Notice: Undefined index: custom_code in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/header.php on line 27
Dhaka 6:50 pm, Sunday, 1 October 2023

  • Notice: Trying to access array offset on value of type int in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/template-parts/page/header_design_two.php on line 68

ভারতের নিরাপত্তায় অন্যতম বড় হুমকি ‘মাদক সন্ত্রাস’

  • Reporter Name
  • Update Time : 11:59:49 am, Wednesday, 1 December 2021
  • 5 Time View

মেজর জেনারেল (অবঃ) হর্ষ কাকর: গত সপ্তাহে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের ঝাজ্জার কোটলি স্টেশনে প্রায় কোটি টাকা সমমূল্যের ৫২ কেজি হেরোইন বাজেয়াপ্ত করে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলটির পুলিশ। উদ্ধার অভিযান শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অঞ্চলটির ডিজিপি দিলবাগ সিং অভিযোগ করে বলেন, “পাকিস্তান পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ মাদক ভারতের অভ্যন্তরে পাঠাচ্ছে এবং আমাদের যুবকদের ভবিষ্যত হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।“

উল্লেখ্য, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানেই বারামুল্লা, পুঞ্চ, কুপওয়ারা এবং অন্যান্য সীমান্ত এলাকায় বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও পুলিশের অভিযোগের তীর পাকিস্তানের প্রতিই। এ প্রসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের ডিজিপি দিলবাগ সিং এর বক্তব্য, “পাকিস্তান একটি নোংরা খেলার পুনরাবৃত্তি করছে। পাঞ্জাবেও তারা একই কাজ করেছিলো। প্রথমে যুবকদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং পরবর্তীতে মাদক সরবরাহের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যত ধ্বংস করা।“

মনে পড়ে, পাঞ্জাবের তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং একবার অভিযোগ করে বলেছিলেন, “বেশিরভাগ মাদক, বিশেষ করে হেরোইন, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, দিল্লি এবং নেপালের মতো পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চল ব্যবহার করে আফগানিস্তান থেকে পাঞ্জাবে পাচার করা হয়।“ গোটা ব্যপারটিকে তিনি পাঞ্জাবের যুব সমাজকে দুর্বল করতে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছিলেন।

গত অক্টোবর মাসেও আমরা দেখেছিলাম, আসাম পুলিশ রাজ্যের নগাঁও জেলায় বিপুল পরিমাণ মাদকসহ একজন NSCN (IM) সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এমনও রিপোর্ট রয়েছে যে, বেশিরভাগ উত্তর-পূর্ব বিদ্রোহ বা নকশাল আন্দোলন মাদক পাচারের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে।

এসব মাদক সাধারণত মিয়ানমার হয়ে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে প্রবেশ করে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি বলেছেন, “গত দুই মাসে প্রায় ১৬৩ কোটি টাকা সমমূল্যের মাদক ধরা পড়েছে, যা বাৎসরিক হিসেবে প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়ায়।“ তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, একটি সূত্রের দাবি, শুধুমাত্র আসাম রাজ্যেই বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি রূপী সমমূল্যের মাদক লেনদেন হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের দিকে আঙুল তোলাটা নেহায়েত অপ্রাসঙ্গিক নয়। তাঁদের যাবতীয় কর্মকান্ডের প্রধান আয়ের উৎস মাদক বিক্রির মাধ্যমেই অর্জিত হয় বলে ইতোপূর্বে গোটা বিশ্ব বিভিন্ন রিপোর্টে দেখেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনেও দেখা যায়, তালেবানরা আফিম চাষীদের উপর ১০% চাষ কর বসিয়েছে, যার পরিমাণ ছিল ১০০-৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি তালেবানের মোট আয়ের প্রায় ৬০%।

ইতোপূর্বে ন্যাটোর একটি পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, তালেবান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবৈধ মাদক ব্যবসা, অবৈধ খনি এবং রপ্তানি থেকে বর্ধিত মুনাফার মাধ্যমে তাদের আর্থিক ক্ষমতা প্রসারিত করেছে। গত ২০২০ সালেই মাদক ব্যবসা থেকে তালেবান প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছে বলে ন্যাটোর প্রতিবেদনে বলা হয়।

ভারত দুটি বৃহত্তম আফিম উৎপাদন বেল্ট, যথাক্রমে, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট এবং গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের মধ্যে অবস্থিত। গোল্ডেন ক্রিসেন্ট আফগানিস্তান, ইরান এবং পাকিস্তানের অবৈধ আফিম উৎপাদন এলাকা নিয়ে গঠিত, যেখানে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল থাইল্যান্ড, মায়ানমার এবং লাওসের সীমানা এলাকা নিয়ে গঠিত।

এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে আইএসআই মাদক ব্যবসার মাধ্যমে তার বেশিরভাগ অর্থ উপার্জন করে। নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর রিপোর্ট অনুসারে, ভারত সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে যে পরিমাণ ব্যয় করে, তাঁর প্রায় ২৫ শতাংশই বরাদ্দ থাকে মাদক নির্মূলে।

গত ১৪ অক্টোবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীরের ৪০% যুবক কোন না কোন মাদকাসক্তিতে ভোগে। এই সংখ্যা ২০০৮ সালে ৫% এর নিচে ছিল। মাদকাসক্তির অর্থায়নের দরুণ অনেকেই সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও একই অবস্থা। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং বিহারেও বাম চরমপন্থীরা তাদের কার্যকলাপে অর্থায়নের জন্য মাদকের চাষ করছে।

২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী এক বার্তায় বলেছিলেন, “যখন আমাদের প্রতিবেশীরা সন্ত্রাসী এবং অস্ত্র পাঠিয়েও তাঁদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পারেনি, তখন তাঁরা আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে মাদক পাচারের ষড়যন্ত্র করেছে।“

গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনা দ্রুত বেড়েছে। সম্প্রতি গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দরে ৩০০০ কেজি হেরোইন আটক করা হয়েছে, যা রাজ্যটিতে এক নতুন রেকর্ড তৈরী করেছে। এর আগে ২০১৭ সালেও প্রায় ১৫০০ কেজি হেরোইন আটক করা হয় রাজ্যটি থেকে।

চলতি বছর এপ্রিলেও জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এক অভিযানে প্রায় ৯ কেজি হেরোইন উদ্ধার করে যার বাজার মূল্য ধরা হয়েছিল প্রায় ৫০-৬০ কোটি রুপী। এসব মাদক ও মাদকলব্ধ আয়ই জঙ্গীবাদ তথা সন্ত্রাসবাদে ব্যয় করার পরিকল্পনা ছিলো।

জার্মানি ভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ সিগফ্রাইড উলফ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, “আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা পাকিস্তানকে একটি ‘নারকো-রাষ্ট্র’ হিসাবে বর্ণনা করতে শুরু করেছেন – যা আইএসআই এবং সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত অবৈধ কার্যকলাপের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার উপর ভিত্তি করে তৈরী। মাদক পাচারকারী, সন্ত্রাসী সংগঠন এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সম্মিলিত কার্যকলাপ ভারতের রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বিপদ তৈরি করেছে।”

এ কথা তাই হলফ করেই বলা যায়, ভারতীয় প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং মাদকের অপব্যবহারের মাধ্যমে দুর্বল করা। তাই সন্ত্রাস ও মাদক পাচারকে সমান শক্তিতে মোকাবেলা করতে হবে।

তাই মাদকের প্রলোভন থেকে যুবকদের মুক্ত করার জন্য রাজ্যগুলোতে মাদকাসক্তি মুক্ত কেন্দ্র স্থাপন, যুবকদের শিক্ষিত ও সচেতন করতে হবে। পরিশেষে, কেন্দ্রে একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নীতি সহ অবৈধ মাদক পাচার পর্যবেক্ষণের জন্য নিরীক্ষক একটি সংস্থা থাকা তৈরী করতে হবে। মাদক-সন্ত্রাস মোকাবেলায় সরকারের সিরিয়াস হওয়ার সময় এসেছে।

লেখক: ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল, কৌশলগত কূটনীতি এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। (প্রকাশিত লেখনী সম্পূর্ণই তাঁর নিজস্ব অভিমত)

ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক থেকে সংকলিত

Tag :

Notice: Trying to access array offset on value of type int in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/template-parts/common/single_two.php on line 177

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

Notice: Undefined index: footer_custom_code in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/footer.php on line 87

ভারতের নিরাপত্তায় অন্যতম বড় হুমকি ‘মাদক সন্ত্রাস’

Update Time : 11:59:49 am, Wednesday, 1 December 2021

মেজর জেনারেল (অবঃ) হর্ষ কাকর: গত সপ্তাহে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের ঝাজ্জার কোটলি স্টেশনে প্রায় কোটি টাকা সমমূল্যের ৫২ কেজি হেরোইন বাজেয়াপ্ত করে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলটির পুলিশ। উদ্ধার অভিযান শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অঞ্চলটির ডিজিপি দিলবাগ সিং অভিযোগ করে বলেন, “পাকিস্তান পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ মাদক ভারতের অভ্যন্তরে পাঠাচ্ছে এবং আমাদের যুবকদের ভবিষ্যত হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।“

উল্লেখ্য, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানেই বারামুল্লা, পুঞ্চ, কুপওয়ারা এবং অন্যান্য সীমান্ত এলাকায় বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও পুলিশের অভিযোগের তীর পাকিস্তানের প্রতিই। এ প্রসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের ডিজিপি দিলবাগ সিং এর বক্তব্য, “পাকিস্তান একটি নোংরা খেলার পুনরাবৃত্তি করছে। পাঞ্জাবেও তারা একই কাজ করেছিলো। প্রথমে যুবকদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং পরবর্তীতে মাদক সরবরাহের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যত ধ্বংস করা।“

মনে পড়ে, পাঞ্জাবের তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং একবার অভিযোগ করে বলেছিলেন, “বেশিরভাগ মাদক, বিশেষ করে হেরোইন, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, দিল্লি এবং নেপালের মতো পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চল ব্যবহার করে আফগানিস্তান থেকে পাঞ্জাবে পাচার করা হয়।“ গোটা ব্যপারটিকে তিনি পাঞ্জাবের যুব সমাজকে দুর্বল করতে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছিলেন।

গত অক্টোবর মাসেও আমরা দেখেছিলাম, আসাম পুলিশ রাজ্যের নগাঁও জেলায় বিপুল পরিমাণ মাদকসহ একজন NSCN (IM) সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এমনও রিপোর্ট রয়েছে যে, বেশিরভাগ উত্তর-পূর্ব বিদ্রোহ বা নকশাল আন্দোলন মাদক পাচারের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে।

এসব মাদক সাধারণত মিয়ানমার হয়ে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে প্রবেশ করে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি বলেছেন, “গত দুই মাসে প্রায় ১৬৩ কোটি টাকা সমমূল্যের মাদক ধরা পড়েছে, যা বাৎসরিক হিসেবে প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়ায়।“ তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, একটি সূত্রের দাবি, শুধুমাত্র আসাম রাজ্যেই বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি রূপী সমমূল্যের মাদক লেনদেন হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের দিকে আঙুল তোলাটা নেহায়েত অপ্রাসঙ্গিক নয়। তাঁদের যাবতীয় কর্মকান্ডের প্রধান আয়ের উৎস মাদক বিক্রির মাধ্যমেই অর্জিত হয় বলে ইতোপূর্বে গোটা বিশ্ব বিভিন্ন রিপোর্টে দেখেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনেও দেখা যায়, তালেবানরা আফিম চাষীদের উপর ১০% চাষ কর বসিয়েছে, যার পরিমাণ ছিল ১০০-৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি তালেবানের মোট আয়ের প্রায় ৬০%।

ইতোপূর্বে ন্যাটোর একটি পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, তালেবান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবৈধ মাদক ব্যবসা, অবৈধ খনি এবং রপ্তানি থেকে বর্ধিত মুনাফার মাধ্যমে তাদের আর্থিক ক্ষমতা প্রসারিত করেছে। গত ২০২০ সালেই মাদক ব্যবসা থেকে তালেবান প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছে বলে ন্যাটোর প্রতিবেদনে বলা হয়।

ভারত দুটি বৃহত্তম আফিম উৎপাদন বেল্ট, যথাক্রমে, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট এবং গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের মধ্যে অবস্থিত। গোল্ডেন ক্রিসেন্ট আফগানিস্তান, ইরান এবং পাকিস্তানের অবৈধ আফিম উৎপাদন এলাকা নিয়ে গঠিত, যেখানে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল থাইল্যান্ড, মায়ানমার এবং লাওসের সীমানা এলাকা নিয়ে গঠিত।

এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে আইএসআই মাদক ব্যবসার মাধ্যমে তার বেশিরভাগ অর্থ উপার্জন করে। নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর রিপোর্ট অনুসারে, ভারত সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে যে পরিমাণ ব্যয় করে, তাঁর প্রায় ২৫ শতাংশই বরাদ্দ থাকে মাদক নির্মূলে।

গত ১৪ অক্টোবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীরের ৪০% যুবক কোন না কোন মাদকাসক্তিতে ভোগে। এই সংখ্যা ২০০৮ সালে ৫% এর নিচে ছিল। মাদকাসক্তির অর্থায়নের দরুণ অনেকেই সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও একই অবস্থা। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং বিহারেও বাম চরমপন্থীরা তাদের কার্যকলাপে অর্থায়নের জন্য মাদকের চাষ করছে।

২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী এক বার্তায় বলেছিলেন, “যখন আমাদের প্রতিবেশীরা সন্ত্রাসী এবং অস্ত্র পাঠিয়েও তাঁদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পারেনি, তখন তাঁরা আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে মাদক পাচারের ষড়যন্ত্র করেছে।“

গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনা দ্রুত বেড়েছে। সম্প্রতি গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দরে ৩০০০ কেজি হেরোইন আটক করা হয়েছে, যা রাজ্যটিতে এক নতুন রেকর্ড তৈরী করেছে। এর আগে ২০১৭ সালেও প্রায় ১৫০০ কেজি হেরোইন আটক করা হয় রাজ্যটি থেকে।

চলতি বছর এপ্রিলেও জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এক অভিযানে প্রায় ৯ কেজি হেরোইন উদ্ধার করে যার বাজার মূল্য ধরা হয়েছিল প্রায় ৫০-৬০ কোটি রুপী। এসব মাদক ও মাদকলব্ধ আয়ই জঙ্গীবাদ তথা সন্ত্রাসবাদে ব্যয় করার পরিকল্পনা ছিলো।

জার্মানি ভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ সিগফ্রাইড উলফ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, “আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা পাকিস্তানকে একটি ‘নারকো-রাষ্ট্র’ হিসাবে বর্ণনা করতে শুরু করেছেন – যা আইএসআই এবং সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত অবৈধ কার্যকলাপের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার উপর ভিত্তি করে তৈরী। মাদক পাচারকারী, সন্ত্রাসী সংগঠন এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সম্মিলিত কার্যকলাপ ভারতের রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বিপদ তৈরি করেছে।”

এ কথা তাই হলফ করেই বলা যায়, ভারতীয় প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং মাদকের অপব্যবহারের মাধ্যমে দুর্বল করা। তাই সন্ত্রাস ও মাদক পাচারকে সমান শক্তিতে মোকাবেলা করতে হবে।

তাই মাদকের প্রলোভন থেকে যুবকদের মুক্ত করার জন্য রাজ্যগুলোতে মাদকাসক্তি মুক্ত কেন্দ্র স্থাপন, যুবকদের শিক্ষিত ও সচেতন করতে হবে। পরিশেষে, কেন্দ্রে একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নীতি সহ অবৈধ মাদক পাচার পর্যবেক্ষণের জন্য নিরীক্ষক একটি সংস্থা থাকা তৈরী করতে হবে। মাদক-সন্ত্রাস মোকাবেলায় সরকারের সিরিয়াস হওয়ার সময় এসেছে।

লেখক: ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল, কৌশলগত কূটনীতি এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। (প্রকাশিত লেখনী সম্পূর্ণই তাঁর নিজস্ব অভিমত)

ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক থেকে সংকলিত