন এবং নানা ধরণের প্রস্তাব পেশ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব আব্দুল মতিন সরকার বলেন, “ত্রিশালের মাটি সবসময়ই গুণীজনদের উর্বর ভূমি হিসেবে সুপরিচিত। আবুল মনসুর আহমদ, আবুল কালাম শামছুদ্দীন সাহেবদেরকে মনে করতে পারলে আমাদের ত্রিশালের তরুণ প্রজন্ম আরও উৎসাহিত হবে বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণের জন্য! আমাদের উচিত প্রতি বছরই উনাদেরকে মনে করার মাধ্যমে আমাদের গৌরবময় অতীত ইতিহাসকে সবার সামনে তুলে ধরা এবং আমরা প্রশাসনিকভাবে পরবর্তীতে বড় করে উদ্যোগে নেবো, ইনশাআল্লাহ!”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ত্রিশাল পৌর মেয়র জনাব এবিএম আনিসুজ্জামান আনিস বলেন, “ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর স্মৃতি রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। কবির অত্যন্ত কাছের মানুষ, আমাদের ত্রিশালেরই গুণীজন জনাব আবুল মনসুর আহমদের স্মরণে আমরা এখনও কিছু স্থাপন করতে পারিনি, এটা আমাদের ত্রিশালবাসীর ব্যর্থতা। তাই সময় এসেছে আবুল মনসুর আহমদ সাহেবদের স্মৃতিকে তরতাজা করে আমাদের তরুণ প্রজন্মের মাঝে কিংবদন্তী হওয়ার বীজ বপণ করার। আমরা চাই আমাদের প্রতিটি সন্তানই জ্ঞানে, গুণে এবং মানে আবুল মনসুর আহমদ এর মত রুচি ধারণ করুন।”
সভাপতির বক্তব্যে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ত্রিশালে আবুল মনসুর আহমদ এর মতো এতো বিশাল মাপের একজন ব্যাক্তিত্ব জন্মলাভ করেছেন, বড় হয়েছেন, এটা ত্রিশালবাসির জন্য একটি বিরাট গর্বের বিষয়। কিন্তু আবুল মনসুর আহমদকে স্মরণ করার তেমন কোনো চিহ্নই ত্রিশালে দেখতে পাওয়া যায়না। আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ত্রিশালের তরুণ সমাজ তাঁকে মনে করছে, তাঁর স্মৃতিকে ধারণ করছে, এটা ইতিবাচক একটি পরিবর্তন। তাঁর জীবন থেকে অনুপ্রানিত হয়ে সবাই সমাজসেবা, সাহিত্য, সাংবাদিকতায় নিবেদিত প্রাণ হবেন, নিষ্ঠাবান হবেন, সেটাই আমরা কামনা করি। আর ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে যতোটুকু সম্ভব, সবকিছুই করার চেষ্টা আমরা করবো ইনশাআল্লাহ।” এসময় তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে আবুল মনসুর আহমদের হৃদ্যতা, শের-ই-বাংলা, সোহরাওয়ার্দী সাহেব, বঙ্গবন্ধুদের সঙ্গে আবুল মনসুরের সম্পর্ক, শওকত ওসমান রচিত দুই মুসাফির প্রবন্ধ সহ বেশ কিছু স্মৃতিচারণ মূলক বিষয়ের অবতারণা করেন।
এসময় এ ধরণের একটি উদ্যোগে নেয়ায় সঞ্জীবনের ভূয়সী প্রশংসা করেন বক্তাগণ।
প্রোগ্রামের এক পর্যায়ে সঞ্জীবন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পর্ষদ সভাপতি ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পৌর মেয়র মহোদয় বরাবর সঞ্জীবনের পক্ষ হতে আবুল মনসুর আহমদের স্মৃতি রক্ষার্থে ত্রিশালে একটি প্রধান সড়কের নাম ‘আবুল মনসুর আহমদ সড়ক’ করা এবং নামফলক স্থাপন, প্রশাসনিকভাবে কিংবদন্তীর জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন, যেকোনো একটি প্রশাসনিক ভবনের নামকরন আবুল মনসুর আহমদের নামে নামকরণ এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবুল মনসুর আহমদ হল স্থাপন সহ কতিপয় দাবি পেশ করেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় উক্ত এসব দাবির মধ্যে তাৎক্ষণিক একটি দাবি সমর্থন করে দ্রুততার সঙ্গে ত্রিশালের একটি সড়ক আবুল মনসুর আহমদ সড়ক করার ঘোষণা দেন এবং পৌর মেয়র মহোদয় পৌরসভা অডিটোরিয়ামের নামকরণ আবুল মনসুর আহমদ এর নামে করার ঘোষণা দেন। এতে হলরুম জুড়ে হর্ষধ্বনি এবং করতালির রোল পড়ে যায়।
অনুষ্ঠানের অন্যান্য আলোচকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ত্রিশাল উপজেলা প্রেসক্লাব এর সাবেক সভাপতি, সিএনএন বাংলা টিভির ময়মনসিংহ ব্যুরো চীফ জনাব খুরশিদুল আলম মুজিব, ত্রিশাল উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার ময়মনসিংহ প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান নোমান, ত্রিশাল উপজেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক ফখরুদ্দিন আহমেদ, ত্রিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হল সুপারভাইজার রিয়াজুল হক রাজু, ত্রিশাল নিউজ কাবের সভাপতি রফিকুল ইসলাম শামীম, ত্রিশাল অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন শামীম, উপজেলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান জীবন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রনি, উপজেলা প্রেসক্লাব সদস্য ফরহাদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফাহমিদ খলিল রাফিল সহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সঞ্জীবনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, সঞ্জীবন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পর্ষদের অন্যতম উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম মনির, সঞ্জীবন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজিবুল আনাম পরাগ, সঞ্জীবন, ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি গোবিন্দ মোদক, সঞ্জীবন, ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসনাত মোহাম্মদ ইউসুফ, সঞ্জীবন, ত্রিশাল উপজেলা শাখার সভাপতি রুবায়েত হোসাইন রুসাত, সঞ্জীবন, ত্রিশাল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোশফিকুর রহমান পুনম, গৌরীপুর উপজেলা শাখা সঞ্জীবনের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত, সঞ্জীবন, ত্রিশাল উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি শরীফুল ইসলাম শরীফ, মোকসেদুল মো’মিন সবুজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তন্ময়, সমাজকল্যাণ সম্পাদক রাফি, দপ্তর সম্পাদক রুহেনা, শিক্ষা সম্পাদক শাহরিয়ার সানি, সদস্য রিদিশা সহ প্রমুখ।
স্মরণ সভার আলোচনা পর্ব শেষে ত্রিশাল উপজেলা পরিষদ মসজিদের ইমাম আবুল মনসুর আহমদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন এবং দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
আবুল মনসুর আহমদ সম্পর্কে জানতে পড়ুন, আবুল মনসুর আহম্মেদ : বহুমুখী প্রতিভার এক বিস্ময় সম্ভার